'ভালো ফল দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য'

সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে আবারও সেরা পুরুষ সাঁতারুর খেতাব জিতে নিয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি। এটা টানা তৃতীয়বারের অর্জন তার। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি ৬টি ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়েছেন, একই সঙ্গে জিতেছেন ১১টি স্বর্ণ ও ১টি রৌপ্য পদক। ২০২১ সালের বাংলাদেশ গেমসে সিনিয়র বিভাগে অভিষেকের পর থেকেই রাজবাড়ীর এই তরুণ আর পেছনে ফিরে তাকাননি, এখন পর্যন্ত তিনি জিতেছেন ৩০টিরও বেশি স্বর্ণপদক।

দ্য ডেইলি স্টার–এর আনিসুর রহমানের সঙ্গে একান্ত আলাপে নিজের পথচলা, অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন রাফি। নিচে সেই সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরা হলো—

দ্য ডেইলি স্টার: জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে আপনার রেকর্ড ভাঙা বা নতুন রেকর্ড গড়া নতুন কিছু নয়। তবে এবার কী নতুন অভিজ্ঞতা হলো আপনার জন্য?

সামিউল ইসলাম রাফি: এবার আমি কয়েকটি নতুন ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলাম এবং সেগুলোতেও সফল হয়েছি, কিছুতে নতুন রেকর্ডও গড়তে পেরেছি। ছয়টি ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়ার কথা ভাবিনি, এটা আমার প্রত্যাশারও বেশি ছিল। তবে নিজের সঙ্গে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, আগের চেয়ে আরও এগিয়ে যেতে হবে, সেটাই করতে পেরেছি।

ডেইলি স্টার: সময়ের হিসাবে আপনি দক্ষিণ এশিয়ায় এখন কোথায় অবস্থান করছেন বলে মনে করেন?

রাফি: আমার মূল লক্ষ্য ৫০ মিটার ইভেন্টগুলো। এবার ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে যে সময় পেয়েছি, তা দক্ষিণ এশিয়ার মানের সঙ্গে তুলনীয় এবং এশিয়ান মানেরও কাছাকাছি। পরিকল্পনামতো এগোতে পারলে আমি বিশ্বাস করি, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে কিছু বিশেষ অর্জন করতে পারব।

ডেইলি স্টার: থাইল্যান্ডে দীর্ঘ সময় অনুশীলন করার পর আপনার পারফরম্যান্সে কি দৃশ্যমান উন্নতি এসেছে?

রাফি: অবশ্যই এসেছে। থাইল্যান্ডে অনুশীলনের মাধ্যমে নানা কৌশল ও দক্ষতা উন্নত করতে পেরেছি। মনে হয় আমি অনেকটা পরিণত হয়েছি, যদিও এখনও আরও উন্নতির জায়গা আছে।

ডেইলি স্টার: হাতে টাইমিংয়ের বদলে ইলেকট্রনিক টাইমিং না থাকা নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?

রাফি: সত্যি বলতে কী, হাতে টাইমিংয়ে আমার খুব একটা ভরসা নেই, এটা সবসময় কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি করে। তবুও বুঝতে পারছি, আমি আগের চেয়ে উন্নতি করছি। আগে আমার সময় ছিল ২৬.৯০ সেকেন্ড, এখন সেটা ২৫.৯০ সেকেন্ড। এটা বিশাল পার্থক্য।

বিদেশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সাঁতারের স্কলারশিপ দেয়, কিন্তু তারা হাতে মাপা টাইমিং গ্রহণ করে না। তাই আমার মনে হয়, সাঁতারুদের বিদেশে সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে ফেডারেশনকে ইলেকট্রনিক টাইমিং ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

ডেইলি স্টার: প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি থেকে উঠে এসে এখন পর্যন্ত আপনার সাঁতারের ক্যারিয়ার নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?

রাফি: প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আগে আমি ছিলাম একদম সাধারণ একজন মানুষ। এখন আমি আমার সাঁতারের জীবন নিয়ে ভীষণ সন্তুষ্ট, কারণ আমি শুধু নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি না। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বও করছি গর্বের সঙ্গে।

ডেইলি স্টার: এতদিনে আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য কী মনে হয়? আর সামনে লক্ষ্য কী?

রাফি: এ বছর মালয়েশিয়ান ওপেনে স্বর্ণপদক জেতা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। সেখানে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, সিঙ্গাপুর, হংকংসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ সাঁতারুরা অংশ নিয়েছিল।

সেখানে যে সময় পেয়েছি, তা বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট। আমি চাই, এমন সময় নিয়মিত তুলতে পারি, যাতে ওয়াইল্ড কার্ডে নয়, নিজের যোগ্যতায় আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিতে পারি। আমরা যদি এভাবে উন্নতি করতে পারি, তবে আমি বিশ্বাস করি এফআইএনএ (বিশ্ব সাঁতার সংস্থা) বাংলাদেশকে আরও বেশি স্বীকৃতি দেবে।

ডেইলি স্টার: আপনার মতে বাংলাদেশের সাঁতারে কোথায় স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে?

রাফি: দেশে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার অভাব। মিশরীয় কোচ সাঈদ মাগদির অধীনে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণেই আমরা অনেক উন্নতি দেখেছি। এক চ্যাম্পিয়নশিপে ২০টি নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়া খুব বিরল ঘটনা! যদি দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ চালু থাকে, আমি বিশ্বাস করি, দেড় বছরের মধ্যেই আমরা ভারতকেও ছাড়িয়ে যেতে পারব।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?

রাফি: সত্যি বলতে আমার এখন ফেডারেশনের কাছ থেকে কোনো প্রত্যাশা নেই। তারা ইতিমধ্যেই আমাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়েছে, সেটাই অনেক বড় সহায়তা। এখন আমার দায়িত্ব তাদের প্রত্যাশা পূরণ করা। বাংলাদেশ নৌবাহিনীও আমার জন্য সর্বোচ্চটা করছে। আমার আর চাওয়ার কিছু নেই। এখন শুধু তাদের জন্য, দেশের জন্য ভালো ফল দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

2h ago