উৎসবের মঞ্চে এ কেমন আত্মসমর্পণ!

সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী দর্শকরা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে দেখছিলেন বড় আশা। আবুধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরপুর ছিলো লাল সবুজে। তাদের সেই চড়া আশায় লেগেছ বড় চোট। শ্রীলঙ্কাকে হারানো দূরের কথা, এই সমর্থকদের ঘরে ফিরতে হয়েছে নিজেদের দলের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে।
শনিবার এশিয়া কাপের গ্রুপ-বি'র লড়াইয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার কাছে ম্যাচের কোন ধাপেই পাত্তা পায়নি। ১৩৯ রান করে হেরেছে ৬ উইকেটে, খেলা শেষ হয়ে গেছে ৩২ বল আগে। সুপার ফোরের স্বপ্ন এখন ঝুলে গেছে সমীকরণের মাঝে।
ম্যাচের প্রথম দুই ওভারেই তৈরি হয়ে যায় ফলের আভাস, এরপর আর সেই আভাস দূর করতে পারেননি লিটন দাসরা।
প্রথম দুই ওভারে স্কোরবোর্ডে কোন রান নেই, অথচ উইকেট নেই দুটি। বাংলাদেশের শরীরী ভাষাতে সেখানেই যেন নেতিয়ে পড়ার ছবি। প্রথম পাঁচ ব্যাটেরের মধ্যে এরপর অধিনায়ক লিটন গেলেন কেবল দুই অঙ্কে। তিনি যখন আউট হন তখন ৫৩ রানে নেই ৫ উইকেট। জাকের আলি অনিক আর শামীম হোসেন পাটোয়ারির সৌজন্যে ১৩৯ পর্যন্ত যেতে পারা মনে হচ্ছিল বেশ স্বস্তির।

উইকেটে বল কিছুটা গ্রিপ করছে, সিমে হিট করলে মুভমেন্ট মিলছে। মনে হচ্ছিলো নিশ্চয়ই লড়াই একটা হবে। কোথায় কী! বোলাররা ব্যাটারদের মতই করলেন হতাশ। কোন বারুদ দেখা গেল না তাদের ভেতর।
বাংলাদেশের ব্যাটারদের মানসিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। তারা কোন অ্যাপ্রোচে খেলতে নেমেছিলেন এই প্রশ্ন তো আরও জরুরি। নুয়ান তুশারা প্রথম পাঁচ বল ডট দিয়ে যেভাবে তানজিদ হাসান তামিমের স্টাম্প উড়ালেন, এই দৃশ্য দেখেই নেন পারভেজ হোসেন ইমন স্নায়ুচাপে পড়ে গিয়েছিলেন। না হলে দুশমন্ত চামিরার বলে যেভাবে ক্যাচ দিয়েছে, একজন ওপেনারের জন্য তা খুব সুন্দর দৃশ্য নয়।
তাওহিদ হৃদয় গত কয়েক ম্যাচে যেভাবে ধুঁকছিলেন তাকে এশিয়া কাপে একাদশে খেলানোর মানে বোঝা কঠিন। হংকংয়ের মতন দলের বিপক্ষে রান তাড়ায় তিনে ছিলেন কুঁকড়ে। সেই হৃদয় কঠিন পরিস্থিতিতে নেমে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেও সরাসরি থ্রোয়ের হাত থেকে বাঁচেননি।
লিটন ছন্দের আভাস দিয়ে খেলছিলেন, আশা বাঁচিয়ে রাখছিলেন তিনিই। তবে ভানিন্দু হাসারাঙ্গার প্রশ্ন আগেও কমন পড়েনি বাংলাদেশের, এবারও পড়ল না। লিটন রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড। তার আগে শেখ মেহেদী হাসান পাঁচে নেমে হাসারাঙ্গার গুগলি বুঝতে অক্ষম। মেহেদী পাঁচ নম্বরে খেলার মতন ব্যাটার বলে কোনভাবেই মনে হয়নি।
জাকের আর শামীম মিটিয়েছেন পরিস্থিতির দাবি, তবে খুব আগ্রাসী তারা হতে পারেননি। হয়ত পরের দিকে আর তেমন ব্যাটার নেই বলে।
১৩৯ রান নিয়ে ম্যাচ জিততে হলে বোলারদের করতে হতো বিশেষ কিছু। তার ধারেকাছেও ছিলেন না। মোস্তাফিজুর রহমান দ্বিতীয় ওভারে কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়েছেন বটে, তবে বাকিটা সময় যেন বাংলাদেশ ম্যাচে ছিলো না কোথাও। বাংলাদেশের কাটার মাস্টারকে এরপর তুলোধুনো করেছেন লঙ্কান ব্যাটাররা। সুবিধা করতে পারেননি তাসকিন আহমেদের বদলে খেলতে নামা শরিফুল ইসলাম। বল ফেলার জায়গা পাননি দুই স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান আর রিশাদ হোসেন।
লঙ্কানরা রান উঠাচ্ছিল ওভার প্রতি দশের উপরে। ১০ ওভারেই তাদের স্কোরবোর্ডে ১ উইকেটে ১০৭। বাকি কটা রান তুলতে তারা তাড়াহুড়োয় আরও ৩ উইকেট হারায়। তবে সেসব ম্যাচের প্রেক্ষিতে আলোচ্য কিছু না।
Comments