ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ১২ অনিয়মের অভিযোগ ছাত্র ইউনিয়নের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে 'অগণতান্ত্রিক, অনিয়মে পূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ' হিসেবে আখ্যা দিয়ে ১২টি অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ)।
এসব অভিযোগের প্রমাণ প্রকাশ না করলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
আজ বৃহস্পতিবার মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমাল্লার বসু বলেন, 'ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতার জন্য অন্যান্য প্যানেলও দাবি জানাচ্ছে। আমরা তাদের সঙ্গে সংহতি জানাই। প্রয়োজনে আদালতে যাব এবং ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করব।'
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ ক্রমশই অগণতান্ত্রিক, অনিয়মে পূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হওয়ার পথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ ও ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন বিধিমালা ২০২৫ অনুযায়ী বারবার অনিয়ম ও অসংগতি সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করেছে।'
সংগঠনটির দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে নির্বাচনে ৩২ হাজার ভোট পড়েছে, তবে বাস্তবে এত ভোট পড়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে মেঘমাল্লার বসু প্রশ্ন তোলেন, 'যেহেতু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন প্রশাসন এই তথ্য প্রকাশ করছে না?'
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য—ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা প্রকাশ করা যাবে না, কারণ এতে ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে মেঘমল্লার বলেন, 'ভোটারের উপস্থিতির তালিকায় শুধু ভোটারের স্বাক্ষর থাকে। একজন ভোটার ভোট দিতে এলে সেটা গোপন কিছু নয়… এখন কি ভোটারও গুপ্ত?'
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ছাত্রদল, বাগছাসসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরাও নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম ও অসংগতির অভিযোগ জানিয়ে আসছে। তারা ভোটারদের উপস্থিতির তালিকা, সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন প্রমাণ প্রকাশের দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে।
যে ১২ অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ
১. টিএসসিসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছাড়াই ভোটার তালিকায় স্বাক্ষর দেওয়া এবং নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ব্যালট সরবরাহ করা হয়েছে।
২. ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের আবেদন করা হলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
৩. ব্যবহৃত ব্যালটে কোনো ক্রমিক নম্বর ছিল না; ছাপানো, সরবরাহকৃত, বাতিল ও ফেরত ব্যালটের হিসাব প্রকাশ করা হয়নি।
৪. ব্যালট কোথায় ছাপানো হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি; নকল ব্যালট ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে।
৫. নীলক্ষেতে একটি ছাপাখানায় বিপুলসংখ্যক অরক্ষিত ব্যালট পেপার উদ্ধার হলেও প্রশাসনের তদারকি ছিল না।
৬. ওএমআর মেশিনে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে; এক প্রার্থীর ভোট সফটওয়্যারে অন্য প্রার্থীকে প্রদর্শিত হয়েছে।
৭. ভোট গণনা-পরবর্তী সফটওয়্যার পরীক্ষায় ভোটার ও প্রার্থীদের উপস্থিত রাখা হয়নি।
৮. ভোটের আগের রাতে এজেন্ট তালিকা প্রকাশ করে অনেক প্রার্থীর প্রস্তাবিত এজেন্ট বাদ দেওয়া হয়।
৯. ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করা হয়নি; একই ব্যক্তি একাধিকবার ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
১০. ভোট গণনায় গড়িমসি, নির্দিষ্ট প্রার্থীর অবৈধ উপস্থিতি ও পোলিং এজেন্টদের দূরে রাখা হয়েছে।
১১. পোলিং অফিসার নিয়োগে অস্পষ্টতা ছিল; প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসাররা ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রভাবিত করেছেন।
১২. অস্বচ্ছ ব্যালট বক্স ব্যবহার, মার্কার সংকট ও বলপেন দিয়ে ভোট গ্রহণের কারণে বহু ভোট গণনায় বাদ পড়েছে।
Comments