শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষকতার মানসিক দিক

শিক্ষকতা

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে একটি সম্মানজনক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা। প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষে গিয়ে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার এই দায়িত্ব যেমন আনন্দের, তেমনি তা এক ধরনের চাপও সৃষ্টি করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় গবেষণার চাপ, উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি, প্রশাসনিক কাজ, সভা-সেমিনার এবং নানা প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা। সব মিলিয়ে একজন শিক্ষক সারাক্ষণ এক মানসিক ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন, যার প্রভাব পড়ে ব্যক্তিগত জীবনে, এমনকি মনোজগতেও।

একজন শিক্ষক হিসেবে এই বহুমুখী দায়িত্ব পালনের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে একটি প্রশ্ন বারবার সামনে আসে, আমি কি নিজের জন্যও সময় করতে পারছি? আমার নিজের পড়াশোনা, কোনো পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে একটু নির্ভার হয়ে গল্প করার সময় কি পাচ্ছি? দাপ্তরিক কাজ শেষেও বাসায় ফিরে আমাকে সার্বক্ষণিক চিন্তা করতে হয়, এরপর কী কাজ বাকি রইল? শিক্ষার্থী ফোন দিয়েছে, তার সমস্যাগুলো শুনে কথা বলা! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা, সময়ের অভাব, ব্যক্তিগত জীবনের চাপে অনেক সময় নিজের মানসিক অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা হয় না। সহকর্মীদের সবার সঙ্গে সম্পর্কও এক রকম থাকে না। কারও সঙ্গে পেশাগত বোঝাপড়া ভালো হলেও, কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব বা মনোমালিন্য তৈরি হতে পারে। এসব পরিস্থিতি একজন শিক্ষককে মানসিকভাবে বিচলিত করতে পারে, এমনকি পেশাগত আত্মবিশ্বাসেও আঘাত হানতে পারে।

গবেষণার চাপ, প্রকাশনার প্রতিযোগিতা, ফান্ডিংয়ের সমস্যা, এসব বিষয় শিক্ষককে পেশাগতভাবে উৎকর্ষ অর্জনে উদ্বুদ্ধ করলেও, কখনো কখনো এগুলো মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একইসঙ্গে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি নিয়মিত ক্লাস নেওয়া, স্ক্রিপ্ট দেখা, প্রশাসনিক বৈঠকে অংশ নেওয়ার কারণে সময়ের ঘাটতি তো রয়েছেই।

এই বাস্তবতায় শিক্ষক হিসেবে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হওয়া জরুরি। সময় ভাগ করে কাজ করা, নিজের জন্য কিছুটা হলেও সময় রাখা, সহকর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ, এসব হতে পারে উপকারী পথ। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্যোগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু বাস্তবধর্মী ভূমিকা জরুরি। যেমন শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য কর্মশালা আয়োজন, কাউন্সিলিং সুবিধা চালু করা, ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স নিয়ে নীতিমালা তৈরি, প্রকাশনা বা গবেষণা-ভিত্তিক চাপকে মানবিক করে তোলা। এছাড়া প্রশাসনিক কাজের ভারসাম্য রক্ষা, তরুণ শিক্ষকদের জন্য মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপনা, এবং বিভাগগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষক যদি মানসিকভাবে সুস্থ ও সমর্থ না থাকেন, তাহলে তার কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা সর্বোত্তমটি পাবে কীভাবে? বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান উৎপাদনের জায়গা নয়, এটি একটি সহমর্মিতাপূর্ণ পরিমণ্ডলও হতে হবে। যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী সবাই নিজেকে সম্মানিত মনে করেন।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

4h ago