‘অভিনেতা না হলে সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতাম’

মাহফুজ আহমেদ। ছবি: স্টার

নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী মাহফুজ আহমেদ দর্শকদের দৃষ্টি কাড়েন সাড়া জাগানো নাটক 'কোথাও কেউ নেই'-এ অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর থেকে শুরু হয় তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা। অভিনয় করেছেন অসংখ্য আলোচিত নাটকে এবং একাধিকবার অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে কাছ থেকে দেখেছি তাকে। গাজীপুরের পূবাইল, মুন্সিগঞ্জ ও উত্তরায় তার নাটকের শুটিংয়ে একাধিকবার উপস্থিত ছিলাম। শুটিংয়ের বাইরে হয়েছে অনেক আড্ডাও। 

আজ ২৩ অক্টোবর অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের জন্মদিন। স্মৃতি থেকে তার সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্ত তুলে ধরা হলো দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য।

একদিন ফোন করতেই মাহফুজ আহমেদ বললেন, 'আগামী সপ্তাহে বনানীর অফিসে চলে এস। কোনো ইন্টারভিউ নয়, আড্ডা দেব আমরা।'

সেভাবেই একদিন পৌঁছে যাই তার অফিসে। দেখা হওয়ার পর জড়িয়ে ধরলেন। শুরু হলো আড্ডা। কিছুক্ষণের মধ্যেই কথায় কথায় বললেন, 'সাংবাদিকতা জীবন খুব মিস করি। তোমাদের দেখলেই ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়ে। ভাগ্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।'

আমি জানতে চাই, 'অভিনেতা না হলে কী হতেন?'

তিনি হেসে বললেন, 'সাংবাদিকতা করতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই সাংবাদিকতা শুরু করি। পরে অভিনয়ে চলে আসি। খুবই উপভোগ করতাম সাংবাদিকতা।'

আমি আবার জানতে চাই, 'আপনার জীবনে এমন কেউ কি এসেছিলেন, যার কথা এখনো মনে পড়ে?'

মুচকি হেসে মাহফুজ বললেন, 'আমি তখন কলেজে পড়ি, কুমিল্লা শহরে। এক মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতাম। হঠাৎ একদিন দেখি, ওরা বদলি হয়ে অন্য শহরে চলে যাচ্ছে। গাড়িতে জিনিসপত্র তুলছে। সেই ছিল শেষ দেখা। তারপর আর কখনো দেখা হয়নি। মেয়েটিকে মনে মনে পছন্দ করতাম, সেও আমাকে করত।'

গল্পে গল্পে সময় পেরিয়ে যায়। একসময় বললেন, 'আরও পাঁচজনের মতো আমিও খুব সাধারণ পরিবারে বড় হয়েছি। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মফস্বলে বড় হয়েছি, কুমিল্লায় কলেজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি।'

আমি প্রশ্ন করি, 'গ্রামের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে?'

তিনি বললেন, 'কী বলো! গ্রামের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামকে ভালোবাসি খুব। নিয়মিত বাড়ি যাই। সেখানে থাকলে প্রতিদিন গ্রামের মানুষের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়ে পড়ি। এতে একধরনের শান্তি পাই।'

আমি জানতে চাই, 'গ্রামের কী সবচেয়ে বেশি মিস করেন?'

একটু ভেবে বললেন, 'বাতাস!'

অবাক হলাম। মাহফুজ আহমেদ বললেন, 'রাতে হাঁটার সময় এক ধরনের বাতাস বইতো। কেউ কেউ বলে "পূবালী বাতাস", কেউ বলে "বাউলা বাতাস"। এখন আর সেই বাতাস পাই না, খুব মিস করি।'

আমি জানতে চাই, 'পালিয়ে সিনেমা দেখেছেন কখনো?'

হেসে উত্তর দিলেন, 'অনেকবার। ধরাও পড়েছি। লক্ষ্মীপুরে আমাদের বাড়ি। রাতে দরজা বন্ধ করে সিনেমা দেখতে যেতাম। ফিরে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়তাম। বাবার কাছে ধরা পড়েছি, ধমকও খেয়েছি।'

একসময় মাহফুজ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, 'ভালো মানুষ হওয়াটা খুব দরকার। এটা প্রতিটি মানুষের জন্য। মানুষ একবারই জন্ম নেয়, আর মরে গেলে আর ফিরে আসে না। কিন্তু ভালো মানুষদের সবাই মনে রাখে। আমি মারা যাওয়ার পর যদি তোমরা বলো, "মাহফুজ আহমেদ ভালো মানুষ ছিলেন", এটাই আমার প্রাপ্তি। আর কিছু চাই না।'

গল্প করতে করতে রাত গড়িয়ে যায়। খাবার আসে। তিনি বলেন, 'চলো, একসঙ্গে খাই।'

খেতে খেতেও অনেক গল্প। শেষে তিনি বললেন, 'তোমাকে নামিয়ে দেবো।'

তার গাড়িতে উঠি, যেতে যেতে আরও গল্প। বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবলাম—যার কত নাটক টেলিভিশনে দেখেছি, কত সাধারণ তার ভাবনাগুলো!

 

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

9h ago