বহুজাতিক আসরে ব্যর্থতার পুরনো চক্র
২০২৫ সালটা ছিলো টি-টোয়েন্টির। বছর জুড়ে রেকর্ড সংখ্যক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এক বছরে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডও হয়েছে এই বছর, আবার হারের পাল্লাও বেশ ভারি। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে সাফল্যের ভিড়ে বহুজাতিক আসরে ব্যর্থতার পুরনো চক্র আক্ষেপের পাশাপাশি তৈরি করেছে সংশয়। ওয়ানডেতে তলানিতে যাওয়ার ধারা আটকানো যায়নি, শঙ্কা ভর করছে আসন্ন বছরে। টেস্টে ম্যাচের সংখ্যা ছিলো কম, তারমধ্যে পিছিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেও শতভাগ সাফল্য রাখা যায়নি।
আলোর নিচে অন্ধকার
২০২৫ সালে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এইটুকুতে তৃপ্ত হয়ে গেলে জেনে নেওয়া দরকার উলটো দিক, এইই সংস্করণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারও এই বছরে (সবচেয়ে বেশি ১৬ ম্যাচ হারে ২০২১ সালে)। নিজেদের ইতিহাসে বিদায়ী বছরে সবচেয়ে বেশি ৩০ ম্যাচ খেলার সুযোগ পান লিটন দাসরা। কাজেই স্বাভাবিকভাবে সবচেয়ে বেশি জয় ও হারের সম্ভাবনাও ছিলো বেশি। ১৫ ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ হেরেছে ১৪ ম্যাচে, অন্যটি পরিত্যক্ত।
টানা চারটি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ জয়ের আনন্দের পাশাপাশি আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হার। তবে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ এক পাশে সরিয়ে রাখলে পুরনো এক ব্যর্থতার চক্র দেখা গেছে এবারও। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে এর আগেও ভালো সময় কেটেছে টাইগারদের। সুখকর অভিজ্ঞতা আছে বড় দলের বিপক্ষেও। তবে বহুজাতিক আসর এলেই প্রত্যাশার বেলুন ফুটো হয়েছে বারবার, এবারও ব্যতিক্রম নয়।
সব সংস্করণ মিলিয়ে এর আগে তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা বাংলাদেশের কাছে আঞ্চলিক আসরে শিরোপা ছিলো স্বাভাবিক প্রত্যাশা, অন্তত ফাইনাল খেলার আশায় ছিলেন সমর্থকরা। ফাইনালের কাছে গিয়েও সম্ভাবনার করুণ অপমৃত্যু দেখতে হয়েছে তাদের।
এশিয়া কাপে সুপার এইটে শ্রীলঙ্কা ও গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে হারানো জয়গুলো বাদ দিলে গোটা আসরে দলের পারফরম্যান্স ছিলো হতাশাজনক। বিশেষ করে খেলার ধরণ ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। ব্যাটারদের চরম রান খরার মাঝে ব্যাটিং লাইনআপের যুক্তির খুঁজে পায়া ছিলো মুশকিল। মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে পারা ব্যাটারের সংকট, লোয়ার অর্ডারদের উপরে নিয়ে আসা, বিব্রতকর টেকনিকের প্রদর্শনী অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়েছে।
এশিয়া কাপের পর আরও দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে বছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। সেসব জয়ে মূলত ভূমিকা ছিলো বোলারদের। ব্যাটিং দুর্দশা থেকে বেরুনোর সত্যিকারের কোন আভাস মেলেনি।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে না। এই সময়ে ক্রিকেটাররা ব্যস্ত থাকবেন বিপিএলে। এই ঘরোয়া আসরটির মান নিয়ে খোদ বিসিবির মধ্যেও আছে সংশয়।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকে সিরিজ জয়ে এক ধরণের আত্মতৃপ্তি দেখা গেছে দলের। মিডল অর্ডার ব্যাটারদের চরম রান খরা দূর না হলেও তা নিয়ে খুব একটা ভাবনায় পড়তে দেখা যায়নি টিম ম্যানেজমেন্টকে।
এরমধ্যে দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হওয়া প্রশ্ন বছরের শেষ দিকে বাড়তে থাকে। এমনকি অধিনায়ক লিটন ও প্রধান নির্বাচন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়ান। তাদের ভেতর চিন্তার ফারাক, সমন্বয়হীনতার হয়ে যায় স্পষ্ট।
আরেকটি বহুজাতিক আসরের আগে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলকে নিয়ে বছরের শেষ প্রান্তে আশার চেয়ে সংশয়ের দোলাচলই বেশি।
ওয়ানডেতে তলানির পথে
ওয়ানডের অবস্থা বেহাল। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের এক সময়ের গৌরবময় সাফল্য আর সম্ভাবনা মিইয়ে গেছে বিগত বছরগুলোতে। র্যাঙ্কিংয়ে দশে নেমে যাওয়ার পর সেখান থেকে উত্তরণ ঘটছে না। বরং ঘনিয়ে আসছে বড় শঙ্কা। ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নেওয়া নির্ভর করছে আগামী বছরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিরিজের উপর।
২০২৫ সালে ১১ ওয়ানডে খেলে ৭টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। এই বছর বহুজাতিক আসর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নিয়ে ম্রিয়মাণ পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ দল ওই আসরে খেলার যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি।
মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্ব নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ওয়ানডে দলটাও এই মুহুর্ত ঠিক থিতু নয়। বিশেষ করে ব্যাটিং লাইনআপে দেখা গিয়েছে অস্থিরতা। ধারাবাহিকতার ঘাটতি, প্রভাব বিস্তারি পারফররম্যান্সের অভাব দলটিকে করে রেখেছে বিবর্ণ।
টেস্টেও নূন্যতম প্রত্যাশা পূরণ হয়নি
চলতি বছর বাংলাদেশ ৬ টেস্ট খেলে জিতেছে ৩টিতে, হেরেছে দুই ম্যাচ আর ড্র হয়েছে আরেকটি। ব্যাখা না করলে পরিসংখ্যান তৈরি করে নেবে ভুল ছবি। ৬ টেস্টের মধ্যে চারটাই বাংলাদেশ খেলেছে জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা দুই দলের বিপক্ষে জেতাটা যেখানে নূন্যতম প্রত্যাশা, সেখানেও একটি টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। এপ্রিলে বছরের প্রথম টেস্ট জিম্বাবুয়ের কাছে হার দিয়েই শুরু হয়। বছরের শেষ প্রান্তে এসে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মাঝে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে এক টেস্টেও আরেকটি হেরেছে দল। টেস্ট দলের লাইনআপ মোটামুটি থিতু ও স্থির দেখালেও পারফরম্যান্স সাদা পোশাকেও আশা জাগানিয়া নয়।


Comments