এক্সপ্লেইনার

স্বর্ণের দাম কেন বেড়েই চলেছে

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও ইতিহাস গড়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) আজ বৃহস্পতিবার থেকে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। এখন প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট স্বর্ণ কিনতে খরচ করতে হবে ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকা। এতে একদিনে দাম বাড়ল ৬ হাজার ৯০৬ টাকা।

এর আগে মাত্র দুদিন আগেই স্বর্ণের দাম বেড়েছিল। গত মঙ্গলবার স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ৩ হাজার ১৫০ টাকা বেড়ে দুই লাখের মাইলফলক ছাড়িয়েছিল। তারও দুদিন আগে রোববার স্বর্ণের দাম বেড়েছিল ২ হাজার ২২৯ টাকা। চলতি সপ্তাহে মোট চার দফা স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে জুয়েলার্স সমিতি।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্থানীয় বাজারে দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (২৮.৩৪৯৫ গ্রাম) স্বর্ণের দাম এরই মধ্যে ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। কিন্তু কেন স্বর্ণের দাম এভাবে রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙছে? এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ।

বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার সম্ভাবনা, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার হিড়িক। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, আজ স্পট গোল্ডের দাম আউন্সপ্রতি ৪,০৩৭.৯৫ ডলারে (প্রায় ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা) স্থিতিশীল ছিল।

নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে চাহিদা বৃদ্ধি

অর্থনৈতিক মন্দা, অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে স্বর্ণকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংকটকালে স্বর্ণের দাম কমে যাওয়ার বদলে উল্টো বাড়ে বা স্থিতিশীল থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে গাজা সংঘাত পর্যন্ত চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ফেডারেল রিজার্ভের ওপর তার হস্তক্ষেপের সময় স্বর্ণের দাম বেড়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ১ হাজার টনের বেশি স্বর্ণ কিনছে। অথচ ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই পরিমাণ ছিল গড়ে ৪৮১ টন। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর স্বর্ণ কেনার তালিকায় শীর্ষে ছিল পোল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, আজারবাইজান ও চীন।

টাকার অবমূল্যায়ন

বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে স্বর্ণ আমদানি না করলেও দেশের বাজার আন্তর্জাতিক প্রবণতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২১ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৪৩ শতাংশ কমেছে, যা আমদানি খরচ বাড়িয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যাগেজ রুলসের আওতায় মূলত যাত্রীদের মাধ্যমেই দেশে স্বর্ণ আসে।

চাহিদার তুলনায় জোগানের ঘাটতি

বাংলাদেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা প্রায় ২০ থেকে ৪০ টন। এর প্রায় ৮০ শতাংশই আসে অবৈধ বা অনানুষ্ঠানিক পথে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪৫.৬ টন স্বর্ণ দেশে এসেছে। তবে এরপরও বিয়ের মৌসুম ও উৎসবের সময় চাহিদা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হয় না। অভিযোগ রয়েছে, দেশে আসা স্বর্ণের একটি বড় অংশ ভারতে পাচার হয়ে যায়। এই ভারসাম্যহীনতার কারণে দেশের বাজারে সব সময়ই স্বর্ণের জোগানে সংকট থাকে। এই অবস্থায় সামনে শীতে বিয়ের মৌসুমে স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s janaza held

The namaz-e-janaza of BNP Chairperson Khaleda Zia was held at the South Plaza of the Jatiya Sangsad Bhaban today

6h ago