শহর ছেড়ে গ্রামে কেমন আছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ
দেশের পপ সংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ ফেরদৌস ওয়াহিদ। 'মামুনিয়া', 'এমন একটা মা দেনা', 'আগে যদি জানতাম'—এমন অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন তিনি। গানের বাইরে নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেও প্রসংশিত হয়েছেন।
তবে দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন জনপ্রিয় এই শিল্পী। শহুর ছেড়ে কেন গ্রামীণ জীবন বেছে নিলেন, দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে সেই গল্প।
ডেইলি স্টার: দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে বসবাস করছেন, কেমন আছেন আপনি?
ফেরদৌস ওয়াহিদ: গ্রামে খুব ভালো আছি। সত্যিই আমি ভালো আছি। ঝামেলামুক্ত ও পরিচ্ছন্ন জীবনে অনেক শান্তিতে আছি। এই জীবনে একটা আলাদা শান্তি আছে। অন্য রকম সুখ আছে। এই জীবন যে যাপন করেনি, সে বুঝবে না।
ডেইলি স্টার: এত খ্যাতি, এত কিছু থাকতে গ্রামের জীবন বেছে নেওয়ার কারণ কী?
ফেরদৌস ওয়াহিদ: একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। আমার আব্বা মারা গেছেন অনেক আগে, সেই ১৯৮৫ সালে। আব্বার মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়িতে চল্লিশা হয়েছিল। অনেক মানুষ এসেছিলেন। ওই সময় বাড়িতে আসার পর কী যেন হলো, খুব ভালো লেগে গেল। মন বলল—তুমি আসো না কেন? বেশি বেশি আসো না কেন? মাকে খুলে বললাম। মাকে বললাম, একটা ঘর করে দাও। মা বললেন, 'সত্যি সত্যি আসবি?' এরপর একটা টিনশেড বিল্ডিং করা হলো আমার জন্য। তারপর ধীরে ধীরে গ্রামের প্রতি ভালোবাসা বাড়তে শুরু করল।
গত ১০ বছর ধরে গ্রামে বেশি বেশি যাতায়াত করছি, বেশি করে থাকছি। গত ৭ বছর ধরে নিয়মিত থাকছি। তিনতলা বাংলো বাড়ি করেছি। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকছি। মন বসে গেছে। কোনো মানুষ যদি মনে করে ভালো থাকবে, ঝামেলামুক্ত থাকবে, তাহলে গ্রামে বাস করতে পারে। সে জন্যই বলি, আমি অনেক ভালো আছি।
ডেইলি স্টার: একবার বলেছিলেন প্রতি সপ্তাহে নৌকায় গিয়ে থাকেন, এখনো সেটা চলছে?
ফেরদৌস ওয়াহিদ: আছে। এর একটা বড় কারণ আছে। তা হচ্ছে—নিজেকে আরও বেশি প্রকৃতির কাছাকাছি রাখা। মন চাইলেই নৌকায় চলে যাই। পানির ওপর ভেসে বেড়াই। নৌকায় খাওয়া-দাওয়া করি। ওখানেই রান্না হয়। প্রকৃতির মাঝে থাকার মতো সুখ আর নেই। জীবনকে জানার জন্য, জীবনকে ভাবার জন্য এই কাজটি করি।
ডেইলি স্টার: আপনি একজন জনপ্রিয় শিল্পী, মানুষ কতটা কাছাকাছি আসে?
ফেরদৌস ওয়াহিদ: প্রচুর মানুষ আমার কাছে আসে। আমার বাড়ির দুই পাশে ৭০-৮০টি পরিবার আছে। তারা আসে। গ্রামের অনেকেই আসে। মানুষের ওঠা-বসা আছেই। এতে খুব ভালো লাগে। তবে একটি কথা না বললেই নয়। যেসব মানুষ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, তাদের সঙ্গে মিশে বেশি আনন্দ পাই। তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বেশি। আমার বাড়িতে ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র আছে, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার যন্ত্র আছে। আর্থিকভাবে যারা দুর্বল, তাদের এই সব জিনিস দিই পরীক্ষা করার জন্য।
ডেইলি স্টার: এখনো গান করছেন, উপস্থাপনা করছেন?
ফেরদৌস ওয়াহিদ: এই জীবনটাও খুব উপভোগ করি। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি—কীভাবে এখনো এত কাজ করছি? কীভাবে অনুষ্ঠান করছি? সবকিছু সৃষ্টিকর্তার রহমত। দেখুন, প্রতি মাসে আমাকে ঢাকা শহরে যেতে হয় ৫-৭ দিন। অনুষ্ঠানের আয়োজকরাই নিয়ে যান, আবার দিয়েও যান। আমি উপভোগ করি বলেই কাজ করতে পারছি।
ডেইলি স্টার: সম্প্রতি চ্যানেল আইতে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন, কেমন সাড়া পেলেন?
ফেরদৌস ওয়াহিদ: প্রচুর সাড়া পেয়েছি। চারদিক থেকে খুব সাড়া পেয়েছি। প্রচার হওয়ার পর ইউটিউবেও অসংখ্য দর্শক দেখছেন। অনেকেই আমাকে বলছেন, প্রশংসা করেছেন। এতেই বুঝতে পারি প্রচুর মানুষ আমার উপস্থাপনার অনুষ্ঠানটি দেখেছেন।
ডেইলি স্টার: দীর্ঘ শিল্পীজীবনে অপ্রাপ্তি কাজ করে কি?
ফেরদৌস ওয়াহিদ: মানুষের ভালোবাসা যেভাবে পেয়েছি, আর কী চাই। এখনো মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। জাতীয় পুরস্কার পাইনি—পাবার আকাঙ্ক্ষাও নেই। এত বেশি সম্মান পেয়েছি এবং এখনো পাচ্ছি, তা কম কী? বিক্রমপুরের মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসেন। বিক্রমপুরের প্রশাসন আমাকে পছন্দ করে। সারা দেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। প্রবাসী ভাইয়েরাও ভালোবাসেন। গণমানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি, এটাই বড় পাওয়া। আর কী চাই!
ডেইলি স্টার: পপসম্রাট আজম খান, ফিরোজ সাঁইসহ অনেক বন্ধু বেঁচে নেই, তাদের নিয়ে কিছু বলুন।
ফেরদৌস ওয়াহিদ: বন্ধুদের কথা বলে শেষ করতে পারব না। ছোট করে বলি, ওদের ভীষণ মিস করি। বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে চমৎকার সময় কাটিয়েছি। সেই সময়, সেই পরিবেশ এবং সেই রকম বন্ধু আর আসবে না। ওই রকম বন্ধন আর পাব না। বন্ধুর মেলাটাই তো নেই। এখন চমক আছে, কিন্তু বন্ধু কম।
ডেইলি স্টার: আপনার ছেলে হাবিব ওয়াহিদ নিজ নামেই পরিচিত—তার সম্পর্কে কিছু বলুন।
ফেরদৌস ওয়াহিদ: হাবিবের সাফল্য ভালো লাগে। সংগীতে সে পারফেক্ট। সুরের আলাদা জাদু আছে। এখন সে অনেক বিনয়ী হয়েছে। তবে ওর যে মেধা, আমি মনে করি ২৫ ভাগ ব্যবহার হয়েছে। আরও ৭৫ ভাগ বাকি আছে। সেই ৭৫ ভাগ ব্যবহার হলে বিশাল কিছু হবে।


Comments