৪০০ করার সুযোগ পেলে হাতছাড়া করতেন না গেইল

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের কিংবদন্তি ইনিংস আজও এক অনন্য মাইলফলক। সেই রেকর্ড ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়ক ভিয়ান মুল্ডারের সামনে। কিন্তু ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকেও ইনিংস ঘোষণা করে সেই সুযোগ বিসর্জন নিজেই। তার এমন সিদ্ধান্তে ক্রিকেটবিশ্বে চলছে তুমুল আলোচনা ও বিতর্ক।

বুলাওয়েওতে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চ বিরতিতে মুল্ডার ছিলেন ৩৬৭ রানে অপরাজিত। ৩৩৪ বলের অনবদ্য ইনিংসে ৪৯টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন তিনি। মাঠে তখন সবকিছুই ছিল মুল্ডারের অনুকূলে সময়, উইকেট এবং ফর্মও। কিন্তু বিরতির পর ইনিংস ঘোষণা করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে মাত্র ৩৩ রান দূরত্বে থেকেও অধরা থেকে যায় ইতিহাস।

এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ও লারার সতীর্থ ক্রিস গেইল। টকস্পোর্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গেইল বলেন, "যদি আমার ৪০০ করার সুযোগ থাকত, আমি সেটা নিতাম। এটা তো ঘনঘন আসে না। কখন আবার ট্রিপল সেঞ্চুরি পাবেন, কেউ জানে না। যখনই এমন সুযোগ আসে, পুরোপুরি কাজে লাগাতে হয়।"

গেইলের মতে, মুল্ডার ইতিহাস গড়ার মুহূর্তে 'ঘাবড়ে গিয়েছিলেন'। তিনি বলেন, "সে খুব উদার ছিল, বলেছে সে চায় রেকর্ডটা লারারই থাকুক। কিন্তু হয়তো সে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। ভাই, আপনি যখন ৩৬৭-এ আছেন, তখন তো রেকর্ডের দিকে এগোনোই উচিত। যদি আপনি কিংবদন্তি হতে চান, তাহলে তো রেকর্ডের দিকেই তাকাতে হবে। রেকর্ডই তো কিংবদন্তিকে তুলে আনে।"

মুল্ডার অবশ্য জানিয়েছেন, ব্রায়ান লারার প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই তিনি রেকর্ড না ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। তার ভাষায়, লারার ৪০০ রানের ইনিংসের মাহাত্ম্য অক্ষুণ্ণ রাখাই ছিল তার প্রাধান্য। তবে ক্রিকেটবিশ্বের অনেকেই মনে করছেন, এই শ্রদ্ধার আবরণে তিনি একটি অনন্য সুযোগ হারিয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসও নিজের মত দিয়েছেন। লর্ডসে তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় এমন পরিস্থিতিতে তিনি কী করতেন, জবাবে স্টোকস বলেন, "যদি এমন কিছু করতে হয়, তাহলে আপনি নিজে করবেন, অধিনায়ক হিসেবে কাউকে থামিয়ে নয়। আমি শুনেছি, সে বলেছে রেকর্ডটা লারারই থাকা উচিত। কিন্তু সে আর হয়তো কখনো এই সুযোগ পাবে না। হ্যাঁ, দল জিতেছে এটাই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এমন দিন ঐতিহাসিক হয়ে উঠতে পারত।"

টেস্ট ক্যারিয়ারের এটি ছিল মুল্ডারের ২১তম ম্যাচ। প্রথম দিনেই ২৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। সে সময়েই ধারণা করা হচ্ছিল, লারার রেকর্ডে এবার আঘাত আসছে। কিন্তু ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত সব আশাকে থামিয়ে দেয়।

ক্রিস গেইলের শেষ মন্তব্য যেন গোটা বিতর্কের সারসংক্ষেপ, "এটা কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বলেই ছোট করে দেখা যাবে না। এটা টেস্ট ক্রিকেট। প্রতিপক্ষ যেই হোক, এক রান করাও কঠিন হতে পারে। তাই টেস্ট সেঞ্চুরি, ডাবল, ট্রিপল কিংবা ৪০০ সবই সম্মানের। আর এই সুযোগ সে হারিয়েছে, সরাসরি বলি, সে ঘাবড়ে গিয়েছিল এবং বড় এক ভুল করেছে।"

মুল্ডার হয়তো নিজের বিবেচনায় এক মহানুভব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসে যে তিনি একটি চিরস্মরণীয় অধ্যায় লেখার হাতছানি উপেক্ষা করেছেন। তা এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে কেবল হতাশাই ছড়াচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

1h ago