ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে টিএসসিতে ছাত্রী হেনস্তা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ

রাজু-ভাস্কর্য
প্রতীকী ছবি। স্টার ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ইভটিজিং ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে নাজমুল ওরফে জিম নামে একজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া, ওই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছেন হাকিম চত্বরের একজন দোকান কর্মচারী। 

মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে নাজমুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক তরুণীকে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী নাজমুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন মাস্টার দা সূর্যসেন হলে। তিনি সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম সোহানের অনুসারি বলে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে পরিচয় দেন। পরে জিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে মারিয়ামের সঙ্গে তার ছবি দেখে পরিচয় নিশ্চিত হন এই প্রতিবেদক।

অভিযোগকারী তরুণী রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত পৌনে ৩টার দিকে দুজন বন্ধুর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছবি তুলছিলেন ওই ছাত্রী। হঠাৎ ছাত্রলীগ কর্মী নামজুল তার এক বন্ধুকে নিয়ে এত রাতে ক্যাম্পাসে আসার কারণ জানতে চান। তারা ছবি তুলছিলেন জানালে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে নাজমুল ওই ছাত্রীর হাতে থাকা আইফোন ছিনিয়ে নেন এবং উগ্র আচরণের সঙ্গে 'এ ক্যাম্পাস কিনতে চাস?' প্রশ্ন করে ওই ছাত্রীকে পরপর ৩টি চড় মারেন।   

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে অন্তত ৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ওই ছাত্রীকে মারধর করতে দেখে তারা ঘটনাস্থলে এগিয়ে যান। তখন ছাত্রী তাদের জানান, নাজমুল তার সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করেছেন। এরপর ছাত্রী নাজমুলকে একটি চড় মারলে নাজমুলও তাকে পরপর ৩টি চড় মারেন।

ওই ছাত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জন্মদিন উদযাপন শেষে বন্ধুদের নিয়ে আমি ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম। এমন সময় দুজন ছেলে বাইক থামিয়ে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। আমার সঙ্গে অশালীন ভাষা ব্যবহার করে। তারা ইভটিজিং করে, এর প্রতিবাদ করলে চড় মারে।' 

এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নাজমুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই ছাত্রী এত রাতে ক্যাম্পাসে কী করে? আমি জানতে চাইলে সে আমার ক্যাম্পাস কিনে নেবে বলে। সে প্রথমে আমাকে চড় মেরেছে। এরপর আমি তাকে চড় মারি।'

নাজমুলের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ

নাজমুল যখন ওই ছাত্রীর সঙ্গে রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে তর্ক করছিলেন, তখন ঘটনাস্থলে আসে প্রক্টরিয়াল টিমের দুজন সদস্য। তাদের সঙ্গে ছিল হাকিম চত্বরের একজন দোকান কর্মচারী আবুল বাসার (১৪)। তিনি নাজমুলকে দেখিয়ে বলেন, 'সোমবার রাত ১০টার দিকে আমি বেতন তুলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় নাজমুল আমাকে মারধর করে ফোন, ম্যানিব্যাগ এবং হেডফোন নিয়ে নেয়।'

বাসারের অভিযোগের পর প্রক্টরিয়াল টিম নাজমুলকে ধরতে গেলে নাজমুল সেখান থেকে পালিয়ে যান।

বাসার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি পুরো মাসের বেতন তুলে উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় নাজমুল আমাকে মারধর করে ৭ হাজার টাকা নিয়ে যায়। সকালে কিস্তির টাকা দিতে হবে, এজন্য বেতনের টাকাগুলো তুলে রেখেছি। আমার ফোন ফিরিয়ে দিলেও সব টাকা নাজমুল নিয়ে যায়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী থেকে শহীদ মিনার সড়ক, পলাশী থেকে বকশি বাজার মোড়, কার্জন হল এলাকা এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের একটি সক্রিয় চক্র এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একটা মেয়ের রাত ৩টার দিকে ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করা উচিত না। তারপরও যে কেউ ক্যাম্পাসে আসতে পারে। ওই ছাত্রীর গায়ে যদি কেউ হাত তুলে থাকে এবং এর প্রমাণ থাকে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব এবং সে যদি নির্দোষ হয় তাহলে তার পক্ষে অবস্থান নিতে প্রস্তুত আছি।'

এ ছাড়া, ছিনতাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এ ধরনের কোনো প্রমাণ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।' 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই শিক্ষার্থী যেহেতু অন্য প্রতিষ্ঠানের, তাই তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

This victory belongs to the students, not any faction: Shadik Kayem

Newly elected Ducsu VP says they do not want to mark victory with rallies

29m ago