অন্তঃসত্ত্বা ও নতুন মায়েদের ৭৭ শতাংশ উদ্বেগ-বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন: আইসিডিডিআরবি

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ও সন্তান জন্মের পর ৭৭ শতাংশ নারী বিষণ্নতা কিংবা উদ্বেগজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ একইসঙ্গে এই দুই সমস্যার মুখোমুখি হন।

আজ মঙ্গলবার আইসিডিডিআরবি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র) এক গবেষণা ফলাফল তুলে ধরে এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি এদিন অ্যাডসার্চ প্রকল্পের 'এনহ্যানসিং অ্যাক্সেস টু মেন্টাল হেলথ সার্ভিস থ্রু টেলিমেডিসিন হেলথ সার্ভিস অ্যাট ওয়েলবিং সেন্টার ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।

এই গবেষণার আওতায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ঢাকার বাইরে সাতটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সাড়ে সাত হাজার জনকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

বিষণ্ণতায় আক্রান্ত নারীদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কোনো দুঃখবোধ, ঘুমের ব্যাঘাত, কাজের আগ্রহ-আনন্দ হারিয়ে যাওয়া, ক্লান্তি, নিজেকে দোষারোপ, খাবারে অরুচি, মনোযোগের অভাব এবং কখনো কখনো আত্মহত্যার চিন্তা আসার লক্ষণ পাওয়া গেছে।

উদ্বেগের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে ছিল স্নায়বিক অস্থিরতা, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, হঠাৎ ভয় পাওয়া ও অস্থিরতা।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, দেশে পুরুষের তুলনায় নারীদের মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। গর্ভকালীন ও প্রসবোত্তর সময়ে এই ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে প্রজনন-বয়সী নারীদের উদ্বেগ ও বিষণ্নতার লক্ষণ মূল্যায়নে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০২২ এর তথ্য ব্যবহার করে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ হাজার ২৯ জনের মধ্যে শতকরা চার শতাংশ মাঝারি-তীব্র উদ্বেগ এবং শতকরা পাঁচ শতাংশ মাঝারি-তীব্র বিষণ্নতায় ভুগছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, ভৌগলিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ বিভাগ—খুলনা, রংপুর ও সিলেটের নারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।

এছাড়া, চার হাজার ৯৮৪ কিশোরীকে নিয়ে পরিচালিত বাংলাদেশ অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং সার্ভে ২০১৯-২০ অনুসারে, সাইবার বুলিং কিশোরী নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। জরিপে অংশ নেওয়া কিশোরীদের মধ্যে আট শতাংশ গত এক বছরে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে ১২ শতাংশ কিশোরীর মধ্যে তীব্র বিষণ্নতা রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে ৯৭ কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৪ কোটিই বাস করেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। ২০১৯ সালের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে উঠে আসে, বাংলাদেশে অন্তত ১৯ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন।

বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় মানসিক চিকিৎসকের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। দেশে মানসিক চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২৬০ জন। অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য দুইজনেরও কম। মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন ৫৬৫ জন অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য চারজনেরও কম। এদের অধিকাংশই শহর এলাকায় থাকায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সরাসরি মানসিক সেবা দেওয়া চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago