বাকৃবি: হল ছাড়ছেন কেউ কেউ, ক্যাম্পাসে অবস্থান শিক্ষার্থীদের একাংশের

শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ছবি:

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সকালে থেকে হল ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ হল ছাড়তে নারাজ। তারা ক্যাম্পাসে মিছিল করছেন।

আজ সোমবার সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হচ্ছেন। তারা অটোরিকশায় উঠে পাটগুদাম বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাচ্ছেন। এরপর সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন যানবাহনে রওনা হবেন।

তবে বিপরীতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তাদের কারো কারো হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। তারা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

হলে ছেড়ে বাড়ির পথে রওনা হওয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে যাদের বাড়ি দূর-দূরান্তে, তারা বিপাকে পড়েছেন। তবুও নিরাপত্তার শঙ্কায় হলে ছেড়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন।

তারা আরও বলেন, আমরা এখানে পড়ালেখা করতে এসেছি। আমরা হামলা কিংবা ভাঙচুর চাই না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা মেনে নেওয়া যায় না।

সকালে অনেককে হল ছাড়তে দেখা যায়। ছবি: আমিনুল ইসলাম/স্টার

ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা হল ছাড়ব না। কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাস্তবায়ন করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ভিসি স্যারকে ক্ষমা চাইতে হবে। হামলায় জড়িত শিক্ষকসহ অন্যান্যদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

তারা প্রক্টোরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল আলীম বলেন, 'গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনির্দিষ্টকালের জন‍্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সব শিক্ষার্থীদের সকাল ৯টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' 

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতারুল আলম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন আছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।'

এর আগে, গতকালসকাল ৯টা থেকে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশেপাশে জড়ো হতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো, 'এক পেশায় এক ডিগ্রি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি'।

শিক্ষার্থীদের একাশং ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। ছবি: আমিনুল ইসলাম/স্টার

সকাল ১১টায় একই মিলনায়তনে কম্বাইন্ড ডিগ্রি ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শুরু হয়। একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি, ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং দুই অনুষদের সমন্বয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রি—এই তিনটি ডিগ্রি থাকবে।

তবে শিক্ষার্থীরা তিন ডিগ্রি মেনে নেয়নি। তারা চান, এক পেশায় এক ডিগ্রি, কম্বাইন্ড ডিগ্রি। ফলে দুপুর দেড়টার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত আশানুরূপ না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

শিক্ষকদের ছয় থেকে সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর দ্বিতীয়বারের মতো একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক হয়। একপর্যায়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে হাজির হন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর কিছুক্ষণ পর বহিরাগতদের একটি মিছিল লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা ধাওয়া দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছু হটে। বহিরাগতরা হামলা চালিয়ে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলা চলাকালে ক্যাম্পাসের শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীন মিলনায়তনে অবরুদ্ধ শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পেছনের দরজা দিয়ে নিরাপদে বের হয়ে যান।

বহিরাগতদের হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। বহিরাগতরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

4h ago