তিস্তা-দুধকুমারপাড়ে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি

নাগেশ্বরীতে চর নারায়নপুরে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়

তিস্তা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে নতুন সংকটে পড়েছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, ফসলের খেতে বালুর আস্তরণ এবং গবাদিপশুর খাদ্যসংকট তাদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বন্যার পানিতে ভেসে আসা বালু কৃষিজমিতে পুরু স্তর তৈরি করেছে। এতে আমন ধানের বড় ক্ষতি না হলেও সবজিখেত নষ্ট হয়েছে। অনেক কৃষকের ঘরবাড়ি, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু ভেসে গেছে। কারও কারও বাড়ির উঠানে মাটি দেবে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চরইচলি গ্রামের কৃষক সোলেমান আলী (৬০) বলেন, 'আমার একটি ছাগল আর কয়েকটি হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে গেছে। বাড়ি ফিরে তিনটি গরু আর ছয়টি ছাগল নিয়ে বিপদে পড়েছি। চারপাশের সব ঘাস মরে যাওয়ায় পশুর খাবার পাচ্ছি না।'

একই অবস্থা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর ডাউয়াবাড়ীর সুকচান বেওয়ার (৬৫)। তিনি বলেন, 'বানের পানিতে ঘরের বেড়া-দরজা ভাইসা গেছে। উঠানে বিরাট গর্ত। টাকার অভাবে ঘর মেরামত করতে পারছি না। বন্যা কমলেও দুর্ভোগ কমেনি।'

গঙ্গাচড়ার মহিপুরে ফসলের জমিতে বালুর স্তর। ছবি: এস দিলীপ রায়

গঙ্গাচড়ার মহিপুর গ্রামের কৃষক আবদার আলী (৬৫) জানান, তার পাঁচ বিঘা আমন ও এক বিঘা সবজিখেত চার দিন পানির নিচে ছিল। তিনি বলেন, 'আমনের তেমন ক্ষতি হয়নি, কিন্তু সবজি বলতে কিছু নেই। বাড়ির পানি নামলেও খেত এখনো ডুবে আছে।'

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান গ্রামের কৃষক মোবারক আলী (৬৮) জানান, তার নয় বিঘা জমির মধ্যে এক বিঘায় বালুর স্তর পড়েছে। এই বালু না সরালে সেখানে আর আবাদ হবে না। চার বিঘা জমিতে নতুন পলি পড়েছে, আশা করি সেখানে বাম্পার ফলন হবে।'

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চর নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক মহেশ চন্দ্র দাসের (৬৬) ছয় বিঘা আমন ও এক বিঘা সবজিখেত তিন দিন পানিতে ডুবে ছিল। তিনি বলেন, 'আমন বেঁচে গেলেও অর্ধেক সবজি নষ্ট হয়েছে। তবে পলি পড়ায় এবার ফসল ভালো হওয়ার আশা আছে।'

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'এবারের বন্যায় আমনের তেমন ক্ষতি হয়নি, বরং জমিতে পলি জমায় কৃষকেরা লাভবান হবেন। কিছু সবজির ক্ষতি হলেও তার পরিমাণ কম। জমিতে বালুর স্তূপ পড়লেও তার নিচে পলি আছে। বালু সরালে জমি আবাদযোগ্য হবে।'

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার থেকে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Jucsu polls: Frustration as counting drags on

More than a day after voting ended in the long-awaited Jahangirnagar University Central Students’ Union election, the authorities were still struggling to complete the vote count, triggering mounting anger and suspicion.

3h ago