‘মুশফিক কথার মাধ্যমে নয়, কাজের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেয়’
মুশফিকুর রহিম যখন তার ১০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামছে, তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট শুধু একটি মাইলফলকই উদযাপন করছে না, বরং এমন একজন মানুষকে উদযাপন করছে যার প্রভাব আমাদের ক্রিকেটে পরিসংখ্যানের অনেক ঊর্ধ্বে। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুটি ভিন্ন সময়ে মুশফিককে কোচিং করানোর সুযোগ পেয়েছি -- প্রথমবার ২০১৪ থেকে ২০১৭ এবং আবার ২০২৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত -- এবং যা অপরিবর্তিত থেকেছে তা হলো তার অটল পেশাদারিত্ব, প্রতিশ্রুতি এবং নেতৃত্ব।
আমি যত ক্রিকেটারের সঙ্গে কাজ করেছি, মুশফিক তাদের মধ্যে অন্যতম যত্নবান এবং খুঁতখুঁতে। তার প্রস্তুতি বিশ্বমানের -- উদ্দেশ্যমূলক, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং প্রতিদিন ধারাবাহিক। আমরা মিরপুরে দেশের মাটিতে খেলি বা বিদেশের কন্ডিশনে, মুশফিক কখনও তার মানের সঙ্গে আপস করতে দেয়নি। সে আগেভাগে আসে, কন্ডিশন পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রতিটি সেশনের যেন একটি উদ্দেশ্য থাকে তা নিশ্চিত করে। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য, তাকে পর্যবেক্ষণ করাই একজন সত্যিকারের পেশাদার হওয়ার অর্থ কী, তার একটি শিক্ষা।
তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং মানসিক দৃঢ়তার বাইরে, যা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হলো তার চরিত্র। আমি বিশ্বজুড়ে যত দলকে কোচিং করিয়েছি, মুশফিক তাদের মধ্যে অন্যতম বিশ্বস্ত এবং খাঁটি নেতাদের একজন। সে দলের সংস্কৃতি নির্ধারণ করে দেয়। সে কথার মাধ্যমে নয়, কাজের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেয়। যখন সে কথা বলে, খেলোয়াড়রা শোনে -- সিনিয়রিটির কারণে নয়, কারণ তারা জানে তার উদ্দেশ্য সবসময় দলের জন্য।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হিসেবে আমার দুই মেয়াদে, আমাদের সাফল্যের একটি বড় অংশ তার প্রভাবের কারণে এসেছে। কঠোর পরিশ্রম করার ইচ্ছা, কঠিন মুহূর্তে দায়িত্ব নেওয়া এবং পর্দার আড়ালে তরুণ খেলোয়াড়দের পরামর্শ দেওয়া—এইসব আমার কাজকে সহজ করে দিয়েছে।
১০০টি টেস্ট ম্যাচ খেলা যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য একটি বিশাল অর্জন, কিন্তু যে ব্যক্তি এত গর্ব এবং নম্রতার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তার জন্য এটি বিশেষভাবে অর্থবহ। মুশফিক একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা মর্যাদা, শৃঙ্খলা এবং অটল নিষ্ঠার সঙ্গে বহন করেছেন। তার এই যাত্রা শুধু প্রতিভার প্রমাণ নয় -- এটি অক্লান্ত পরিশ্রম এবং খেলার প্রতি গভীর ভালোবাসার গল্প।
তার ক্যারিয়ারের এই ঐতিহাসিক ক্ষণে, আমি তাকে কেবল তার প্রাক্তন কোচ হিসেবেই অভিনন্দন জানাই না, বরং এমন একজন ব্যক্তি হিসেবেও জানাই যে তার পেশাদারিত্ব এবং ব্যক্তি সত্তার প্রতি আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তার কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট আরও সমৃদ্ধ হয়েছে, এবং তার রেখে যাওয়া কীর্তি আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
অভিনন্দন, মুশফিক। তুমি এই মুহূর্তের প্রতিটি অংশের যোগ্য।


Comments