সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় আইএসআইএলের (আইএস) লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সিরিয়ার পালমিরা শহরে এক সপ্তাহ আগে দুই মার্কিন সেনা ও এক দোভাষী নিহত হওয়ার ঘটনার পর এই হামলা চালানো হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় নর্থ ক্যারোলাইনার রকি মাউন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, 'গত সপ্তাহে আমাদের তিনজন মহান দেশপ্রেমিককে যারা হত্যা করেছে, সেই সন্ত্রাসীদের ওপর ব্যাপক হামলার নির্দেশ দিয়েছিলাম।'
'এই অভিযান অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা প্রতিটি লক্ষ্য নিখুঁতভাবে আঘাত করেছি। আমাদের শক্তি দিয়ে সারা বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনছি।'
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমান বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, পূর্ব সিরিয়ার দেইর আজ জোর প্রদেশে অন্তত ৫ জন আইএসআইএল সদস্য নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ওই এলাকায় ড্রোন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা একটি দলের নেতাও রয়েছে।
সিরিয়ার নিরাপত্তা সূত্রের একজন এএফপিকে জানিয়েছেন, মার্কিন হামলাগুলো সিরিয়ার বিস্তৃত বাদিয়া মরুভূমিতে আইএসআইএল সেলগুলোর ওপর পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে হোমস, দেইর আজ জোর ও রাক্কা প্রদেশ অন্তর্ভুক্ত। এতে কোনো স্থল অভিযান ছিল না।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ২০২৪ সালের শেষ দিকে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর গঠিত সিরিয়ার বর্তমান সরকার এই মার্কিন সামরিক অভিযানের প্রতি 'পূর্ণ সমর্থন' দিয়েছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আইএসআইএলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে জানিয়েছে, তারা 'যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে এই প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।'
শনিবার ভোরে এক্সে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, 'সিরিয়ান আরব প্রজাতন্ত্র আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে। সিরিয়ার ভূখণ্ডে এই গোষ্ঠীর কোনো নিরাপদ আশ্রয় থাকবে না।
যেখানেই হুমকি তৈরি হবে, সেখানে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করা হবে।'
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, মার্কিন বাহিনী আইএস যোদ্ধা, অবকাঠামো ও অস্ত্রভাণ্ডার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এ অভিযানের নাম—অপারেশন হকআই স্ট্রাইক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, 'এটি কোনো যুদ্ধের সূচনা নয়, এটি প্রতিশোধের ঘোষণা। আজ আমরা আমাদের শত্রুদের অনেককেই নিশ্চিহ্ন করেছি এবং আমরা এটি চালিয়ে যাব।'
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার দামেস্ক প্রতিনিধি আইমান ওঘান্না জানান, সিরিয়ার মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলাগুলো চালানো হয়। পালমিরা ও রাক্কার স্থানীয় সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, সারা রাত যুদ্ধবিমান ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, 'এই অভিযানে আইএসআইএলের অবকাঠামো ও অস্ত্র মজুদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৭০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে।'
মধ্যপ্রাচ্যে অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে, অভিযানে যুদ্ধবিমান, আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার ও আর্টিলারির সাহায্যে আইএসআইএসের অবকাঠামো ও অস্ত্রভাণ্ডার লক্ষ্য করে ১০০টিরও বেশি নির্ভুল হামলা পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানে জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীও যুদ্ধবিমান দিয়ে সহায়তা করেছে।
তবে সেন্টকমের পক্ষ থেকে আক্রমণের সুনির্দিষ্ট স্থান বা হতাহতের বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি।
আল জাজিরার প্রতিবেদক আইমান ওঘান্না জানান, এই অভিযান এমন এক সময়ে চালানো হলো যখন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নিজের এবং সিরিয়ার ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন।


Comments