চারদিকে পানি, তবুও পানির সংকট

বন্যার পানিতে ডুবে থাকা নলকূপের পানিই পান করতে হচ্ছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

সাহেরা বেওয়ার (৫৮) বাড়ির নলকূপ ও টয়লেট বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাড়ির ভেতরে চলে এসেছে নদীর পানি। প্রায় দুই ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে ঘর।

সাহেরা বেওয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘরে-বাইরে সবখানে শুধু পানি আর পানি। অথচ, গত ১০ দিন ধরে পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে রয়েছেন তারা। বন্যার পানিতে ডুবে থাকা নলকূপের পানিই পান করতে হচ্ছে তাদেরকে।

সাহেরা বেওয়ার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর মধ্য কদমতলা এলাকায়। তার পরিবারের সদস্য সাত জন।

'বান আইসলে হামারগুলার চোখ থাকি নিনও চলি যায়। ঠিকমতোন গোসল নাই, খাওয়া নাই। সবসময় বানের পানিত পড়ি থাকা নাগে। খালি কষ্ট আর কষ্ট,' বলেন সাহেরা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর ভগবতিপুর গ্রামের জরিমন বেগম (৫০) গত নয় দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া নলকূপের পানিতেই সংসারের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। গ্রামের ৬৫টি পরিবারের সবাই পানিবন্দি। বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেওয়ারও জায়গা নেই তাদের। ঘরের ভেতর দুই ফুটের বেশি পানি। খাটের ওপর বসে সময় কাটছে জরিমন বেগমের পাঁচ সদস্যের পরিবারের।

জরিমন বেগমের ভয়, বিশুদ্ধ পানির অভাবে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন তারা।

জরিমন বেগমের স্বামী সুরুজ আলী (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আর কতদিন এভাবে বন্যার পানি থাকবে জানেন না তারা। চরম অনিশ্চয়তার দিন কাটছে তাদের।

একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধি প্রমোদ চন্দ্র বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাদ্যের চেয়ে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে থাকেন বানভাসিরা। বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে না পেরে বাধ্য হয়েই বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া নলকূপের পানি ব্যবহার করেন তারা। অনেকে নদীর পানিও ব্যবহার করতে বাধ্য হন।'

কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনজুর-এ-মুর্শেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৮০টি অস্থায়ী মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব মেডিকেল টিম বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে। বানভাসি মানুষের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'দূষিত পানি পান করলে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, আমাশয়সহ নানা রোগ হতে পারে। বন্যার পানিতে সবসময় চলাফেরার কারণে চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে।'

বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও এখনো প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনো কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

এখনো ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে।

লালমনিরহাটে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হওয়ায় উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির।

এরই মধ্যে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে এক শিশু। সাব্বির আহমেদ নামে ওই শিশু মুসল্লিপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদীর পানি ২৯ সেন্টিমিটার কমে কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রামের ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটের শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি রয়েছে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য নদ-নদীর পানি দ্রুত নামতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নামছে ধীরগতিতে। আপাতত উজানে ভারত থেকে পানি আসা বন্ধ রয়েছে।'

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকার বাড়ি-ঘর থেকে প্রায় এক ফুট পানি নেমে গেছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আসা বানভাসিরা বাড়িতে ফিরতে পারবেন।'

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতাউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিশুদের সবসময় নজরে রাখা এবং তাদেরকে বন্যার পানিতে খেলতে না দিতে বানভাসি লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে।'

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলায় ৪০ হাজার পরিবারের এক লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৯ জন মানুষ বন্যাদুর্গত হয়েছেন। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় বন্যাদুর্গত হয়েছেন সাত হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English
govt employees punishment rule

Govt employees can now be punished for infractions within 14 working days

Law ministry issues ordinance amending the Public Service Act, 2018

2h ago