এবার তেল শোধনাগার নির্মাণের কাজ পাচ্ছে এস আলম গ্রুপ

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে অর্থাভাবে বন্ধ থাকার পর এবার এ প্রকল্পে অংশীদার হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ।

গত বছরের অক্টোবরে এস আলম গ্রুপ চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারির মালিকানাধীন জমিতে ৮০:২০ ইক্যুইটির ভিত্তিতে দ্বিতীয় তেল শোধনাগার নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায়। সরকার সম্প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।

গত ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে একটি খসড়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারি বিপিসির অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি বিভাগ বিপিসিকে বলেছে, ইআরএল কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য 'ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২' শীর্ষক প্রকল্পটি ইআরএল এবং এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগী চুক্তির ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রণালয় বিপিসিকে প্রস্তাবিত এমওইউ পরীক্ষানিরীক্ষা করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়।

পরবর্তীতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিপিসির তিনজন কর্মকর্তা, ইস্টার্ন রিফাইনারির তিনজন কর্মকর্তা এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করছেন বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) খালিদ আহম্মেদ।

বিপিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে এমওইউ-এর খসড়া চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে সম্পাদিত কারিগরি ও আর্থিক বিষয়াদি, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কর্মপ্রক্রিয়া, বাস্তবায়নের পর ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং ইক্যুইটি হিস্যাগুলো ঠিক করবে এই কমিটি।

বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবকিছুই এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।'

এস আলম গ্রুপের প্রাক্কলন অনুযায়ী, দ্বিতীয় তেল শোধনাগারটি নির্মাণের জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। প্রতিষ্ঠানটির একজন নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেন, 'আমরা সরকারকে তেল শোধনাগার নির্মাণের প্রস্তাব ও রোডম্যাপ জমা দিয়েছি। সরকারও এতে সম্মত হয়েছে এবং একটি কমিটি গঠন করেছে।'

ইস্টার্ন রিফাইনারির প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, দ্বিতীয় ইউনিটটির তেল পরিশোধন করার বার্ষিক সক্ষমতা ৩০ লাখ টন হওয়ার কথা থাকলেও এস আলমের প্রস্তাবনায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টন পরিশোধন সক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লাখ টন পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা রয়েছে। দেশে পর্যাপ্ত পরিশোধন সুবিধা না থাকায় চাহিদার ৮০ শতাংশই পরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয়। ডিজেল, পেট্রোল ও জেট ফুয়েলের মতো পরিশোধন করা পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় এগুলো আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাড়তি খরচ হয়।

পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় ২০১২ সালে দ্বিতীয় ইউনিট তৈরির প্রথম প্রস্তাব দেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি। তখন প্রকল্পটির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা।

পরে দফায় দফায় এই প্রস্তাব সংশোধন-পরিমার্জন করা হয়। এক যুগ পর গত বছর এই প্রকল্পের খরচ দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকায়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, মূলত বিনিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পটিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সরকার এই প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি।

শেষমেশ গত বছর নিজস্ব অর্থায়নে শোধনাগারটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। পরিকল্পনা ছিল, প্রকল্পের ৭০ শতাংশ ব্যয় বিপিসিকে ঋণ হিসেবে দেবে অর্থ মন্ত্রণালয় আর বাকি ৩০ শতাংশ বিপিসি তাদের তহবিল থেকে দেবে।

সর্বশেষ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী অর্থ বিভাগ এই প্রকল্পের ২৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকার মধ্যে ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা এবং বিপিসি ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে সম্মত হয়েছিল। ৪৯৩ কোটি টাকার সংস্থান বাকি থাকলেও বিপিসি বলেছিল, সরকার না পারলে তারাই দেবে।

ইস্টার্ন রিফাইনারির মূল ওই পরিকল্পনাটি বাতিল না হলেও সরকার এখন যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এস আলমের প্রস্তাবকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, 'আমরা আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তাব অনেক আগেই জ্বালানি বিভাগে পাঠিয়ে রেখেছি। তাদের সেটা একনেক সভায় উত্থাপন করার কথা।'

গত বছরের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের বাজার বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর থেকেই তেল শোধনাগার তৈরিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের প্রথম বেসরকারি তেল শোধনাগার তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করেছে বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

Comments

The Daily Star  | English

Experts from four countries invited to probe into Dhaka airport fire: home adviser

Says fire that spread fast due to chemicals, garment materials was contained in time

6m ago