পাঁচ গোলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে রিয়ালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা

ছবি: এএফপি

নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত সময়ের খেলাও তখন শেষের দিকে। কয়েক মিনিট পরই হবে টাইব্রেকার, এমন মুহূর্তে ব্যবধান গড়ে দিলেন জুলস কুন্দে, যার মূল কাজ রক্ষণ সামলানো। ব্রাহিম দিয়াজের উদ্দেশ্যে বাড়ানো লুকা মদ্রিচের পাস কেড়ে দূর থেকে নিচু শটে জাল খুঁজে নিলেন তিনি। এই গোলের সুবাদে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রের শিরোপা ঘরে তুলল বার্সেলোনা।

বাংলাদেশ সময় রোববার ভোরে সেভিয়ার এস্তাদিও দে লা কার্তুইয়ায় পাঁচ গোলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে ৩-২ গোলে জিতেছে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। প্রথমার্ধে পেদ্রির গোলে তারা এগিয়ে যাওয়ার পর কার্লো আনচেলত্তির দল দ্বিতীয়ার্ধে সাত মিনিটের মধ্যে দুবার লক্ষ্যভেদ করে উল্টো লিড নেয়। কিলিয়ান এমবাপের পর জাল কাঁপান আহেলিয়া চুয়ামেনি। শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মিনিট আগে স্কোরলাইন ২-২ করেন ফেরান তরেস। এরপর অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে কাতালানদের উল্লাসে মাতান কুন্দে।

২০১৩-১৪ মৌসুমের পর এই প্রথম কোপা দেল রের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা ও রিয়াল। স্পেনের নকআউট পদ্ধতির প্রতিযোগিতাটিতে রেকর্ড ৩২তম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো বার্সা।

ফাইনালের রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়াকে নিয়ে রিয়ালের অভিযোগের জেরে খেলা মাঠে গড়ানোর আগে থেকেই ছিল উত্তাপ। তবে বাইরের বিতর্ক ছাপিয়ে মাঠের ভেতরে প্রাণবন্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে দুই স্প্যানিশ পরাশক্তি। ভক্ত-সমর্থকদের মনে দীর্ঘদিন জ্বলজ্বল করবে এই ফাইনালের স্মৃতি।

ছবি: বার্সেলোনা

প্রথমার্ধের অধিকাংশ সময় বল পায়ে রাখা বার্সা স্রেফ নাচিয়ে ছাড়ে রিয়ালকে। গোলপোস্টে বার্সার নেওয়া নয়টি শটের মধ্যে চারটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, বিবর্ণ রিয়াল গোলমুখে মাত্র একটি শট নিতে পারে। সেটাও ছিল না লক্ষ্যে।

ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে দানি অলমোর কর্নারে কুন্দের হেড চলে যায় রিয়ালের ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ১৯তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে বামদিক থেকে গড়ানো শট নেন লামিন ইয়ামাল। সম্ভাবনা জাগিয়ে বল যায় পোস্ট ঘেঁষে। দুই মিনিট পর রাফিনিয়ার ফ্রি-কিক থেকে ফের হেড করেন কুন্দে। তীব্রগতিতে ছুটে আসা বল দারুণ সেভে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া।

মাঝে একাদশ মিনিটে ধাক্কা খায় লস ব্লাঙ্কোরা। কুন্দের সঙ্গে সংঘর্ষে চোট পাওয়ায় বেরিয়ে যেতে হয় ফারলান্দ মেন্দিকে। তার বদলি হিসেবে নামেন ফ্রান গার্সিয়া।

চাপ বজায় রেখে ২৮তম মিনিটে লিড আদায় করে নেয় বার্সেলোনা। বামপ্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে কিছুক্ষণ পায়ে রেখে দেখেশুনে ঠাণ্ডা মাথায় আবার ডি-বক্সের বাইরে বল বাড়ান ইয়ামাল। ফাঁকায় থাকা পেদ্রি ২০ গজ দূর থেকে ডান পায়ের জোরাল শটে খুঁজে নেন জাল। বল ঠেকানোর কোনো উপায় ছিল না রিয়ালের গোলরক্ষকের।

সাত মিনিট পর খেলার ধারার বিপরীতে জুড বেলিংহ্যাম বল জালে পাঠালেও রিয়ালের সমতায় ফেরার উল্লাস করা হয়নি। তিনি ছিলেন পরিষ্কার অফসাইডে। ৪৪তম মিনিটে ব্যবধান প্রায় বাড়িয়েই ফেলেছিল বার্সা। অলমোর কর্নার কিকে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বল ফিরে আসে দূরের পোস্টে লেগে। বেঁচে যায় রিয়াল। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে তাদের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েও সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন রেফারি। কারণ, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ছিলেন অফসাইডে।

রিয়ালের শুরুর একাদশে না থাকা এমবাপে বদলি হিসেবে নামেন বিরতির পর। তাকে পেয়ে যেন প্রাণ খুঁজে পায় রিয়াল। ৫৫তম মিনিটে আরও দুটি বদল আনেন আনচেলত্তি। মদ্রিচ ও আর্দা গুলার মাঠে ঢোকেন। সব মিলিয়ে মলিনতা ঝেড়ে রিয়াল হয়ে ওঠে ক্ষুরধার। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে গোলমুখে আটটি শট নিয়ে তারা পাঁচটি রাখে লক্ষ্যে। অন্যদিকে, এই সময়ে বার্সার নেওয়া ছয়টি শটের দুটি থাকে লক্ষ্যে।

এমবাপে ও ভিনিসিয়ুস মিলে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলেন প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে। আক্রমণ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় চালকের আসন হারিয়ে ফেলা বার্সেলোনাকে। প্রথমার্ধে অলস সময় পার করা তাদের গোলরক্ষক ভোইচেক শেজনি দেন একের পর এক পরীক্ষা।

৫৪তম মিনিটে এমবাপের শট লক্ষ্যে থাকলেও গোল আসেনি। তিন মিনিট পর তার পাসে ভিনিসিয়ুসের শট গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে আটকান শেজনি। দুই মিনিট পর ফের লড়াই জমে দুজনের মধ্যে। ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত জোড়া সেভে ভিনিসিয়ুসকে আবার হতাশ করেন শেজনি। মাঝে অন্যপ্রান্তে রাফিনিয়ার দুটি কোণাকুণি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

আক্রমণের ঝড়ের সুফল রিয়াল পায় ৭০তম মিনিটে। ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ডি-বক্সের ঠিক বাইরে এমবাপেকে পেছন থেকে টেনে ধরলে ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি। বিপজ্জনক জায়গা থেকে আসে ম্যাচের সমতাসূচক গোল। এমবাপের সরাসরি ফ্রি-কিক শেজনিকে ফাঁকি দিয়ে পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়। সাত মিনিটের মধ্যে এগিয়েও যায় রিয়াল। গুলারের কর্নারে লাফিয়ে হেড করে গোল করেন চুয়ামেনি।

মোড়ে মোড়ে উন্মাদনা ছড়ানো ম্যাচে রিয়ালের উল্লাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৮৪তম মিনিটে তরেস সমতায় ফেরান বার্সাকে। ইয়ামালের উঁচু করে বাড়ানো বল ছিল নির্বিষ। কিন্তু গোলরক্ষক কর্তোয়া ও অ্যান্টোনিও রুডিগারের মধ্যে ঘটে ভুল বোঝাবুঝি। কে বলের নিয়ন্ত্রণ নেবেন সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কালক্ষেপণে সুযোগ এসে যায় তরেসের সামনে। সেটা লুফে জাল কাঁপান তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে যোগ করা ছয় মিনিট সময়ের শেষ মিনিটে চরম নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রথমে রেফারি ফ্লিকের দলের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি দিলেও পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে সেই সিদ্ধান্ত পাল্টান। একইসঙ্গে ডাইভিংয়ের দায়ে হলুদ কার্ড দেখান রাফিনিয়াকে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

সেখানে বার্সেলোনাই ছিল উজ্জ্বল। ম্যাচের ১০৪তম মিনিটে তরেসের প্রচেষ্টা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিরতির পর প্রথম মিনিটে তিনি গোল করলেও অফসাইডে থাকায় তা কাজে আসেনি। অন্যদিকে, রিয়ালের আক্রমণের ধার আবার কমে যায়। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের শেষদিকে ভিনিসিয়ুসের বদলি হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখানো যায়। তার জায়গায় মাঠে নামেন ব্রাহিম।

১১৬তম মিনিটে কুন্দে নজরকাড়া গোলে স্কোরলাইন ৩-২ করার পর আবার রিয়াল পেনাল্টি পেয়েও বঞ্চিত হয়। কারণ, ডি-বক্সে এমবাপে ফাউলের শিকার হলেও আক্রমণের শুরুতে ব্রাহিম অফসাইডে ছিলেন।

খেলা শেষের মুহূর্তখানেক আগে রিয়ালের কষ্টের বোঝা আরও ভারী হয়ে জোটে দুটি সরাসরি লাল কার্ড। এমবাপে ফ্রি-কিক না পাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে ওঠে দলটির বেঞ্চ।  সেখান থেকে কিছু একটা ছুড়েও মারা হয় মাঠে রেফারি বেনগোচেয়ার দিকে। কাণ্ডটা কে করেন তা অবশ্য তৎক্ষণাৎ স্পষ্ট বোঝা যায়নি। তবে দুই বদলি রুডিগার ও লুকাস ভাজকেজকে দেখানো হয় লাল কার্ড।

এই নিয়ে চলতি মৌসুমের এল ক্লাসিকোর তিনটিতেই রিয়ালকে হারাল বার্সেলোনা। গত অক্টোবরে লা লিগায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের তাদের মাঠেই ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল বার্সা। এরপর জানুয়ারিতে সৌদি আরবের জেদ্দায় স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে রিয়াল উড়ে গিয়েছিল ৫-২ গোলের বড় ব্যবধানে।

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

6h ago