শিক্ষক-প্রশাসন-ছাত্র প্রতিনিধি সবার কার্যক্রম মূল্যায়নের ব্যবস্থা করব: ফাহিম রেজা
শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন আসন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট' প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী ফাহিম রেজা।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা ফাহিম এ কথা জানান।
তিনি বলেন, 'রাকসু নির্বাচন ইচ্ছাকৃতভাবে ৩৬ বছর বন্ধ রাখা হয়েছিল, এটা করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে একতরফা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় যেন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ না থাকে। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলোকে জিইয়ে রেখে লেজুরবৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হয়। আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এক বছরের সংগ্রাম শেষে রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। এতে আমরা সবাই অবশ্যই খুব খুশি। আমরা আমাদের জীবনের প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছি আমাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেই। এজন্য আমাদের উচ্ছ্বাস আরও অনেক বেশি।'
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, 'আমি প্রথম বর্ষ থেকেই অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। ফ্যাসিবাদী আমলে ছাত্রলীগের শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রলীগ ও ক্ষমতা দেখানো শিক্ষকদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছি শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়ক হিসেবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহীকে সঠিক পথে রেখে নেতৃত্ব দিয়ে গেছি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে ক্যাম্পাসে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হয়ে তাদের জন্য আরও বেশি কাজ করার অভিপ্রায় থেকেই আমার নির্বাচনে আসা।'
ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে কেন নির্বাচন করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দীর্ঘ ১৫ বছর ছাত্রশিবিরকে গণতান্ত্রিক সুযোগ দেওয়া হয়নি। ৫ আগস্টের পর এ সংগঠনটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর ছাত্রসংগঠন হিসেবে তারা বেশ কিছু প্রোগ্রাম করেছে। জুলাইকে তারা যথাযথ মর্যাদা দিয়েছে এবং তাদের সততা ও দক্ষ জনবল আছে। আমি মনে করেছি তাদের সঙ্গে কাজ করলে এই ক্যাম্পাসের জন্য আমি ভালো কিছু করতে পারব।'
'এই প্যানেলে ছাত্রশিবিরের জনবলের বাইরে জুলাই আহত, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী, হিজাব করেন না এমন নারী প্রার্থীও আছেন। আট সম্পাদক পদে দক্ষ এবং ওই পদের জন্য কাজের অভিজ্ঞতা আছে এমন প্রার্থী রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে সব ধরনের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য একটা অসাধারণ প্যানেল হয়েছে,' যোগ করেন এই জিএস প্রার্থী।
নির্বাচিত হলে কী করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রাকসু নির্বাচন যেন নিয়মিত হয় সেজন্য আমাদের প্যানেলের দেওয়া ইশতেহারের অন্যতম হলো একাডেমিক ক্যালেন্ডারে রাকসু নির্বাচন যুক্ত করা, যেন প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হয়। আমি নির্বাচিত হলে দায়িত্ব নিয়ে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।'
'আমাদের ইশতেহারের জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাদের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। প্রায় ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা গেছি। তারা আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সেগুলো বাস্তবায়নের কথাই আমাদের ২৪ দফা ইশতেহারে থাকছে। আবাসন সংকটকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধে আমরা দ্রুত হলের নির্মাণের বাজেটের ব্যবস্থার চেষ্টা করব। আর যতদিন পর্যন্ত এটা সম্ভব হবে না, ততদিন পর্যন্ত আবাসন ভর্তুকি আদায়ের চেষ্টা করব। হলের ক্যান্টিনে খাবারের পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে নূন্যতম ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা যেন হয় সেই চেষ্টা করব, নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ যেন বাড়ানো হয় তার চেষ্টা করব। গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মোটিভেশনের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবি থাকবে। অন্যায্য ফি কমিয়ে আনতে চাই। লাইব্রেরিতে পড়ার পরিবেশ তৈরি করব। চিকিৎসা ব্যবস্থার মানোন্নয়নের চেষ্টা করব। ক্যাম্পাসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যেন নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, তার ব্যবস্থা করব। এ ছাড়া, আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য শাটল সিস্টেম বা ই-কারের ব্যবস্থা করব। ক্যাম্পাসে যেন আমাদের বোনেরা ২৪ ঘণ্টা নিরাপদে বিচরণ করতে পারে, কেউ যেন কোথাও হেনস্তার শিকার না হয়—এমন একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলব,' বলেন ফাহিম রেজা।
তিনি বলেন, 'আরেকটা বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবো, সেটা হলো—জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা—শিক্ষকদের, প্রশাসনের এবং রাকসুতে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের। এজন্য আমরা নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যক্রমকে জবাবদিহির আওতায় আনব। আর রাকসু প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের মূল্যায়নের জন্য ইশতেহারের কোন কার্যক্রমটা চলমান, কোনটা শেষ হয়েছে—শিক্ষার্থীরা যেন তা সবসময় পর্যবেক্ষণ করতে পারে তার একটা স্বচ্ছ ব্যবস্থা থাকবে।'
জয়ের ক্ষেত্রে কতটা আশাবাদী? এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রার্থী বলেন, 'ডাকসু ও জাকসুতে ছাত্রশিবিরের জয়ের পর রাকসুর ক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো, আমাদের কথা তাদের জানানো। শিক্ষার্থীরা তাদের বিবেচনাবোধ কাজে লাগিয়ে ভোট দেবেন এবং আশা রাখি তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখলে আমরা সুন্দর একটা ক্যাম্পাস নির্মাণের পথে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে দিতে পারব।'
নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, 'রাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস যথেষ্ট হলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা গোষ্ঠী শুরু থেকেই রাকসুর বিরোধিতা করে আসছে। আমাদের শিক্ষকদের একটি অংশ মীমাংসিত ইস্যু সামনে এনে রাকসুকে জিম্মি করছে। আমরা এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করছি এবং আমরা শিক্ষার্থীরা এটাকে মোকাবিলা করব। কেউ রাকসু নির্বাচন আটকাতে পারবে না।'

Comments