তিন গোয়েন্দা নিয়ে ৪ তারকার স্মৃতিচারণ

চঞ্চল, বাঁধন, ইন্তেখাব, সজল।

বাংলাদেশের লাখ লাখ পাঠককে বইমুখী করার পেছনে অনেক বড় অবদান রয়েছে তিন গোয়েন্দা সিরিজের। অসংখ্য পাঠকের কৈশোরের প্রথম প্রেম ছিলো তিন গোয়েন্দা। দেশের তিন প্রজন্মকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকৃষ্ট করেছে রকিব হাসানের এই অমর সৃষ্টি। গতকাল তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা জনপ্রিয় লেখক রকিব হাসান মারা গেছেন।

বাংলাদেশের চারজন তারকা দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিন গোয়েন্দা সিরিজ নিয়ে তাদের ভালোলাগা-ভালোবাসার কথা।

তিন গোয়েন্দা ভীষণ প্রিয় ছিল বলে জানালেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি বলেন, তিন গোয়েন্দা সিরিজের সবগুলো বই আমার কেনা। এখনো সংগ্রহে আছে। রকিব হাসানের মারা যাওয়ার খবর শুনে বইগুলো নতুন করে নেড়েচেড়ে দেখলাম, স্পর্শ করলাম। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। মনে পড়ে, টিফিনের টাকা জমিয়ে তিন গোয়েন্দা কিনেছি। স্কুল থেকে ফেরার পথে সাধারণত বইগুলো কিনতাম। আগে থেকেই দোকানদারকে বলে রাখতাম। একটা সিরিজ পড়ার পর অপেক্ষা করতাম নতুনটা কেমন হবে? ছোটবেলায় যার বই পড়ে কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়াতাম, সেই পছন্দের লেখকের মৃত্যুতে মনটা আসলেই খারাপ হয়ে গেল।

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর মতে, তিন গোয়েন্দা সিরিজ হারাবে না, টিকে থাকবে যুগ যুগ ধরে। এই সিরিজ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গোয়েন্দা সিরিজ আমার খুব পছন্দ। আমি বেড়ে উঠেছি মফস্বলে। আমাদের সময়ে রকিব হাসানের লেখা তিন গোয়েন্দা কারও কাছে পেলেই নিয়ে এসে পড়তাম। কলেজের লাইব্রেরিতে তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা পেতাম। এভাবেই গোয়েন্দা, রহস্য ও থ্রিলারের প্রেমে পড়ে যাই। রকিব হাসানের এই গোয়েন্দা সিরিজ অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর মনকে রাঙিয়েছে, নতুন জগৎ তৈরি করেছে, মানুষকে বইমুখী করেছে। আমিও গোয়েন্দা উপন্যাসের দিকে ঝুঁকেছি তার বই পড়ে। এখনো পাঠকরা তিন গোয়েন্দা খোঁজেন। একজন লেখকের এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।

অভিনেতা ইন্তেখাব দিনার স্কুল জীবন থেকে তিন গোয়েন্দা পড়তে শুরু করেন। তিনি বলেন, আমার শৈশব ও কৈশোরকে নতুন করে গড়ে দিয়েছে রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা। স্কুলে পড়ার সময় নিউমার্কেট থেকে তিন গোয়েন্দা সিরিজের বই কিনতাম। কী একটা দারুণ সময় পার করে এসেছি! তিন গোয়েন্দা আমাদের অনেক কিছু চিনিয়েছে, এজন্য লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা। রাতের পর রাত পার করতাম এই সিরিজের বই পড়ে। একটি সিরিজ শেষ হওয়া মানে অপেক্ষায় থাকতাম পরের বইটি কবে হাতে পাব। আমার মতো অসংখ্য পাঠক এভাবেই অপেক্ষা করতেন। এদেশে তিন গোয়েন্দা পাঠক সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে গোয়েন্দা উপন্যাসের প্রতি পাঠকের যে আগ্রহ, তাতে বড় অবদান তিন গোয়েন্দার লেখকের। রকিব হাসানের এই চলে যাওয়াটায় তাই খারাপ লেগেছে।

গোয়েন্দা উপন্যাসের ভক্ত হওয়ায় লুকিয়ে লুকিয়ে তিন গোয়েন্দা পড়তেন অভিনেতা সজল। সেইসব দিনের স্মৃতিচারণ করে রকিব হাসানকে স্মরণ করেন তিনি। বলেন, সেই ছেলেবেলা থেকেই তিন গোয়েন্দা পড়ার শুরুটা হয়েছিল। প্রাইমারি আর হাই স্কুল, তারপর কলেজ জীবন—আমার জন্য নতুন একটা জগৎ খুলে দিয়েছিল তিন গোয়েন্দা। এই সিরিজের সাংঘাতিক ভক্ত আমি। কিশোর, মুসা, রবিন—নামগুলো এখনো ভুলতে পারি না। মনে পড়ে, ছোটবেলায় মা পড়তে দিতে চাইতেন না। লুকিয়ে লুকিয়ে তিন গোয়েন্দা পড়েছি। পাঠ্য বইয়ের ভেতরে নিয়ে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। আর মা দেখে ভাবতেন, আমি পাঠ্য বই পড়ছি। স্কুলে থাকতে বন্ধুরা মিলে নিউমার্কেট গিয়ে রকিব হাসানের বই কিনে আনতাম। এমনও হয়েছে বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও তিন গোয়েন্দার বই পড়তাম। টিফিনের টাকা জমিয়ে কিনতাম তিন গোয়েন্দার বই। প্রিয় সেই লেখকের মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পেয়েছি।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

7h ago