খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি

সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৩৬ শতাংশ

বিবিএস

সেপ্টেম্বরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগস্টে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

মূলত খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এই ঊর্ধ্বগতির প্রধান কারণ। সেপ্টেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশে পৌঁছেছে। 

অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার কম। তখন খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। 

চলতি অর্থবছরের এ সময় পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে রয়েছে, যা সরকারের নির্ধারিত ৬ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।

১২ মাসের গড় হিসাব অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশে, যা গত এক বছরে উচ্চমূল্যের ধারাবাহিকতার দিকটি তুলে ধরছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির স্থায়িত্ব মূলত কাঠামোগত কারণ ও নীতিগত সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'এই পরিবর্তনগুলো খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূল্যস্ফীতি একধরনের কঠিন অবস্থায় রয়েছে। এক মাসে সামান্য বাড়ছে, পরের মাসে কমছে, কিন্তু সব সময়ই ৮ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান গড় হার ও লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ব্যবধান উল্লেখযোগ্য, যা উদ্বেগজনক।' জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রস্তুত করা 'শ্বেতপত্র' কমিটিরও সদস্য ছিলেন।

তার মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান হাতিয়ার হলো বিনিময় হার, এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ঝুঁকি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ করছে।

তিনি বলেন, 'বিনিময় হারকে কিছুটা শক্তিশালী হতে দেওয়ার সুযোগ ছিল, যা আমদানি পণ্যের দাম ও উৎপাদন খরচ কমাতে পারত।'

'কিন্তু তারা তা করতে চায়নি, কারণ আশঙ্কা ছিল— ডলারের দাম কমলে রপ্তানিকারকদের মুনাফা কমে যাবে, যা এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পাল্টা শুল্কের কারণে চাপে রয়েছে।'

তিনি আরও উল্লেখ করেন, টাকার মান বাড়লে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে এবং আমদানির চাহিদা বেড়ে যেতে পারে।

জাহিদ হোসেনের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক এই সময়টাকে রিজার্ভ বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। তিনি বলেন, 'গতকালও (সোমবার) তারা ডলার কিনেছে।'

এই অর্থনীতিবিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থানের পেছনের যুক্তি তিনভাবে ব্যাখ্যা করেন— রপ্তানি সুরক্ষা, রেমিট্যান্স সহায়তা ও রিজার্ভ বাড়ানো।

তবে তিনি যুক্তি দেন, ডলারের দাম কিছুটা কমতে দিলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তা সাহায্য করতে পারে।

তিনি বলেন, 'ঝুঁকিমুক্ত কোনো পথ নেই। যেদিকেই যাওয়া হোক না কেন, একটা না একটা ছাড় দিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। মূল্যস্ফীতি কমানো জরুরি, কারণ এটি সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সেটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।'

তিনি ব্যাখ্যা করেন, 'বিনিময় হার স্থির রাখলে দুটি বিষয় ঘটে। প্রথমত, টাকার মান বাড়লে আমদানি ও উৎপাদন ব্যয় কমার যে সম্ভাব্য সুবিধা পাওয়া যেত, সেটি হাতছাড়া হয়। দ্বিতীয়ত, বাজারে তারল্য বেড়ে যায়।'

বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ডলার কেনে, তখন তারা বাজারে টাকা ছাড়ে। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয় না। 'ফলে ঝুঁকিমুক্ত সুদের হার এক অঙ্কে নেমে এসেছে, যা মুদ্রানীতি কঠোর রাখার অবস্থানকে দুর্বল করছে।'

নীতি সুদহার কমানোর সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, 'বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের আগে সুদহার কমানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। সম্ভবত তারা পরবর্তী মুদ্রানীতি হালনাগাদের জন্য অপেক্ষা করবে।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যোগানপক্ষের চাপ সীমিত থাকলে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমার পথে থাকবে।

গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি আগস্টের ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে বেড়ে ৯ দশমিক ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সূচকের মধ্যে অন্যতম বড় পার্থক্য।

এ প্রসঙ্গে আশিকুর রহমান বলেন, গ্রামীণ এলাকায় সামান্য সরবরাহ বিঘ্ন ঘটতে পারে, তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, 'এই পরিবর্তন খুবই সামান্য। তাই বিষয়টি সাবধানতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করা উচিত।'

অন্যদিকে জাহিদ হোসেন বলেন, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি মূলত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য খাতে বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'এই শ্রেণিতে নানা ধরনের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাই ঠিক কোন খাতগুলো দাম বাড়াচ্ছে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন।'

Comments