তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পেটে গেল ২৩০ ঘর

ছবি: স্টার

উত্তরের জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। অন্তত ৬০টি পয়েন্টে ভাঙন মারাত্মক রূপ নেওয়ায় নদীপাড়ের বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, বসতভিটা ও বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙনের ভয়ে অনেকে নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসন এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ দিনে (৭ থেকে ১১ অক্টোবর) তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ২৩০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে ১৬০টি, লালমনিরহাটে ৪০টি, রংপুরে ২০টি এবং নীলফামারীতে ১০টি পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলা; লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী ও হাতিবান্ধা উপজেলা; রংপুরের গংগাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলা এবং নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের মেহের জামাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'গত কয়েক বছরে সাত বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মাত্র ১০ শতক জমির ওপর কোনোরকমে বাস করছিলাম, বুধবার সকালে সেটাও নদীতে চলে গেল। তিনটি ঘর কোনোভাবে সরাতে পেরেছি। এখন আমার পরিবার ভূমিহীন, যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।'

একই গ্রামের মহসেনা বেগম বলেন, 'চোখের সামনে দুই বিঘা ফসলি জমি আর আমাদের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেল। আমাদের একটি ঘরও ভেসে গেছে। এখন রাস্তার পাশে অন্যের জমিতে সাময়িকভাবে আশ্রয় নিয়েছি। নদী আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে।'

ছবি: স্টার

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলার ১২টি পয়েন্টে, রংপুরে ৮টি, নীলফামারীর তিস্তা চরের ৬টি এবং কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীজুড়ে ৩৪টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চর পশ্চিম বাওন গ্রামের ভাঙনকবলিত আতাউর রহমান বলেন, বন্যার পর এই গ্রামে তিস্তার ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শুক্রবার তার বসতভিটা ও দুই বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে সরকারি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।

রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার চর মহিপুর গ্রামের মোমিনুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি কমার পর থেকেই ভাঙন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, 'ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমরা আমাদের ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছি। প্রতিদিন তিস্তা নদী আরও ফসলি জমি গ্রাস করছে।'

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, 'বন্যার পর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। যাত্রাপুরের ভাঙন নিয়ন্ত্রণে প্রচুর জিওব্যাগ প্রয়োজন, কিন্তু তহবিলের সংকট রয়েছে। আমরা কিছু ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছি। জরুরি বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।'

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফাত মেহনাজ বলেন, 'উজানের ঢলে পানি বেড়েছিল এবং পানি কমার সঙ্গে সঙ্গেই ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবোকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জরুরি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের পুনর্বাসন করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

8h ago