নতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোস্টাল পার্সেল স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্রে ছোট প্যাকেজের ওপর কর অব্যাহতি তুলে দেওয়ার পর শুল্কসংক্রান্ত জটিলতায় বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো বন্ধ রেখেছে।
২৮ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো বন্ধ আছে। ওই দিনই শেষ হয় মার্কিন কর্তৃপক্ষের দেওয়া করমুক্ত সুবিধা, যা ১৯৩৮ সালে 'ডি মিনিমিস' নিয়মে ছোট প্যাকেজের ক্ষেত্রে চালু ছিল।
২৯ আগস্ট থেকে ৮০০ ডলারের কম মূল্যের আমদানিকৃত পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ ও কাস্টমসের কড়াকড়ি শুরু হয়।
কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ায় খরচ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় হাজারো ছোট ব্যবসায়ী ও পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে প্যাকেজ পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছে, বলে এএফপি ও বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোরন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে অনলাইন বিক্রেতা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যারা প্রবাসী বাজারগুলোতে পৌঁছানোর জন্য ডাক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কাছে যারা পণ্য পাঠায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঢাকার মিরপুর এলাকার একটি অনলাইন ক্রাফট হাউস 'ফিনারি'র মালিক ড চিং বলেন, 'এই মাসের প্রথম দিন থেকে আমি যত পার্সেল পাঠানোর চেষ্টা করেছি, তার কোনোটিই পাঠাতে পারিনি। তারা আমাকে বারবার বলছে যে যুক্তরাষ্ট্রের পার্সেল আর গ্রহণ করা হচ্ছে না।'
এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার গ্রাহকদের কাছে হাতে তৈরি পণ্য নিয়মিত পাঠাতেন।
বাংলাদেশ একা নয়। এএফপি জানিয়েছে, করছাড় শেষ হওয়ায় ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) জানিয়েছে, ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাপী পোস্টাল পার্সেল ট্র্যাফিক এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৮১ শতাংশ কমে গেছে।
বাংলাদেশসহ কমপক্ষে ৮৮টি দেশ তাদের পরিষেবা স্থগিত করেছে অথবা বড় পরিসরে কমিয়ে দিয়েছে।
ঢাকা কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন শুল্ক ব্যবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পার্সেল পাঠানো হয়, তবে ডাক কর্মকর্তারা এর সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেননি।
ঢাকা জিপিওর (জেনারেল পোস্ট অফিস) একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি পার্সেল বিদেশে পাঠানো হয়, যার এক-তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্রে যায়।
পরিদর্শনের সময় জিপিওর আন্তর্জাতিক পার্সেল প্যাকেজিং বিভাগের লাইনে কাউকে দেখা যায়নি। একজন কর্মকর্তা ভিড় কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো স্থগিতের কথা বলেন, তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী তারেক আজিজ বলেন, 'বিদেশে থাকা গ্রাহকদের কাছে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ পাঠাতে না পারায় তাকে বেশ কিছু অর্ডার বাতিল করতে হয়েছে। তিনি বলেন, 'বেসরকারি কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাতে প্রায় তিনগুণ বেশি খরচ হয়। এই হারে ব্যবসা চালানো তো দূরের কথা, টিকে থাকাই কঠিন।'
পরিবারের সদস্য যারা দেশের বাইরে থাকেন তারাও সংকটে পড়েছেন। রাজধানীর পান্থপথ এলাকার বাসিন্দা প্রলয় কুমার দের ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন। তিনি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ছেলের জন্য শীতের পোশাক, শুকনো খাবার এবং বই পাঠাতেন। তিনি বলেন, 'বেসরকারি কুরিয়ারগুলো এত ব্যয়বহুল যে তা আমার সামর্থ্যের বাইরে। পোস্টাল সার্ভিসই আমাদের জন্য একমাত্র সাশ্রয়ী বিকল্প ছিল।'
ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ডাক পরিষেবা) পারভীন বানু বলেন, 'আমরা মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি, আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। এরপর আমরা আবার পার্সেল সার্ভিস চালু করতে পারব।'
এদিকে, জিপিওর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠানো বন্ধ থাকলেও ডিএইচএল এবং ফেডেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলো অনেক বেশি খরচে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিয়মিত জিপিও গ্রাহক দীপঙ্কর রায় বলেন, দুই কেজি পার্সেল আগে জিপিওর মাধ্যমে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় পাঠানো যেত, এখন বেসরকারি কুরিয়ারের মাধ্যমে তা পাঠাতে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি বলেন, 'এর ফলে আমরা খুব কম পার্সেল পাঠাতে পারছি।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ফেডেক্স কর্মকর্তা বলেন, 'যদি কোনো পার্সেলের মূল্য ১০০ ডলারের নিচে হয়, তবে গ্রাহকদের নতুন শুল্ক দিতে হয় না। কিন্তু এর বেশি হলে ৩০ শতাংশ কর প্রযোজ্য হয়। সামগ্রিকভাবে পণ্য পাঠানোর পরিমাণ কমেছে। তবে, ব্যক্তিগত পার্সেল পাঠানোতে কোনো বাধা নেই।'
ডিএইচএলের একজন কর্মকর্তা যোগ করেন, 'গ্রাহকদের এখন আগের চেয়ে সব চালানে বেশি কর দিতে হচ্ছে। ফলে পার্সেল পাঠানোর হার কমে গেছে।'
Comments