কেন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে এআই দিয়ে ভর্তির আবেদন লেখা ঠিক নয়

ছবি: রয়টার্স

প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা ইউরোপ, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করেন। সেই তালিকায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ আছে। সাধারণত এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনে নিজের সম্পর্কে ও শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রবন্ধ লিখতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী এজন্য এআই ব্যবহার করেন।

তবে প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী ম্যাশেবল বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন এআই দিয়ে লেখা ঠিক নয়।

ম্যাশেবল বলছে, চ্যাটজিপিটির মতো এআই চ্যাটবট দেখে অনেকে ভাবে, এই টুল দিয়ে সহজেই আইডিয়া, লেখা ও সম্পাদনা করা যায়।

কিন্তু ভর্তি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই 'সহজ পথ' আসলে বিপজ্জনক। পুরোপুরি এআইনির্ভর লেখা জমা দিলে ভর্তির তালিকা থেকে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।

মার্কিন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর কলেজ অ্যাডমিশন কাউন্সেলিংয়ের সদস্য ড. জেনিফার কার্ক বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন হলো একদম সাদা ক্যানভাস। সেই ক্যানভাসকে নিজের অনুভূতি দিয়ে রাঙাতে হয়। কিন্তু যদি পুরোপুরি এআই দিয়ে লিখে জমা দেওয়া হয়, তাহলে সেখানে নিজের বলে কিছুই থাকে না।'

তার ভাষ্য, 'এতে ভর্তি কর্মকর্তাদের কাছে নিজের ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীলতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়। কারণ এআই লেখায় তথ্যগত ভুল, অদ্ভুত বাক্যগঠন থাকে। এছাড়া তাতে এমন ভাষা থাকে, যা অনেক আবেদনকারীর লেখার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।'

কেন এআই দিয়ে ভর্তির আবেদন লেখা উচিত নয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীরা সাধারণত খুব কমন আবেদন লেখেন। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ও প্রশ্ন থাকে। সেখান থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়। তার উত্তর সর্বোচ্চ ৬৫০ শব্দের মধ্যে লিখতে হয়।

সাধারণত নিজের প্রতিভা, অভিজ্ঞতা, বা প্রিয় কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে বলা হয়।

এছাড়াও অনেক সময় আলাদা একটি প্রবন্ধ লিখতে হয়। যেখানে একজন শিক্ষার্থী তার জীবনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে লেখেন। যেমন দেশ, পারিবারিক দায়িত্ব, যুদ্ধ বা সামাজিক অস্থিরতা ইত্যাদি।

ম্যাশেবলের আর্টিকেলে বলা হয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আবার অতিরিক্ত প্রবন্ধ চায়। যেমন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে চারটি ছোট প্রশ্নের উত্তর চায়। আবার হার্ভার্ড পাঁচটি প্রশ্নে প্রতিটিতে ১৫০ শব্দের উত্তর চায়।

এসব প্রবন্ধের চাপ সামলাতে গিয়ে অনেকেই ভাবে, 'একটা এআই টুল দিয়ে লিখে ফেললে হয় না?'

কিন্তু ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কর্মকর্তা কনি লিভিংস্টন বলেন, 'যে লেখাতে আবেদনকারীর নিজস্বতা, সৃজনশীলতা থাকে সেটা অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়। ওই শিক্ষার্থী বোঝাতে পারেন, তার শেখার মানসিকতা ঠিক কতটা। কিন্তু এআই সেটা কখনোই পারে না।'

লিভিংস্টন বর্তমানে কলেজ কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি নিজের তথ্য বা অভিজ্ঞতা দিয়ে এআইকে 'নিজের মতো' লেখাতে চায়। তাহলে সেটা গোপনীয়তার দিক থেকেও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কিছু মডেল সেই তথ্য ইন্টারনেটে ফাঁস করতে পারে।

আরেকটি বড় সত্য হলো, এআই ব্যবহারের কিছু বিষয় লুকানো প্রায় অসম্ভব।

ড. জেনিফার কার্কের মতে, ভর্তি কর্মকর্তারা বাক্যগঠন, বিরামচিহ্ন, শব্দচয়ন ইত্যাদি দেখে বুঝতে পারেন এআই দিয়ে লেখা কি না। আর যদি লেখাটি নিস্তেজ, প্রাণহীন বা একঘেয়ে হয়, তাহলে সন্দেহ আরও বাড়ে।

অনেক সময় দেখা যায়, একই প্রশ্ন হাজারো আবেদনকারী একই এআই টুল ব্যবহার করে। এতে তাদের উত্তর পড়তে প্রায় একরকম লাগে।

কখন এআই ব্যবহার করা যেতে পারে

কার্ক বলেন ভর্তির আবেদন লিখতে এআই ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে তিনি মনে করেন, লেখার প্রস্তুতির বা ধরণ জানতে কিছু ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সহায়ক হতে পারে।

প্রথমে জানতে হবে, যেখানে আবেদন করছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয় এআই ব্যবহারের অনুমতি দেয় কি না। নিয়ম জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কনি লিভিংস্টন বলেন, সেটা জানা হয়ে গেলে গবেষণা, ব্রেইনস্টর্মিং, আউটলাইন তৈরি, খসড়া সংশোধন বা প্রুফরিডিংয়ের জন্য এআই ব্যবহার করা যেতে পারে।

লিভিংস্টন বলেন, এআই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক তথ্য জানা যেতে পারে। এতে গবেষণার সময় বাঁচবে। যেমন কোনো একটি বিভাগের প্রখ্যাত অধ্যাপক কারা বা ওই বিভাগে কী বিষয়ে গবেষণা হয়, এসব তথ্য এআই থেকে পাওয়া যায়।

তবে তিনি সতর্ক করে দেন, এআইয়ের তথ্য অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। কারণ 'এআই প্রায়ই ভুল করে।'

কার্ক বলেন, 'এআইকে বিষয়বস্তু বা ধারণা বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া ঠিক না। এতে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায়। তাই আগে নিজেকে ভাবতে হবে।'

তার ভাষ্য, 'ব্রেইনস্টর্মিংয়ের জন্য এআই ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু মূল ভাবনা অবশ্যই শিক্ষার্থীর নিজের হওয়া উচিত।'

এছাড়া কার্ক জানান, চাইলে দুইটি আলাদা খসড়া এআইকে দিয়ে মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। এভাবে বাক্য গঠন বা সংযোজন ঠিক করা যেতে পারে। তবে লেখাকে চমকপ্রদ বানাতে এআই ব্যবহার করা যাবে না। এতে মৌলিকত্ব হারিয়ে যাবে।

তিনি মনে করেন, ভর্তি কর্মকর্তারা খুব সহজেই এআই ভাষা বুঝতে পারেন। কারণ তারা প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের আবেদন নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ।

কনি লিভিংস্টন বলেন, 'এআই কখনো একজন শিক্ষার্থীকে কখনো স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শর্টকাট রাস্তা দিতে পারবে না।'

'হ্যাঁ, এআই একটা ভালো প্রবন্ধ লিখতে পারে। কিন্তু শুধু ভালো প্রবন্ধ দিয়ে কেউ ভর্তি হয় না। ভর্তি হয় সেই শিক্ষার্থী, যার প্রবন্ধ 'অসাধারণ'। যে লেখাতে নিজস্বতা ও সৃজনশীলতা থাকে।'

Comments

The Daily Star  | English

Airport fire exposes costly state negligence

The blaze that gutted the uninsured cargo complex of Dhaka airport on Saturday has laid bare a deep and dangerous negligence in risk management across government installations.

5h ago