যে ১০ সিনেমায় দেখতে পাবেন বিখ্যাত পরিচালকদের দুর্দান্ত অভিনয়

জন হিউস্টন, অরসন ওয়েলস, ফ্রিৎজ লাং, ফ্রঁসোয়া ত্রুফো, এরিখ ফন স্ট্রোহাইম ও ডেভিড লিঞ্চ (বামদিক থেকে)।

চলচ্চিত্রে পরিচালকরা সাধারণত পর্দার পেছনে থাকেন। কিন্তু এমন অনেক কিংবদন্তি পরিচালক রয়েছেন, যারা মাঝেমধ্যে নিজেরাই ক্যামেরার সামনে এসে চমকে দিয়েছেন দর্শকদের। এই লেখায় থাকছে এমন ১০টি সিনেমার কথা, যেখানে মূলত পরিচালক হিসেবে খ্যাত ব্যক্তিরা অভিনয় করেছেন। সেই সিনেমাগুলো তারা নিজেরা পরিচালনা করেননি। কেবল ক্যামিও নয়, বরং তাদের পারফরম্যান্স ছিল মনে রাখার মতো, যেগুলো চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছে।

চায়নাটাউন ছবির দৃশ্যে জন হিউস্টন। ছবি: প্যারামাউন্ট পিকচার্স

১. চায়নাটাউন (১৯৭৪)

পুরোনো 'ফিল্ম ন্যুয়ার' ঘরানার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবার একইসঙ্গে আরও অন্ধকার, হতাশাজনক আবহ তৈরি করে 'চায়নাটাউন' দর্শককে টেনে নিয়ে যায় রহস্যের এক গহ্বরে। এটি রহস্যময় গল্প, চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি এবং অনুভবমুখর আবহের মাধ্যমে একটি বিষণ্ণ অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এখানে কাস্টিংয়ে সবচেয়ে আলোচিত নাম—জন হিউস্টন। তিনি ফিল্ম ন্যুয়ার ঘরানার পথিকৃৎ ছিলেন এবং এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন এক ভয়ংকর খলনায়ক চরিত্রে।

হিউস্টনের পূর্বপরিচয় একজন পরিচালক হিসেবে—দ্য ম্যালটেস ফ্যালকন, দ্য অসফাল্ট জাঙ্গল, কি লার্গোর পরিচালক হিউস্টেন। এবার তিনি খলনায়ক হয়ে সেই অন্ধকার জগতে নেমে এলেন পর্দার ভেতর থেকে। যেন নিজেরই নির্মিত পৃথিবীর শাসক হয়ে উঠলেন।

দ্য থার্ড ম্যান সিনেমার দৃশ্যে অরসন ওয়েলস। ছবি: ব্রিটিশ লায়ন ফিল্ম করপোরেশন

২. দ্য থার্ড ম্যান (১৯৪৯)

অরসন ওয়েলসের নাম এলেই মনে পড়ে যায় সিটিজেন কেইনের কথা—যা পরিচালনা এবং অভিনয় দুই দিক থেকেই ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। তবে এখানে আমরা বলছি তার অভিনীত কিন্তু নিজে পরিচালনা না করা সিনেমা 'দ্য থার্ড ম্যান'-এর কথা। এটি একটি রহস্য ও থ্রিলার ঘরানার চলচ্চিত্র, যেখানে ওয়েলস অভিনয় করেছেন এমন এক চরিত্রে, যা ব্যাখ্যা করাটাই হয়ে যায় স্পয়লার!

এই ছবিতে তার আত্মপ্রকাশ গভীর ও রহস্যময়। সম্ভবত এটি সেই বিরল কিছু চরিত্রের মধ্যে পড়ে যেখানে তিনি পরিচালক না হয়েও নিজের অভিনয়ের শৈলী পুরোপুরি প্রকাশ করেছেন।

দ্য সানসেট বুলেভার্ড ছবির দৃশ্যে এরিখ ফন স্ট্রোহাইম। ছবি: প্যারামাউন্ট পিকচার্স

৩. সানসেট বুলেভার্ড (১৯৫০)

চলচ্চিত্র জগতের অন্তরালের কালো-ধূসর রঙগুলো উঠে আসে 'সানসেট বুলেভার্ড' সিনেমায়। গল্পটি এক নির্বাক যুগের অভিনেত্রী নর্মা ডেসমন্ডকে ঘিরে, যিনি আবার পর্দায় ফিরতে চান। চরিত্রটিতে গ্লোরিয়া সোয়ানসন অনবদ্য। কিন্তু এখানে চমকপ্রদভাবে হাজির হয়েছেন কিংবদন্তি পরিচালক এরিখ ফন স্ট্রোহাইম, যিনি অভিনয় করেছেন নর্মার বাটলার ম্যাক্স ভন মেয়ারলিংয়ের ভূমিকায়।

তিনি ছিলেন গ্রিড (১৯২৪) ও কুইন কেলির (১৯৩২) মতো সিনেমার পরিচালক। সেই স্ট্রোহাইম এখানে শুধু অভিনয়ই করেননি, বরং নিজের পরিচালিত নায়িকাকে এক বাস্তব-জটিল সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পর্দায় নিয়ে এসেছেন—যা আরও অনেক স্তরে সিনেমাটিকে জটিল ও হৃদয়বিদারক করে তোলে।

চলচ্চিত্র পরিচালক ফ্রঁসোয়া ক্রফো। ছবি: কলম্বিয়া পিকচার্স

৪. ক্লোজ এনকাউন্টারস অব দ্য থার্ড কাইন্ড ( ১৯৭৭)

স্টিভেন স্পিলবার্গের সায়েন্স ফিকশন ক্লাসিক 'ক্লোজ এনকাউন্টারস'-এ অভিনয় করেছেন ফ্রঁসোয়া ত্রুফো, যিনি নিজেই ফরাসি সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতাদের একজন। তিনি এখানে অভিনয় করেছেন এক সরকারি বিজ্ঞানীর চরিত্রে, যিনি এলিয়েনদের আগমনের ঘটনাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছেন।

পরিচালক ত্রুফো পরিচিতি দ্য ৪০০ ব্লোজ, জুলস অ্যান্ড জিম, ডে ফর নাইট–এর মতো সিনেমার জন্য। কিন্তু এই একটিমাত্র সিনেমায় তিনি যেভাবে অভিনয় করেছেন, তা প্রমাণ করে—তিনি পর্দাতেও কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন।

আইস ওয়াইড শাটের দৃশ্যে সিডনি পোলাক। ছবি: ওয়ার্নার ব্রোস পিকচার্স

৫. আইস ওয়াইড শাট (১৯৯৯)

স্ট্যানলি কুবরিকের মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার 'আইস ওয়াইড শাট'-এ টম ক্রুজের চরিত্র ঘোরের মতো এক রহস্যে জড়িয়ে পড়ে। সিনেমার শেষদিকে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে হাজির হন পরিচালক সিডনি পোলাক, যিনি অভিনয় করেছেন একজন প্রভাবশালী রোগীর ভূমিকায়।

প্রথম দিকে তিনি এক প্রীতিকর চরিত্র মনে হলেও শেষ দৃশ্যে তার মুখোমুখি সংলাপ একরকম ভয় ছড়িয়ে দেয়। পোলাকের এমন সংযত অথচ শক্তিশালী পারফরম্যান্স প্রমাণ করে, তিনি যেমন শক্তিশালী পরিচালক (দে শুট হর্সেস, ডোন্ট দে?; টটসি, জেরেমিয়াহ জনসন), তেমনই দারুণ অভিনেতাও।

‘দ্য ডার্টি ডজেন’ সিনেমার দৃশ্যে জন ক্যাসাভেটস। ছবি: মেট্রো-গোল্ডউইন মেয়ার

৬. দ্য ডার্টি ডজেন (১৯৬৭)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি এই ক্লাসিক সিনেমায় ১২ জন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিকে এক ঝুঁকিপূর্ণ মিশনে পাঠানো হয়। তাদের একজন হলেন জন ক্যাসাভেটস। তিনি ছিলেন রোসামেরিস বেবি–তে স্মরণীয় অভিনয়ের জন্য পরিচিত, কিন্তু পরিচালক হিসেবে অ্যা ইউমেন আন্ডার দ্য ইনফ্লুয়েন্স কিংবা দ্য কিলিং অব আ চাইনিজ বুকি–এর মতো সিনেমা তাকে কিংবদন্তির মর্যাদা দেয়।

এই ছবিতে তিনি তার বিদ্রোহী, অস্থির স্বভাবের অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছেন।

কনটেম্পট সিনেমায় ফ্রিৎজ লাং। ছবি: মার্কিউ কোকিনর

৭. কনটেম্পট (১৯৬৩)

জাঁ-লুক গদারের এই আত্ম-সমালোচনামূলক চলচ্চিত্রে দেখা যায় ফ্রিৎজ লাং–কে, যিনি নিজেকে উপস্থাপন করলেও তা পুরোপুরি বাস্তব নয়। এখানে তাকে দেখা যায় 'দ্য অডিসি' অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে—বাস্তবে যা তিনি কখনো করেননি।

এই স্বরূপে তিনি যেমন নিজে পর্দায় হাজির হয়েছেন, তেমনি গদার নিজেও অভিনয় করেছেন তার সহকারী পরিচালকের ভূমিকায়। সিনেমার ভেতরে সিনেমা নির্মাণ, তার ভেতর পরিচালকের ভূমিকা—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত স্তর তৈরি করে কনটেম্পট।

ড্রিমস সিনেমার দৃশ্যে মার্টিন স্করসেজি। ছবি: ওয়ার্নার ব্রোস পিকচার্স

৮. ড্রিমস (১৯৯০)

আকিরা কুরোসাওয়া তার শেষ জীবনে এক স্বপ্নসদৃশ সিনেমা নির্মাণ করেন—'ড্রিমস'। এতে একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য গল্প বা ভিনিয়েট রয়েছে, যা তার জীবনের বাস্তব স্বপ্ন থেকে অনুপ্রাণিত।

এর একটি গল্পে দেখা যায় একজন ছাত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে ভ্যান গঘের আঁকা ছবির ভেতর দিয়ে এবং পরে দেখা যায় সেটা গঘ নিজেই। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সেই চরিত্রে অভিনয় করেন মার্কিন নির্মাতা মার্টিন স্করসেজি। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তার এই অভিনয় চমকে দেয় এবং এটি হয়ে ওঠে দুই কিংবদন্তি নির্মাতার এক দারুণ সম্মিলন।

দ্য ফ্যাবেলম্যানস-এ ডেভিড লিঞ্চ। ছবি: ইউনিভার্সাল পিকচার্স

৯. দ্য ফ্যাবেলম্যানস ( ২০২২)

স্পিলবার্গের আধা-আত্মজীবনীমূলক এই ছবিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন আরেক কিংবদন্তি—ডেভিড লিঞ্চ। সিনেমার শেষ দৃশ্যে মূল চরিত্র স্যামির দেখা হয় 'পরিচালকদের পরিচালক' হিসেবে খ্যাত—জন ফোর্ডের সঙ্গে। এই ফোর্ডের ভূমিকায় দেখা যায় ডেভিড লিঞ্চকে, যিনি মাত্র একটি দৃশ্যে পর্দায় এলেও দৃশ্যটি চিরস্মরণীয় করে তোলেন।

স্পিলবার্গ এক্ষেত্রে শুধু নিজের জীবন নয়, বরং নিজের প্রেরণার উৎসকেও শ্রদ্ধা জানান।

দ্য ব্লুজ ব্রাদার্স-এ স্টিভেন স্পিলবার্গ। ছবি: ইউনিভার্সাল পিকচার্স

১০. দ্য ব্লুজ ব্রাদার্স (১৯৮০)

এই কাল্ট ক্লাসিক মিউজিকাল কমেডির একদম শেষে একটি ক্যামিও চরিত্রে হাজির হন স্টিভেন স্পিলবার্গ। তিনি অভিনয় করেছেন সেই কর্মকর্তার ভূমিকায় যার অনুমতির প্রয়োজন ছিল ছবির মূল চরিত্রদের মিশন সম্পূর্ণ করতে। তরুণ স্পিলবার্গ এখানে প্রায় চিনে না যাওয়ার মতো তরুণ, কিন্তু একবার চিনে ফেললে মুহূর্তটি হয়ে ওঠে দারুণ উপভোগ্য।

এই সিনেমায় আরেকজন কিংবদন্তি পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক ওজ–কেও দেখা যায়, যিনি শুরুতেই একটি কারাগারের অফিসারের চরিত্রে হাস্যরস ছড়ান। যদিও তিনি বেশি পরিচিত 'দ্য মাপেটস' ও 'স্টার ওয়ার্স'–এর সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য, ওজ পরে লিটল শপ অব হররস, বোফিঙ্গারের মতো সিনেমাও পরিচালনা করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

5h ago