‘বান হইলেও কষ্ট, পানি নামি গেইলেও কষ্ট’

লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বেড়ে বন্যায় ভোগান্তি। ছবি: এস দিলীপ রায়

তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরের চার জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও নীলফামারীর তিস্তাপাড়ের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। 

বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সরকারি রাস্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধসহ নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন বাড়িতে ফিরেছেন। 

তবে বন্যাদুর্গতদের কষ্ট কমেনি। অনেকের বাড়িতে এখনো বন্যার পানি থাকায় তারা বাঁধের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করছেন।  

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হরিণচড়া এলাকার ৬৫ বছর বয়সী বানভাসি আকলিমা বেওয়া বলছিলেন, 'কষ্টের শ্যাষ নাই। বান হইলেও কষ্ট আর বানের পানি নামি গেইলেও কষ্ট। বাড়ি থাকি বানের পানি নামি গেইছে। এ্যালাং হামার কষ্ট আছে। ঘরোত খাবার নাই।' 

'বানের পানি নামি গেইল, এ্যালা ফির শুরু হইবে নদী ভাঙন। যেইকনা জমি আছে, তাকো নদীত ভাঙি যাইবে। বাস্তুভিটাও ভাঙি যাই,' তিনি বলেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৭০ মিটার, যা বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচে। আর কাউনিয়া পয়েন্টে ২৯ দশমিক ১৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে। 

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, তিস্তার পানি বিপৎসীমসার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসাও বন্ধ রয়েছে। আপাতত তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

'চর ও নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া লোকজন বাড়িতে ফিরছেন,' তিনি বলেন।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চর বগুড়াপাড়া এলাকার বানভাসি কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালে তার বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তারা বাড়িতে ফিরেছেন। সবজিক্ষেতের সামান্য ক্ষতি হয়েছে, তবে আমন ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। 

'বৃষ্টি আর উজান তেকে পানি আসলেই তিস্তায় পানি বেড়ে যায়। তিস্তাপাড়ে বন্যা অইয়ে আমাদের দুর্ভোগে ফেলে দেয়। বন্যার পানি নামার পর শুরু হয় নদীভাঙন,' তিনি বলেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি গ্রামের বানভাসি শাহিনা বেগম জানান, তাদের ঘরে এখনো বন্যার পানি থাকায় তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুঁপড়িতে বসবাস করছেন। রোববার রাতে তারা গবাদি পশু ও আসবাবপত্র নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নেন। 

বন্যার পানিতে আশপাশের ঘাসের জমিগুলো তলিয়ে রয়েছে। এ কারণে গবাদিপশুরু খাদ্য যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। 'তিস্তাপাড়ে খুব কষ্ট হয়। এটে হামার জন্ম। তিস্তাপাড় ছাড়ি এ্যালা কোনটে যাই,' তিনি বলেন।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর এলাকার বানভাসি কৃষক আক্কাস আলী জানান, বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় তাদের ফসল রক্ষা পেয়েছে। তবে সবজি খেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কিছু ফসলি জমিতে বালুর স্তুর জমেছে। এসব জমিতে ফসল ফলানো কষ্টকর হবে। গ্রামের সবগুলো ঘাসের জমি এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে এ কারণে গোখাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। 

'বানের পানিত লড়াই করি হামাকগুলাক বাঁচা নাগে। বানের পানি নামি যাবার নাইকছে। ফির দেখা দিবে নদীর ভাঙন,' তিনি বলেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি কমায় তিস্তাপাড়ের কিছু স্থানে নদীভাঙন দেখা দিতে পারে। ঝুঁকিপুর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি করা হচ্ছে। ভাঙন দেখা দিলে তাৎক্ষণিক বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, তিস্তাপাড়ের বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় কারো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পেলে, পুনর্বাসনে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। 
    

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

3h ago