মানুষকে প্রতিস্থাপন নয়, ব্যবসায়ে যোগাযোগ বাড়াতে সহায়তা করবে এআই

ছবি: সংগৃহীত

একটা নীরব পরিবর্তন এখন ব্যবসার জগৎ পাল্টে দিচ্ছে। কেবল প্রযুক্তি, অটোমেশন বা অ্যালগরিদমের নয়, এই পরিবর্তনের মূল বিষয় মানবিক যোগাযোগ বা সংযোগ। এখনকার সফল কোম্পানিগুলো কেবল পণ্যের গুণ, দাম বা কার্যকারিতায় সাফল্যের দেখা পাচ্ছে না। বরং সবচেয়ে বেশি সাফল্য পাচ্ছে মানুষের মানসিকতা বুঝতে পেরে। ব্র্যান্ডগুলো তাদের গ্রাহকদের ব্যাপারে সব ধরনের তথ্য জানছে। তারপর সেভাবেই তাদের প্রচারণা কৌশল সাজাচ্ছে।

এটা মোটেও কাকতালীয় ব্যাপার নয়। এটা হলো হাইপার-পারসোনালাইজেশন; অর্থাৎ অতিব্যক্তিকরণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজটি করে। তাও এমনভাবে করে যে, গ্রাহকের চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাবনা বুঝে নেয়। ফলে ব্র্যান্ডকে চাহিদা জানানোর আগেই, গ্রাহকের কাছে তথ্য পৌঁছে যায়।

আমরা এখন এমন সময়ে বাস করছি, যেখানে মানুষের মনোযোগ কম। কিন্তু প্রতিযোগিতা অনেক। তাই হাইপার-পারসোনালাইজেশন কোনো অতিরিক্ত সুবিধা নয়, বরং টিকে থাকা ও লাভের চাবিকাঠি।

নাম নয়, চাই যোগাযোগ

একসময় পারসোনালাইজেশন মানে ছিল মেসেজ বা ইমেইলের শুরুতে গ্রাহকের নাম ও সম্বোধন যোগ করে বার্তা পাঠানো। কিন্তু আজকের দিনে সেটা হাস্যকর লাগে। এখন মানুষ চায়, যোগাযোগ যেন আগের আলাপের ধারাবাহিকতায় হয়, সহজ, প্রাসঙ্গিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়। তারা অনেকের মধ্যে একজন হতে চায় না; বরং চায় একজন বিশেষ মানুষ হয়ে থাকতে। এই জায়গায়ই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সবচেয়ে কার্যকর। এটি প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি আবহাওয়ার মতো পূর্বাভাসও দেয়। কে আপনার গ্রাহক, সে কেমন ব্যয় করতে আগ্রহী ইত্যাদি। আবার গ্রাহকের কাছে কীভাবে দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দে পণ্য বা সেবা পৌঁছে দেওয়া যায় এআই তাও বোঝে। তাই এ কথা বলা যায়, এসব বিশ্লেষণ এআই আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারে।

এআই প্রতিস্থাপন নয়, সহযোগী শক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আসল ক্ষমতা বা দক্ষতা মানুষের বুদ্ধি বা অনুভূতিকে প্রতিস্থাপন করা নয়, বরং সহযোগী হিসেবে কাজ করা। ধরে নিতে পারেন এআই ব্যবসার জন্য উচ্চক্ষমতার মাইক্রোস্কোপ। যে যন্ত্রটি নিখুঁত চিত্রকল্প, পরামর্শ-আইডিয়া দিতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে ছোট স্থানীয় ব্যবসা সবাই এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এই সুবিধা নিচ্ছে, যা আগে কেবল বড় করপোরেটদের নাগালে ছিল।

তবে তথ্য দিয়ে কেবল মানুষ কী করে তা জানা যায়। কিন্তু কেন করে তা বোঝা যায় না। সেই জায়গাটাও অনেকটা পূরণ করবে এআই। গ্রাহকের অনুভূতি, চাওয়া-পাওয়া, বিচারবোধ সবকিছু বিশ্লেষণ গ্রাহকের চাহিদা ও মনোভাব জানাবে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করলে সফলতার দেখা মিলবে।

সম্পর্কের আসল চালিকাশক্তি বিশ্বাস

গ্রাহকের তথ্য দেওয়া মানে কেবল তথ্য নয়, বরং তারা দেয় বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে কোনো প্রযুক্তি ফেরাতে পারবে না। সেরা ব্র্যান্ডগুলো তাই তথ্য বা ডেটাকে কখনো লেনদেন বা পণ্য হিসেবে দেখে না। তারা গ্রাহকের ডেটাকে এক ধরনের সংলাপ হিসেবে দেখে। তারা জানায়—কীভাবে সেই তথ্য ব্যবহৃত হচ্ছে, কীভাবে মূল্যয়ন হচ্ছে, এমনকি গ্রাহককে নিয়ন্ত্রণের অধিকারও দেয়। আর প্রকৃত হাইপার-পারসোনালাইজেশন অনধিকার প্রবেশ নয়, বরং বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তোলা।

মানবিক থাকা

একটা ব্যবসা ছোট থেকে বড় করার চেয়ে কঠিন হলো সুনাম ধরে রাখা। যখন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক হাজার ছাড়িয়ে লাখে পৌঁছায়, তখনো কীভাবে সুনাম ধরে রাখা যায় সেটাই হাইপার-পারসোনালাইজেশনের শিল্প। মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি তথ্য বিশ্লেষণ করে। কিন্তু মানুষ চায় আস্থা। তাই ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিংবা গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের সুরে কথা বলুন। আচরণ বা ব্যবহার রাখুন একইরকম।

তিনটি মূলনীতি

  • শোনার ক্ষমতা বাড়ানো: প্রতিটি যোগাযোগ কোনো না কোনো সংকেত দেয়। তাই শুধু বিক্রির জন্য নয়, সেবার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য অন্যের কথা শুনতে হবে।
  • পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া: এআই অভিজ্ঞতা বাড়াবে, নতুন কিছু শেখাবে। আর এইআইয়ের এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।
  • মানবিক থাকা: নিজের মানবিক গুণাবলী ধরে রাখতে হবে। তাই গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে তথ্য ব্যবহার করতে হবে, যান্ত্রিক দূরত্ব বাড়াতে নয়।

ভবিষ্যৎ তাদের, যারা জানতে চায়

বর্তমানে এআই ও তথ্য ব্যবসার জন্য অনেকটা অক্সিজেনের মতো। তাই প্রতিনিয়ত জানতে হবে। জানার জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। যারা গ্রাহকের কাছে জানতে চায়, 'আমরা কীভাবে আরও ভালো সেবা দিতে পারি?' তারাই হাইপার-পারসোনালাইজেশনের মাধ্যমে ভবিষ্যতকে জয় করবে।

Comments

The Daily Star  | English

One-third of local private banks keep NPLs below 10%

Seventeen lenders keep healthier balance sheets amid rising industry bad loans through disciplined lending, close monitoring and strong governance

9h ago