যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে বিপাকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা

আগামী ৯ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আদেশ। তবে অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকরের পর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ঠিক কী পরিমাণ শুল্ক আরোপের মুখোমুখি হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এখনো জানেন না, নতুন শুল্ক হার বর্তমান শুল্কের সঙ্গে যোগ করা হবে নাকি প্রতিস্থাপন করা হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে ওই আদেশে পণ্যভিত্তিক শুল্ক হারের তালিকা বা কাস্টমস গাইডেন্স দেওয়া হয়নি। এতে বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান শুল্কের বাইরে যদি ৩৭ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হয়, তাহলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশের পোশাকের ওপর কার্যকর শুল্ক বর্তমান গড় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়াবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে ১০০ ডলারের টি-শার্ট বা জিন্সের চালানে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে আমদানি শুল্ক বাবদ প্রায় ৪৯ ডলার দিতে হবে, যা বর্তমানে মাত্র ১১ দশমিক ৫৬ ডলার।

দেশের অন্যতম বৃহৎ ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, 'আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ ট্রাম্পের আদেশে পরিষ্কারভাবে এটিকে 'অতিরিক্ত' শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৯ এপ্রিলের আগে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না।'

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আদেশের দ্বারা নির্ধারিত শুল্কের হারগুলো প্রযোজ্য অন্য কোনো শুল্ক, ফি, কর বা চার্জের অতিরিক্ত। তবে তারা দেশ বা পণ্য অনুসারে আর কিছু জানায়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমরা এখনো পরিষ্কার নই। এটি ৩৭ শতাংশ হতে পারে, কিংবা যদি বর্তমান মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) হারের সঙ্গে যোগ করা হয় তাহলে ৫২ শতাংশেরও বেশি হতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য ইতোমধ্যে অনেক পণ্যে ১৫ শতাংশের ওপরে আছে।'

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির জানান, তার প্রতিষ্ঠান এখনো ক্রেতাদের কাছ থেকে হালনাগাদ ট্যারিফের তথ্য পায়নি।

'তবে বিভিন্ন সূত্র পরামর্শ দিয়েছে, বর্তমান হারকে প্রতিস্থাপন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, অথবা বর্তমান হারের সঙ্গে যোগ হতে পারে।'

উচ্চ হারের সংকেত দিয়েছে ব্র্যান্ড

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রশাসক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি পোশাক ব্র্যান্ড ইতোমধ্যে জানিয়েছে, বাংলাদেশে নতুন শুল্ক ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হতে পারে।'

'সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই আমরা কৌশল প্রণয়ন করছি। আর নির্বাহী আদেশে স্পষ্টভাবে এটাকে বাড়তি শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, শুল্ক সমন্বয় হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এর মূলে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বৃহত্তর উদ্বেগ।

তার ভাষ্য, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য অর্থনীতি, যা আমদানির ওপর নির্ভর করে। এই পদক্ষেপ শুধু শুল্কের জন্য নয়, বরং তারা বাণিজ্য প্রবাহকে ওয়াশিংটনের অনুকূলে নিতে চায়।'

যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিটি অন্যান্য শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বৈশ্বিক সোর্সিং কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তার একটি ধারণা দিয়েছেন।

চীনের পোশাকের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যেখানে ভিয়েতনামের শুল্ক ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। ভারতের ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ ও পাকিস্তানের ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বাজারের ৯ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। এছাড়া বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ২৪ শতাংশই হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৪ সালে দেশটিতে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এতে চীন ও ভিয়েতনামের পরে তৃতীয় পোশাক সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ খাতে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন এবং বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি তৈরি পোশাক।

রপ্তানিকারক এবং নীতিনির্ধারকরা একমত যে, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, 'আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো অবস্থান রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশগুলো যদি শুল্ক হার কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরা দ্রুত বাজার হারাব।'

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং রপ্তানিকারকরা অবিলম্বে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, 'অন্যান্য দেশ এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। আমাদেরও একই কাজ করতে হবে এবং তা দ্রুত করতে হবে। এখনও একটি কার্যকর ফলাফল খুঁজে বের করার সুযোগ আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
government

Govt to act with people’s backing if blocked from responsibilities: Advisory council

"The Advisory Council believes that a broader unity is essential to maintain national stability"

24m ago