হেরেই গেল বাংলাদেশ, আরব আমিরাতের ইতিহাস

ছবি: এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ড

নাটকীয় লড়াইয়ে শেষ ওভারে জয়ের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের দরকার পড়ল ১২ রান। একটি উইকেট হারালেও এক বল হাতে রেখে সেই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলল দলটি। বড় পুঁজি নিয়েও ভীষণ এলোমেলো বোলিংয়ের কারণে শেষমেশ তাই হেরেই গেল বাংলাদেশ।

সোমবার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ২ উইকেটে পরাস্ত হয়েছে টাইগাররা। টস হেরে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ২০৫ রান তোলে তারা। জবাবে ১৯.৫ ওভারে ৮ উইকেটে ২০৬ রান করে জিতে ইতিহাস গড়েছে স্বাগতিকরা।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটাই আরব আমিরাতের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। আগের কীর্তিটি ছিল গত বছরের এপ্রিলে। কুয়েতের করা ১৭৮ রানের পেছনে ছুটে ৩ উইকেটে জিতেছিল তারা। শুধু তাই নয়, পাঁচবারের সাক্ষাতে এবারই প্রথম এই সংস্করণে বাংলাদেশকে হারাতে পেরেছে দলটি।

আমিরাতের জয়ের মূল নায়ক অধিনায়ক মুহাম্মদ ওয়াসিম। ওপেনিংয়ে নেমে ৮২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি। প্রায় দুইশ স্ট্রাইক রেটে ৪২ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ৯ চার ও ৫ ছক্কা। তার বিদায়ের পর ছোট ছোট কয়েকটি কার্যকর ইনিংসে জয়ের বন্দরে নোঙর করে স্বাগতিক দল।

ইনিংসের দ্বিতীয় ভাগে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ফেলে একদম শেষে গিয়ে। এক পর্যায়ে, সমীকরণ ছিল ৮ বলে ২৩ রানের। কিন্তু শরিফুল ইসলাম ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে হায়দার আলীর ব্যাটে হজম করেন ছক্কা। পরের বলে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রানআউটের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। ওভারথ্রোতে চার হওয়াসহ আসে মোট ৫ রান।

শেষ ওভার তানজিম হাসান সাকিব শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। পরের বলে হায়দার নেন সিঙ্গেল। এরপর ধ্রুব পরাশর হাঁকিয়ে দেন ছক্কা। সমীকরণ ৪ বলে ৪ রানে নেমে গিয়ে হেলে পড়ে আমিরাতের দিকে। তৃতীয় ডেলিভারিতে পরাশরকে বোল্ড করে ফের আশা জাগান তানজিম। পরের বলে মতিউল্লাহ খান নেন সিঙ্গেল। কিন্তু ডানহাতি পেসার তানজিম বিস্ময়করভাবে এরপর হাই ফুলটস দিলে নো ডাকেন আম্পায়ার।

২ বলে ২ রানের সমীকরণ পঞ্চম বলেই মিলিয়ে ফেলে আমিরাত। হায়দার ডাবল নিয়ে উল্লাসে মাতান দলকে। যদিও ফিল্ডার তাওহিদ হৃদয় ঠিক সময়ে উইকেটরক্ষক জাকের আলী অনিকের কাছে থ্রো করতে পারলে রানআউটের সুযোগ ছিল।

তিন ম্যাচের সিরিজে ফিরেছে ১-১ সমতা। আগের ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ২৭ রানে। আগামী বুধবার একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।

রান তাড়ায় ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারাতে পার আরব আমিরাত। তবে বাঁহাতি পেসার শরিফুলের বলে স্লিপে মুহাম্মদ জোহাইবের ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। উল্টো হয়ে যায় চার।

শুরুর এই সুযোগের পর লম্বা সময় উইকেট নেওয়ার আর তেমন কোনো সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি। বরং তাদের এলোমেলো বোলিংয়ের পুরো ফায়দা তুলে দ্রুত রান আনতে থাকেন ওয়াসিম। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন জোহাইব। ফলে পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না খুইয়ে ৬৮ রান তুলে ফেলে স্বাগতিকরা।

চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে এগোতে থাকা ওয়াসিম মাত্র ২৫ বলে পূরণ করেন ফিফটি। আগের ম্যাচেও হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ৭১ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি তার ২২তম ফিফটি। পাশাপাশি সেঞ্চুরি আছে একটি।

১০ ওভার শেষে আরব আমিরাতের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ১০৭ রান। অর্থাৎ বড় লক্ষ্যের পেছনে ছুটে খুব ভালো অবস্থানে ছিল দলটি। অন্যদিকে, বাংলাদেশের কপালে চিন্তার ভাঁজ ক্রমেই গাঢ় হচ্ছিল। তবে এরপর দেওয়া পানি পানের বিরতি তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে।

একাদশ ওভারের প্রথম বলে জুটি ভেঙে দেন তানভির ইসলাম। প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ২২ রান দেওয়া বাঁহাতি স্পিনার দলকে দেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু। বড় শটের চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জোহাইব। ৩৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রান করেন তিনি।

৬৩ বলে ১০৭ রানের উদ্বোধনী জুটির ইতির পর দ্বিতীয় সাফল্য দ্রুতই মিলে যায় বাংলাদেশের। পরের ওভারের প্রথম বলে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ফেরান রাহুল চোপড়াকে। পুল করার চেষ্টায় ফাইন লেগে নাহিদ রানার তালুবন্দি হন তিনি।

৩ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ২২ বলে ৩৮ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি পায় আরব আমিরাত। ওয়াসিমের পাশাপাশি উত্তাল হয়ে ওঠে আসিফ খানের ব্যাট। অবশেষে ১৫তম ওভারে প্রতিপক্ষের অধিনায়ককে ফেরাতে পারে বাংলাদেশ। শরিফুলের স্লোয়ারে উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ক্যেচ নেন জাকের। মাঝে হৃদয় ক্যাচ ছাড়ায় ব্যক্তিগত ৬৪ রানে জীবন পেয়েছিলেন ওয়াসিম। পরে আরও ১৮ রান যোগ করেন তিনি।

এই পর্যায়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। ২৯ রানের মধ্যে তারা তুলে নেয় ৫ উইকেট। ২ উইকেটে ১৪৮ রান থেকে ৭ উইকেটে ১৭৭ রানের দলে পরিণত হয় আরব আমিরাত। আসিফ ১২ বলে ১৯, আলিশান শরাফু ৯ বলে ১৩, সগির খান ৩ বলে ৮, আর্যাংশ শর্মা ৪ বলে ৭ রানে আউট হন।

তবে নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত রাখতে পারেনি লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দল। অষ্টম উইকেটে ৮ বলে ২৫ রানের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন পরাশর ও হায়দার। পরাশর ৭ বলে ১১ রানে আউট হলেও হায়দার দলকে জিতিয়ে অপরাজিত থাকেন ৬ বলে ১৫ রানে।

বাংলাদেশের বোলিং ছিল ভীষণ হতাশা জাগানিয়া। বিশেষ করে, তানজিম ও অভিষেক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা গতিময় পেসার নাহিদ ছিলেন বেজায় খরুচে। নাহিদ ২ উইকেট নিলেও দেন ৫০ রান। ১ উইকেট নেওয়া তানজিমের ৩.৫ ওভারে ওঠে ৫৫ রান। শরিফুল ২ উইকেট পান ৩৪ রান খরচায়। দুই স্পিনারের মধ্যে রিশাদ আঁটসাঁট থেকে ২৮ রানে ২ উইকেট নিলেও তানভির ৩৭ রান দিয়ে ফেলেন ১ উইকেট পেতে।

বাংলাদেশের ইনিংসের রিপোর্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Comments

The Daily Star  | English

This time our fight is against corruption

From its mammoth rally in Dhaka yesterday, the Jamaat-e-Islami vowed to wage war on corruption if it gets the people’s mandate in the next general election.

46m ago