দুটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের ম্যাচে লড়াই করে ইংল্যান্ডের কাছে হারল বাংলাদেশ

১০৩ রানে ইংল্যান্ডের ৬ উইকেট ফেলে দিয়ে দারুণ কিছু ঘটানোর আশা জাগাল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর বোলিংয়ের ধার যেমন কমে গেল, তেমনি টিভি আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ দুটি সিদ্ধান্তে দুবার বেঁচে যাওয়া ইংল্যান্ডের হিদার নাইট ক্রিজে জেঁকে বসলেন। ফলে ম্যাচের লাগাম ছুটে যাওয়ায় শেষমেশ স্বপ্ন ভেঙে হেরে গেল বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে আইসিসি নারী বিশ্বকাপের ম্যাচে ইংলিশরা জিতেছে ৪ উইকেটে। টস জিতে বাংলাদেশিদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ১৭৮ রানে অলআউট করার পর ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩ বল বাকি থাকতে লক্ষ্যে পৌঁছায় তারা।
ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা নাইট তিনে নেমে খেলেন ৭৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। ১১১ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন আটটি চার ও একটি ছক্কা। অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেট জুটিতে চার্লি ডিনের সঙ্গে মিলে তিনি আনেন ১০০ বলে ৭৯ রান। তাদেরকে আলাদা করার কোনো উপায় খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ। ডিন দুটি চারেরে সাহায্যে ৫৬ বলে করেন অপরাজিত ২৭ রান।
টিভি আম্পায়ারের দুটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যায় নাইটের পক্ষে। প্রথমবার মারুফা আক্তারের দ্বিতীয় ও ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে তার বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদনে আউট দেন মাঠের আম্পায়ার। তবে তিনি রিভিউ নিলে আলট্রাএজে বল ব্যাটে লাগার 'যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়া'য় ভারতের টিভি আম্পায়ার গায়ত্রী ভেনুগোপালান সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে করেন নট আউট।
শূন্য রানে বেঁচে যাওয়া নাইট আবার জীবন পান ফাহিমা খাতুনের দ্বিতীয় ও ইনিংসের ১৫তম ওভারে। সেসময় ১৩ রানে খেলছিলেন তিনি। এক্সট্রা কভারে স্বর্ণা আক্তার দারুণভাবে ক্যাচ নিলেও মাঠের আম্পায়ার দ্বিধায় থাকায় দ্বারস্থ হন টিভি আম্পায়ারের। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেও নিশ্চিত হতে পারেননি ভেনুগোপালান। তবে বল মাটিতে লাগার 'যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়া' সত্ত্বেও এবার তিনি আগের নট আউটের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।
বাংলাদেশের পক্ষে ১০ ওভারে দুটি মেডেনসহ মাত্র ১৬ রানে ৩ উইকেট নেন লেগ স্পিনার ফাহিমা। ২ উইকেট পেতে ৫ ওভারে পেসার মারুফার খরচা ২৮ রান। শুরুতে টানা বল করলেও পরে চোটের কারণে বেরিয়ে যান। আর মাঠে ফেরা হয়নি তার।
অল্প পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। প্রথম ওভারের শেষ বলেই ওপেনার অ্যামি জোন্সকে (৩ বলে ১ রান) এলবিডব্লিউ করেন মারুফা। নাহিদা আক্তারের করা পরের ওভারে অবশ্য তৈরি হয় হতাশা। আরেক ওপেনার ট্যামি বেমন্টের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন মারুফা। ভুলের প্রায়শ্চিত্তও আবার তিনিই করেন। সপ্তম ওভারে এলবিডব্লিউের ফাঁদে ফেলেন বেমন্টকে। ২ রানে জীবন পাওয়া বেমন্ট আউট হন ১৭ বলে ১৩ রানে।
তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক ন্যাট সিভার-ব্রান্ট ও নাইটের ৭৩ বলে ৪০ রানের জুটিতে চাপ সামলে নেয় ইংল্যান্ড। এরপর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায় ফাহিমা জ্বলে ওঠায়। সিভার-ব্রান্টকে (৪১ বলে ৩২ রান) ক্যাচ বানানোর পর ওই ওভারেই সোফিয়া ডাঙ্কি (৩ বলে শূন্য) ও পরবর্তীতে এমা ল্যাম্বকে (১২ বলে ১ রান) সাজঘরে পাঠান তিনি।
৭৯ রানে ৫ উইকেট খোয়ানো ইংল্যান্ডের ষষ্ঠ উইকেটের পতন হয় একশ পেরিয়ে। সানজিদা আক্তার মেঘলা এলবিডব্লিউ করেন অ্যালিস ক্যাপ্সিকে (৩৪ বলে ২০ রান)। কিন্তু এরপর আলগা বোলিংয়ে আর কোনো সাফল্য আনতে পারেনি নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ৮৬ বলে ফিফটি ছোঁয়া নাইটের সঙ্গে জমে যায় ডিনের জুটি। চার মেরে খেলা শেষ করেন ডিন।
এর আগে মন্থর উইকেটে আগে ব্যাট করে ২ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ষষ্ঠ ওভারে ক্রিজে যাওয়া ডানহাতি ব্যাটার সোবহানা মোস্তারি টিকে থাকেন ৪৭তম ওভার পর্যন্ত। তিনে নেমে তিনি খেলেন ৬০ রানের ইনিংস। ১০৮ বল মোকাবিলায় আটটি বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। নয়ে নেমে অলরাউন্ডার রাবেয়া খান তোলেন ঝড়। তিনি মাত্র ২৭ বলে অপরাজিত থাকেন ৪৩ রানে। ছয়টি চারের সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটি মারেন তিনি।
ওপেনার শারমিন আক্তার ৫২ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে করেন ৩০ রান। দুই অঙ্কের ঘরে আর যান কেবল স্বর্ণা আক্তার। ১০ রান করতে তার লাগে ২৩ বল। বাকি ব্যাটাররা কেউ সুবিধা করতে পারেননি। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের নির্ভরতার প্রতীক ও অধিনায়ক নিগার জ্যোতি হন ব্যর্থ। ২ বল খেলে তিনি আউট হন শূন্যতে।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় বাংলাদেশের রানের চাকা ছিল ধীরগতির। ক্রিজে গিয়েই মারতে শুরু করা রাবেয়ার কল্যাণে শেষ ৪০ বলে ৪৮ রান আনে তারা। ইংল্যান্ডের হয়ে সোফি এক্লেস্টোন ২৪ রানে শিকার করেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নেন লিন্সি স্মিথ, ডিন ও ক্যাপ্সি।
Comments