‘বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ধ্বংসের শামিল’

বিইআরসি, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, অধ্যাপক এম শামসুল আলম,
অধ্যাপক এম শামসুল আলম। স্টার ফাইল ছবি

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ভবিষ্যতের জন্য 'ভয়ঙ্কর' বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম।

তিনি বলেছেন, 'এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যে আইন দিয়ে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করা, সেই আইনকেই এক প্রকার বিলুপ্ত করে দেওয়া হলো।'

তার মতে, ২০১০ সালের দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন ভোক্তাকে লুণ্ঠনের সুযোগ করে দিয়েছে, ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফা লাভের সুযোগ তৈরি করেছে, অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধি সংযোজন করেছে। এ বিষয়গুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মূল্য নির্ধারণের যে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, তাতে ধরা পড়ছিল।

'কিন্তু এবার সেই যাচাই প্রক্রিয়াকেই সমাহিত করে দেওয়া হল।'

অধ্যাপক শামসুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ২০০৮ সাল থেকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের স্বচ্ছতার জন্য লড়াই করছি যেখানে একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছি। এই খাতে স্বচ্ছতা আসলে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে বিদ্যুতের সেবা পাবে।'

তিনি বলেন, 'এই খাতে যখন একটি ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল, আমরা জাতীয় পর্যায়ের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এ সংস্থার স্বপ্ন দেখছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম প্রত্যেকটা সেক্টরে রেগুলেটরি সিস্টেম হবে, যেখানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন হবে দৃষ্টান্ত।'

'এই খাতে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, একইসঙ্গে বিনিয়োগকারী স্বার্থ ও ব্যবসায়ের স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা ছিল বিইআরসির কাজ। কিন্তু বিষয়টি যখন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এগুচ্ছে, তখন আমরা দেখলাম ২০১০ সালে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন করা হলো এবং অনেকগুলো বিষয়কে রেগুলেটরি সিস্টেমের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো,' বলেন তিনি।

'তখন বিইআরসি অনেকটাই লোক দেখানো বডি হয়ে গেল। কিন্তু তারপরও মূল্য নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় এর বড় একটা ভূমিকা ছিল। যেমন গ্যাসের দামের ক্ষেত্রে বিতরণ ও সঞ্চালন পর্যায়ে দাম কেমন হবে, সেটা বিইআরসি নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু পুরো আমদানি বা সাপ্লাই চেইনটি এই প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে গেছে। ২০১০ সালের আইনের ফলে ওখানে সরকারের একক আধিপত্য থেকে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু এখন মূল্যহার নির্ধারণ প্রক্রিয়াটাও সরকার আইন করে রেগুলেটরি সিস্টেমের বাইরে নিয়ে গেছে। আইন সংশোধন করে সরকার নিজেরা এই খাতের ব্যবসায়ী হয়েও দাম নির্ধারণের ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিলো। এই পুরো প্রক্রিয়া আইনের দর্শন এবং আদর্শের পরিপন্থী।'

'বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের জন্য বিইআরসি কয়েকদিন আগেই একটি আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে আগামী ১৫ জানুয়ারি। কিন্তু তার আগেই কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সরকার মূল্য ঘোষণা করে দিল। এটা একপ্রকার পুরো রেগুলেটরি সিস্টেমটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার শামিল,' যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, 'বিইআরসি গঠনের মধ্য দিয়ে আমরা অন্ধকার একটা জগত থেকে আলোয় এসেছিলাম। কিন্তু, সরকারের নতুন এসব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবার অন্ধকারে ফিরে গেলাম। যেনতেনভাবে, যেকোনো সময় মূল্য নির্ধারণে সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হলো। এটা কোনোভাবেই ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করে না।'

Comments

The Daily Star  | English
Former president Hamid airport CCTV footage

The story of Hamid’s exit

Further details regarding the exit of former president Mohammed Abdul Hamid suggest he breezed through the airport before quietly departing for Thailand.

10h ago