আগাম বন্যায় চলনবিলে বোরো ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

চলনবিলের বেশিরভাগ নিচু এলাকায় আগাম বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: স্টার

উজানের পানিতে আগাম বন্যায় উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম ফসল ভাণ্ডার চলনবিলে বোরোর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানিতে ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় সময়মতো ফসল তুলতে না পারায় লোকসানের মুখে পড়েছে কৃষক।

চলনবিল অধ্যুষিত পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলনবিলের বেশিরভাগ নিচু এলাকায় আগাম বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শ্রমিক সংকটে ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক। এদিকে জলাবদ্ধ জমিতে আশানুরূপ ফলন না পেলেও, এসব জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষকদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।

জানা যায়, ধান পাকতে শুরু করার পর পরই বিলের জমিতে পানি আসতে শুরু করে। মে মাসের ২০ তারিখের মধ্যে পুরো বিলের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়।

বিল থেকে ধান কেটে ফিরছেন কৃষক। ছবি: স্টার

চলনবিলের মধ্যবর্তী পাবনার চাটমোহর উপজেলার খলসেগাড়ী বিলের কৃষক আয়ুব আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর বিলের ৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। আশা ছিল বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২২ মণ ফসল পাওয়া যাবে। কিন্তু আগাম বন্যায় সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে।'

তিনি জানান, গত সপ্তাহে ২ বিঘা জমির ফসল কোনোরকম কেটে ঘরে তুললেও, উৎপাদন কম পাওয়ায় ফসল কাটার খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

আয়ুব বলেন, 'জলাবদ্ধ জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলে আনতে দ্বিগুণ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে শ্রমিক সংকটে অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও চাহিদা মতো শ্রমিক না পেয়ে সময়মতো পুরো ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারিনি।'

ছবি: স্টার

আফ্রাদহ বিলের কৃষক আরমান হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিলের জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। জমিতেই নষ্ট হচ্ছে বেশিরভাগ ধান। জলাবদ্ধ জমিতে ভেজা ধান থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।'

তিনি বলেন, 'ধান কাটা শ্রমিকদের মজুরি ৭০০ টাকা হলেও জলাবদ্ধ জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে শ্রমিকদের পেছনে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে ফসল কেটে এনে শুকিয়ে মাড়াই করতে উৎপাদিত ধান থেকে খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।'

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর পাবনায় ৫৫ হাজার ৩৮৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আগাম বন্যার পানিতে নিচু এলাকায় ফসলের জমিতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক অঞ্চলেই ফলন বিপর্যয় হয়েছে।'

ইদ্রিস আলি বলেন, 'ইতোমধ্যে ৪১ হাজার ৩৮ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে এবং এবং হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।'

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আহসান শহিদ সরকার বলেন, সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ৮৫ শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে এবং ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১ থেকে ৪ দশমিক ৬ মেট্রিক টন।

সিরাজগঞ্জের চলনবিলের মধ্যবর্তী তাড়াশ উপজেলার ধানের ফলন আরও কম হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, আগাম বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ফলন হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯ মেট্রিক টন।

এদিকে চলনবিলের বৃহত্তম অঞ্চল নাটোরে ফসলের উৎপাদন অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ভালো হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে বলে জেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. ইয়াসিন আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাটোরের ৭ উপজেলার মধ্যে ৪টি চলনবিলের অন্তর্গত। নাটোরে আগাম ফসল আবাদ হওয়ায় ফলন ভালো হলেও, আগাম বন্যার পানি আসায় উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে।'

জেলায় এ বছর ৬০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে এবং ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ৬ মেট্রিক টন।

তবে এখনো চলনবিলের এই তিন জেলার সব জমি থেকে ধান কাটা শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। পুরো ফসল কাটা শেষ হলে ফলনের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।

প্রাপ্ত ফসল কর্তন রিপোর্ট অনুযায়ী এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসলের উৎপাদন না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। 

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলনবিল অঞ্চলে জুনের মাঝামাঝিতে বন্যা আঘাত হানে। তবে সিলেট অঞ্চলে আগাম বন্যার প্রভাবে উজানের পানিতে এ বছর মে মাসের মাঝামাঝিতেই তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ চলনবিল অঞ্চলসহ নিচু এলাকার ফসলের জমি। এতে সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে না পারায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Water lily tug-of-war continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June..Despite several exchanges of letters and multiple meetings between NCP and the chief election commissioner, other

1h ago