কমতে কমতে ২০ টাকার নিচে আলুর দাম

বাংলাদেশ গত মৌসুমে রেকর্ড ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন করেছে। তবে দেশের চাহিদা মাত্র ৯০ লাখ টন হওয়ায় অনেক বেশি আলু উদ্বৃত্ত হয়ে গেছে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

বাজারে আলুর দাম কমতে কমতে প্রতি কেজি এখন ২০ টাকার নিচে নেমেছে। অথচ এক মাস আগে দাম ছিল ২৫ টাকা। এভাবে আলুর দাম কমায় বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন চাষিরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ঘোষিত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত না হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেমন, কোল্ড স্টোরেজে আলুর ন্যূনতম দর কেজিতে ২২ টাকা ঠিক করা হয়েছিল, আবার ৫০ হাজার টন আলু ক্রয়েরও ঘোষণা ছিল।

বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমছে বলে জানান তারা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে কেজিতে ১৮ থেকে ২৫ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা, আর এক মাস আগে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। গত বছরের একই সময় প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

গত বছরের সঙ্গে তুলনা করা হলে এ বছর দাম প্রায় ৬১ শতাংশ কমেছে।

পাইকারি বাজারেও আলুর দাম কমেছে। পাইকাররা জানান, বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১১ থেকে ১২ টাকায়।

ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'বাজারে আলুর সারবরাহ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। তাই দাম কমতে শুরু করেছে। আমার এক ট্রাক আলু দরকার, কিন্তু দোকানের সামনে দুই ট্রাক অপেক্ষা করছে।'

তাই এখন এক কেজি ১২ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে, বলেন তিনি।

অন্য পাইকার মোহাম্মদ সবুজ জানান, গত কয়েক দিন ধরে তিনি মুন্সিগঞ্জের আড়তদারদের কাছ থেকে ১১ টাকায় আলু কিনে গড়ে ১১ টাকা ৬৬ পয়সায় বিক্রি করছেন। অর্থাৎ ক্রয়মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খুব সামান্য লাভেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।

তবে বগুড়া, রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চল থেকে ১২ থেকে ১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ গত মৌসুমে রেকর্ড ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তবে দেশের চাহিদা মাত্র ৯০ লাখ টন হওয়ায় অনেক বেশি আলু উদ্বৃত্ত হয়ে গেছে।

টিউবার ক্রপ রিসার্চ সেন্টার ও বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, উৎপাদিত আলুর বেশির ভাগই সরাসরি খাওয়া হয়। প্রায় ১০ লাখ টন রাখা হয় বীজ হিসেবে, কিছু যায় চিপস-ক্র্যাকার তৈরিতে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬২ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে। তারপরও বিপুল পরিমাণ আলু কোল্ড স্টোরেজে জমে আছে।

মৌসুমের শুরুতে অনেক কৃষককে ১১ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করতে হয়েছে, যেখানে সরকারের হিসাবে গড়ে উৎপাদন খরচ ছিল কেজি ১৪ টাকা। উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য তা ছিল কেজি ২০ টাকা, অনেকের জন্য আরও বেশি।

মুন্সিগঞ্জের কৃষক আশরাফ সরকার বলেন, 'গত মাসে আমি ৯ টাকা কেজি আলু বিক্রি করেছি, অথচ উৎপাদন খরচ ছিল ৩১ টাকা।'

তিনি জানান, আর এখন আলুর দাম আরও কমছে। তাই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।

'এখনও আমার কোল্ড স্টোরেজে ১২ হাজার ৫০০ কেজি আলু মজুত আছে,' বলেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'গত মৌসুমে আমি প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৮০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করতে পেরেছি।'

কৃষকদের রক্ষায় সরকার গত ২৭ আগস্ট ঘোষণা দিয়েছিল ৫০ হাজার টন আলু কিনবে এবং কোল্ড স্টোরেজ গেটে ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো পদক্ষেপই কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, 'এখনও প্রায় ১২ লাখ টন আলু কোল্ড স্টোরেজে পড়ে আছে। বিক্রির জন্য হাতে আছে সর্বোচ্চ আড়াই মাস।'

তিনি বলেন, 'কোল্ড স্টোরেজে প্রতি কেজি আলুর দর এখন ১০ থেকে ১১ টাকা, যা সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম।'

তিনি আরও জানান, সরকার দর ঠিক করলেও এবং ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কৃষকেরা ভেবেছিল সরকার কিনবে, তাই আলু মজুত রেখেছিল। কিন্তু সরকার না কেনায় মজুত বেড়ে গেছে। এখন সময় কম থাকায় সবাই আলু বাজারে ছাড়ছে, ফলে দাম হু হু করে নামছে।

'শুধু দাম বেঁধে দিলেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যখন সরবরাহ বেশি হয়, দাম স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়,' যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে কৃষি সচিব মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়াকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।

তবে টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সাল আজাদ বলেন, সরকার এ মাসের শেষ থেকে আলু কেনা শুরু করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

1h ago