গুণগত মান বাড়ায় আম রপ্তানি বেড়েছে

আম, আম রপ্তানি,

চলতি বছর আমের রপ্তানি আয় বেড়েছে। মূলত বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগে উন্নত মানের আম সরবরাহ করায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বাড়ায় রপ্তানি আয় বেড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে আকাশপথে প্রায় ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ৬০০ টন আম রপ্তানি হয়েছে।

গত ২৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি মৌসুমের আম রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, 'এতদিন আম রপ্তানি মূলত বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের বাজারে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, এ বছর আমরা মূলধারার বাজারে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছি।'

সুইজারল্যান্ডের একটি সুপারমার্কেট চেইনে আমের চালান পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে সেখানে ৪৫০ কেজি আম রপ্তানি করেছি।'

বর্তমানে নিবন্ধিত আম রপ্তানিকারক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৬৬টি, তারা প্রায় ২৮টি দেশে আম পাঠায়। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ইতালিতে।

আম রপ্তানি মৌসুম শুরু হয় মে'তে এবং শেষ হয় সেপ্টেম্বরে।

আরিফুর রহমান বলেন, 'গোপাল ভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আমের চালান দিয়ে আমাদের রপ্তানি শুরু হয়। আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। এ বছর ৪ হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানি হবে বলে আশা করছি।'

তিনি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান আম উৎপাদনকারী এলাকায় ৮ হাজার ৪০০ কৃষককে আম উৎপাদন প্রযুক্তি অর্থাৎ ভালো কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৯৯০ জন আম চাষি নিয়ে কাজ করছে।

রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সনদ প্রদানকারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন উইংয়ের পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, 'চলতি বছর এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ৬০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। আগামী আগস্ট পর্যন্ত এ রপ্তানির ধারা বেশ ভালোভাবেই অব্যাহত থাকবে।'

বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মনজুরুল ইসলাম বলেন, 'ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশে গ্রীষ্মকালীন ফলের প্রচুর চাহিদা আছে। তাই গত বছরের আম রপ্তানির পরিমাণ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।'

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড লিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ রুবেল বলেন, 'গত মৌসুমে আমরা শুধু লন্ডনে আম রপ্তানি করেছি। তবে, এবার লন্ডন ছাড়া জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে আম পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা ২০ টন আম রপ্তানি করেছি। চলতি মৌসুমে ১০০ মেট্রিক টন রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।'

তিনি জানান, আগে বিদেশি ক্রেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক ধরনের ব্যবধান ছিল। কিন্তু, ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

'গত মৌসুমের তুলনায় আম রপ্তানি বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ রপ্তানি জন্য ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

হরটেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুরুল হান্নান বলেন, 'গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর মৌসুমের শুরুতে রপ্তানি বেড়েছে। এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।'

হরটেক্স একটি সরকার-স্পনসরড এজেন্সি, তারা তাজা পণ্য রপ্তানির সুবিধার্থে কাজ করে।

হান্নান বলেন, 'সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের ফলে আম রপ্তানি বেড়েছে এবং সরকার রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং তৈরি করেছি, যা উদ্যোক্তাদেরও অনেক সহায়তা করছে।'

'কিছু কৃষক রপ্তানি মানের আম চাষ করছেন। এছাড়া, এই খাতে নতুন রপ্তানিকারকের সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে,' বলেন তিনি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আম উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নবম।

বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি আমের বাজার ২০২১ সালে প্রায় ৫৭.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে, যা ২০১৬ সাল থেকে ৬.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজনেস রিসার্চ কোম্পানির মতে, আমের বাজার ২০২১ সালের ৫৭.৩৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬.৩ শতাংশ হারে বেড়ে ২০২৬ সালে ৭৭.৯৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

ACC to get power to probe corruption by Bangladeshis anywhere, foreigners in Bangladesh

The Anti-Corruption Commission (ACC) is set to receive sweeping new powers under a proposed ordinance that will allow it to investigate corruption by Bangladeshi citizens, both at home and abroad, as well as by foreign nationals residing in the country. .The draft Anti-Corruption Commissio

43m ago