দেশে শিশুদের রক্তে সীসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক: গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

দেশে শিশুদের রক্তে সীসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে দূষণ থেকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)।

আজ বুধবার সংস্থাটি 'বাংলাদেশে সীসা দূষণ প্রতিরোধ: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা সভা থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সীসা দূষণের ব্যাপকতা ও এর ভয়াবহতা তুলে ধরা এবং এর থেকে মুক্তির উপায়গুলো আলোচনা করা।

আইসিডিডিআর,বির অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. জেসমিন সুলতানা ২০২২-২৪ সালের মধ্যে ঢাকায় পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরেন। ওই গবেষণায় দুই থেকে চার বছর বয়সী ৫০০ জন শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

তিনি জানান, ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সিডিসির উদ্বেগজনক মাত্রা প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে বেশি সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

গবেষণায় চিহ্নিত সীসানির্ভর শিল্প স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সীসার মাত্রা ছিল পাঁচ কিলোমিটারের বেশি দূরে বাস করা শিশুদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।

সীসার অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঘরের ভেতরে ধূমপান, দূষিত ধূলিকণা, সীসাযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী ও রান্নার পাত্র।

রক্তে সীসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুদের রক্তে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সীসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করে।

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সীসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ, যেখানে প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চ মাত্রার সীসা নিয়ে জীবনধারণ করছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৯-১২ সালের মধ্যে ঢাকার বস্তি এলাকায় দুই বছরের কম বয়সী ৮৭ শতাংশ শিশুর রক্তে প্রতি লিটারে সীসার মাত্রা ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ছিল। এটি তাদের শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার একটি প্রধান কারণ।

আলোচনা সভা থেকে সীসার উৎসগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আইসিডিডিআর,বির হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. সারাহ স্যালওয়ে বলেন, 'সীসা দূষণ বাংলাদেশের একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রায়ই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। বিশেষত, দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানার আশেপাশের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।'

সীসা একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু, যা নীরবে লাখ লাখ মানুষের, বিশেষ করে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইসিডিডিআর,বির সাবেক পরিচালক প্রফেসর স্টিভ লুবি বলেন, সীসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে, যার ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা (আইকিউ) ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে।

'আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে বাতাস নেই, যে খাবার খাই, যে দূষিত মাটি বা ধূলিকণা স্পর্শ করি এবং এমনকি গর্ভাবস্থায় মায়ের প্লাসেন্টার মাধ্যমেও সীসা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।'

'বিভিন্ন উপায়ে সীসা প্রবেশ করে বলে এর সংস্পর্শ থেকে বাঁচা প্রায় অসম্ভব, যদি না আমরা পরিবেশে এর মূল উৎসগুলো বন্ধ করি,' বলেন তিনি।

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, 'সীসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে এবং দেহে পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি করে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতকেই পিছিয়ে দেবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Fire breaks out at building in Mirpur's Kalshi

Cause of the fire could not be known immediately

46m ago