স্পিনহীন মেলবোর্নে দুই দিনে জয়ী ইংল্যান্ড: হলো যত রেকর্ড

ছবি: ইংল্যান্ড ক্রিকেট এক্স

টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডের দীর্ঘ ১৫ বছর জয়শূন্য থাকার হাহাকার শনিবার ঘুচল মেলবোর্নে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাত্র দুই দিনের মধ্যে ৪ উইকেটের স্মরণীয় এক জয় তুলে নিল বেন স্টোকসের দল। বোলারদের জন্য স্বর্গতুল্য পিচে কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনারের উপস্থিতি ছিল না, দাপট দেখালেন পেসাররা। মর্যাদাপূর্ণ অ্যাশেজ সিরিজের এই চতুর্থ ম্যাচ ইংলিশদের জন্য সাফল্য বয়ে আনার পাশাপাশি একগুচ্ছ নতুন রেকর্ডেরও জন্ম দিল।

মেলবোর্ন টেস্টের পরিসংখ্যান ও রেকর্ডগুলো এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:

৫৪৬৮ দিনের দীর্ঘ অপেক্ষা থামল

২০১১ সালের জানুয়ারিতে সিডনি টেস্টে জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ায় টানা ১৮টি ম্যাচ জয়হীন ছিল ইংল্যান্ড (১৬টি হার ও দুটি ড্র)— যা দেশটির মাটিতে যে কোনো দলের জন্য যৌথভাবে দীর্ঘতম জয়হীন যাত্রা। ৫৪৬৮ দিন পর পাওয়া জয়ে সেই দীর্ঘ খরা কাটল ইংলিশদের।

দুই দিনে শেষ হওয়া টেস্টের বিরল ইতিহাস

চলমান অ্যাশেজের আগে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে একাধিক টেস্ট দুই দিনে শেষ হওয়ার ঘটনা ছিল তিনটি— ১৮৮৮ সালে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এবং ১৮৮৮-৮৯ ও ১৮৯৫-৯৬ মৌসুমে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে। এছাড়া, ১৯১২ সালের ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে (ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে আয়োজিত) এমন ঘটনা ঘটেছিল।

এই সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা ৪৫০টি টেস্টের মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচ দুই দিনে শেষ হয়েছিল (১৯৩১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ও ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে)। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মেলবোর্ন টেস্ট। পার্থে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টও দুই দিনে শেষ হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিপর্যয়

পুরো ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করেছে মাত্র ৪৭৯ বল। ১৯২৮ সালের ব্রিসবেন টেস্টের (৪৫৭ বল) পর এটিই ঘরের মাঠে তাদের সবচেয়ে কম বল খেলার নজির।

দুই ইনিংস মিলিয়ে অজিরা সংগ্রহ করেছে মোটে ২৮৪ রান। ওই ব্রিসবেন টেস্টের পর ঘরের মাঠে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পুঁজি। এর আগে ২০১৬ সালে হোবার্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তারা মোট ২৪৬ রান করেছিল।

স্পিনারদের দর্শক হয়ে থাকা

মেলবোর্ন টেস্টের সবচেয়ে বড় বিস্ময় হলো— পুরো ম্যাচে স্পিনাররা একটি ওভারও বল করেননি। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে ঘরের মাঠে এটিই প্রথম এমন ঘটনা। এর আগে ১৯৮৪ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনাররা মাত্র ১২ বল করেছিলেন। আর চলতি সিরিজের পার্থ টেস্টে দুই দলের স্পিনাররা মিলে মাত্র ১৮ বল করেছিলেন।

রুট-স্টোকসের শাপমুক্তি

ইংল্যান্ডের ব্যাটার জো রুট অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টানা ১৭টি টেস্ট খেলার পর অবশেষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেলেন। নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি প্রতিবেশী দেশে ১২টি টেস্ট খেলে কোনো জয় পাননি। আর বর্তমান ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকসও জয়ের দেখা পাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টানা ১২টি টেস্ট খেলেছিলেন।

পঞ্চাশোর্ধ্ব রান নেই কারও

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রাভিস হেডের ৪৬ রানই ছিল এই ম্যাচের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। দেশটির মাটিতে এটি মাত্র পঞ্চম ঘটনা, যেখানে কোনো ব্যাটার ফিফটির দেখা পাননি। বিশ্ব ক্রিকেটে এটি ১৭তম এমন ঘটনা।

বল খরচে কৃপণতা

চলতি ২০২৫-২৬ অ্যাশেজে সব মিলিয়ে বল হয়েছে মাত্র ৫৫৭১টি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো সিরিজের প্রথম চার ম্যাচের ক্ষেত্রে এটি তৃতীয় সর্বনিম্ন। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ১৯০২ সালের অ্যাশেজ সিরিজ (৪৬৭৫ বল)।

Comments