পটুয়াখালী

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ২০৭ স্কুল-কলেজে সংস্কারের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

পটুয়াখালী সদর উপজেলার চালিতাবুনিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টিনশেডের ঘরটি ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে পড়ে আছে। ছবি: স্টার

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে পটুয়াখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসাসহ ২০৭ প্রতিষ্ঠান দেড় মাসেও সংস্কার বা মেরামত হয়নি। সহায়তার অভাবে বেসরকারি পর্যায়ের এসব প্রতিষ্ঠান এখনো দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে। 

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত বা সংস্কারে প্রায় ১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠালেও, এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সহায়তা না আসায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

চলতি বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে পটুয়াখালীসহ দেশের উপকূল দিয়ে বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল। প্রবল বাতাসের সঙ্গে ভারী বর্ষণে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে যায়। 

এতে পটুয়াখালীর ৮৪ হাজার ৫০০ পরিবারের ৩ লাখ ৩৮ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছয় হাজার ৮২ বাড়িঘর সম্পূর্ণ এবং ৩১ হাজার ৩৬৪টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি জেলায় ২০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

স্কুলঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাশের সাইক্লোন শেল্টারে ক্লাস করছে পটুয়াখালী সদর উপজেলার চালিতাবুনিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

এর মধ্যে কলাপাড়ায় ৪৯টি, গলাচিপায় ৪২টি, সদর উপজেলায় ৩৪টি, দশমিনায় ২৯টি, বাউফলে ২২টি, মির্জাগঞ্জে ১৬টি, দুমকিতে ৮টি ও রাঙ্গাবালীতে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে পটুয়াখালী সদর উপজেলার চালিতাবুনিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডের স্কুলঘরটি ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে পড়ে আছে। ১৯৮৪ সালে স্থাপিত এ বিদ্যালয়টিতে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। 

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক সুবল চন্দ্র শীল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ে স্কুলঘরটি বিধ্বস্ত হলে সপ্তাহখানেক শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এ কারণে পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়—কাম—সাইক্লোন শেল্টারের নিচতলায় চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ বসিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। স্কুলঘর মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে দরখাস্ত দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ আসেনি।'

কলাপাড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেনহাজপুর হাক্কানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এর প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফউজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রবল বাতাসে দুমড়ে-মুচড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাভাবে সংস্কার করতে পারছি না। এতে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখানে ২৫০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। মেরামতের জন্য উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।'

জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, 'কলাপাড়া উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৪টি কলেজ, ১২টি স্কুল ও ২৫টি মাদরাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলায় প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।'

যোগাযোগ করা হলে জেলা শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমান বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ৩০ মে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কারে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন।'

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

1h ago