আইসিসি নারী বিশ্বকাপ

এবার বাজে ফিল্ডিংয়ে অনেক সুযোগ হাতছাড়া করে হারল বাংলাদেশ

গত মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের তীব্র সুবাস পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের দিকে উইকেট নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারায় হতাশায় ডুবতে হয় তাদের। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবারও হৃদয় ভাঙল নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের। দায়টা বাজে ফিল্ডিংয়ের। কয়েকটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়ার পাশাপাশি রানআউটের একাধিক সুযোগ নষ্ট হলো। তাই বিফলে গেল স্বর্ণা আক্তারের রেকর্ডগড়া ফিফটিতে পাওয়া চ্যালেঞ্জিং পুঁজি।

সোমবার বিশাখাপত্তনমে আইসিসি নারী বিশ্বকাপে শেষ ওভারে গড়ানো রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে তারা তোলে ৬ উইকেটে ২৩২ রান। জবাবে ৩ বল হাতে রেখে ৭ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা। নাহিদা আক্তারের ফুল টসে ছক্কা মেরে খেলা শেষ করেন নাডিন ডি ক্লার্ক।

পেসার মারুফা আক্তার খরুচে থাকলেও স্পিনারদের অবদানে মাত্র ৭৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। তবে সেই দাপট বজায় রাখা যায়নি। ষষ্ঠ উইকেটে ১০৯ বলে ৮৫ রানের দায়িত্বশীল জুটিতে মারিজান ক্যাপ ও ক্লোয়ি ট্রিয়ন উল্টো চাপে ফেলে দেন। তাদেরকে সাজঘরে পাঠিয়ে আশা জাগানো গেলেও ডি ক্লার্ককে আর থামানো যায়নি।

৪২ বলে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ৫৩ রান, তখন রাবেয়া খানের করা ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে ডিপ মিড-উইকেটে ট্রিয়নের সহজ ক্যাচ ছাড়েন বদলি ফিল্ডার সুমাইয়া আক্তার। উল্টো চার হওয়ায় ফিফটিতে পৌঁছে যান ট্রিয়ন। পরে তিনি একটি করে ছক্কা ও চার হাঁকালে ওই ওভার থেকে আসে মোট ১৬ রান। ম্যাচ বাংলাদেশের হাত থেকে একরকম বের হয়ে যায়।

ট্রিয়ন পরের ওভারে রানআউট হওয়ার পর নামা মাসাবাতা ক্লাস দুবার বেঁচে যান রানআউট থেকেই। শেষদিকেও একটি বড় সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে, যখন ৮ বলে ৯ রান লাগত প্রতিপক্ষের। কিন্তু রাবেয়ার করা ৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ডি ক্লার্কের অনায়াস ক্যাচ লং-অফে ফেলে দেন স্বর্ণা। জীবন পেয়ে শেষ ওভারে ৮ রানের সমীকরণ আটে নামা ডি ক্লার্কই মিলিয়ে ফেলেন। চারটি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

ছয়টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৯ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পান সাতে নামা ট্রিয়ন। তার সঙ্গে ২৭ বলে ৩৫ ও ক্লাসের সঙ্গে ২৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৭ রানের জুটি গড়েন ডি ক্লার্ক। পাঁচে নামা ক্যাপের ব্যাট থেকে আসে চারটি চার ও ছক্কার সাহায্যে ৭১ বলে ৫৬ রান।

এর আগে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে পাওয়া ভিতকে কাজে লাগিয়ে ফিফটি করেন শারমিন আক্তার সুপ্তা। শেষদিকে চার ও ছক্কায় উত্তাল হয়ে ওঠে স্বর্ণার ব্যাট। ক্যাচ মিসের আক্ষেপে পোড়ার আগে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন তিনি। ফলে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ পায় দুইশ বা এর চেয়ে বেশি রানের সংগ্রহ। ৩০ ওভারে একশ ছোঁয়া দল পরে চালিয়ে খেলে গতি বাড়ায়। শেষ ১০ ওভারে ৩ উইকেট হারালেও ৮২ রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে।

রানের চাকায় দম দেওয়ার মূল কৃতিত্ব ৩৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করা স্বর্ণার। পাঁচে নেমে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে তিনি অপরাজিত থাকেন ৫১ রানে। ৩৫ বল মোকাবিলায় তিনটি চারের পাশাপাশি বাংলাদেশের ইনিংসের তিনটি ছক্কাই মারেন তিনি। স্বর্ণা ভেঙে দেন জ্যোতির রেকর্ড। গত এপ্রিলে বাংলাদেশের অধিনায়ক লাহোরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ফিফটি করেছিলেন ৩৯ বলে।

জ্যোতির ব্যাট থেকে আসে ৪২ বলে ৩২ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবম ফিফটি পাওয়া সুপ্তা ৭৭ বলে ৫০ রান করতে মারেন ছয়টি চার। ক্রিজে গিয়েই মারতে থাকা স্বর্ণাকে শেষদিকে সঙ্গ দেন ঋতু মনি। তিনি ৮ বলে তিনটি চারের সাহায্যে অপরাজিত থাকেন ১৯ রানে। তবুও জয় দিয়ে আসর শুরুর পর বাংলাদেশকে শেষমেশ টানা তৃতীয় হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়।

Comments