চবিতে মধ্যরাতে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

চবির দুই নং গেট এলাকায় মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই নং গেট এলাকায় মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরিয়াল বডির দুই শিক্ষক আহত হন।

আজ রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চবি মেডিকেলে কর্তব্যরত সিনিয়র মেডিকেল অফিসার মো. টিপু সুলতান দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, 'একই দিনে এত শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় আগে কখনো দেখিনি। আমি নিজেই প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছি, আর গুরুতর আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠাতে হয়েছে।'

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দর্শন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে মেসের দারোয়ান মারধর করেন। তারপর স্থানীয়দের সঙ্গে চবি শিক্ষার্থীদের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই শিক্ষার্থী রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বাসায় ফিরে গেট বন্ধ পান। তিনি একাধিকবার ধাক্কা দেওয়া সত্ত্বেও গেট খোলা হয়নি। পরে তার সহপাঠীরা এসে দারোয়ানকে গেট খুলতে অনুরোধ করেন। কিন্তু দারোয়ান রাজি হননি। একপর্যায়ে চিৎকার-চেঁচামেচির পর গেট খোলা হয়। এরপর ভেতরে ঢোকার সময় দারোয়ান ওই শিক্ষার্থীকে ধাক্কা ও মারধর করেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে চবি শিক্ষার্থীদের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনার পর ওই শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুরা আত্মরক্ষার জন্য দারোয়ানের সঙ্গে বিবাদে জড়ান এবং পরিচিত সিনিয়রদের খবর দেন। তারা দারোয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আরও শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হন। এরপর স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ৩টায় সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এ সময় স্থানীয়দের রামদা, দেশীয় অস্ত্র হাতে ২ নং গেটে মহড়া দিতে দেখা যায়। দুই নং গেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা থাকে তাদের প্রত্যেকের বাসায় গিয়ে হুমকি দেন স্থানীয়রা।

ওই শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বাসার গেট রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আজকে একটা কাজে বাইরে গিয়েছিলাম, ১১টার দিকে ফিরে দেখি গেট বন্ধ। আমি অনেকবার ধাক্কা দিয়েছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান গেট খুলেনি। পরে গেট খুলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে দুবার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।'

সেনা কর্মকর্তা মেজর সাহরিয়ার বলেন, 'আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছি, আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কথা বলার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রোক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর হায়দার বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, এটা দুঃখজনক। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

পরীক্ষা স্থগিত

সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজকের নির্ধারিত সব বিভাগীয় পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-প্রভোস্ট প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আজকের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

1h ago