গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্স, উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করছে আইইডিসিআর
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগের মতো উপসর্গ নিয়ে দুইজনের মৃত্যু ও শতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ায় নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
এর আগে উপজেলার দুটি গ্রামের নয়টি বাড়িতে ফ্রিজে সংরক্ষিত গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
আজ সোমবার রংপুরের জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সতর্কতার অংশ হিসেবে নমুনা সংগ্রহ চলছে। আইইডিসিআরের টিম আরও কয়েক দিন নমুনা সংগ্রহ করবে।'
তবে কত জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারেননি তিনি।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু ছাঈদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের দুটি গ্রামে চারদিন অভিযান চালিয়ে আমরা নয়টি বাড়ির ফ্রিজে সংরক্ষিত গরুর মাংস পরীক্ষা করি। সেই মাংসে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। ২২ আগস্ট আমরা রিপোর্ট হাতে পেয়েছি।'
'কম দামে মাংস কিনে ফ্রিজে রেখেছিলেন বলে তারা জানিয়েছেন,' বলেন ছাঈদ।
'আমরা ইতোমধ্যে ৪০ হাজার গরুকে টিকা দিয়েছি। লোকজনকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ করছি যেন কেউ অসুস্থ গরু জবাই না করেন। পাশাপাশি কসাইদেরও সতর্ক করা হচ্ছে,' বলেন তিনি।
এর আগে পীরগাছা উপজেলায় শতাধিক মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হন, পাশাপাশি তাদের শরীরে কালচে ক্ষত দেখা দেয় বলে জানান পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত রবিন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে জ্বর আসে। তারপর ত্বক লাল হয়ে যায় এবং কালো ক্ষত তৈরি হয়। ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।'
'এই একই উপসর্গ নিয়ে শতাধিক ব্যক্তি আমাদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। আইইডিসিআর টিম তাদের শরীর থেকে নমুনা নিয়েছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আগস্টে ও সেপ্টেম্বরে দুইজন মারা গেছেন, যাদের শরীরে একই উপসর্গ ছিল। তাদের নমুনাও পরীক্ষা করা হবে,' বলেন তিনি।
গত ৯ আগস্ট রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের মাইটাল গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক (৬০) ও গত ৬ সেপ্টেম্বর একই ইউনিয়নের আনন্দী ধনীরাম গ্রামের কমলা বেগম (৫৮) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
রাজ্জাকের ছেলে মিজানুর রহমান জানান, তারা বাবা ২ আগস্ট বিকেলে বাড়ির একটি অসুস্থ গরু জবাই করেছিলেন। মিজান তার বাবাকে সহযোগিতা করেন।
'আমার এবং পরিবারের আরও তিন সদস্যের শরীরে একই উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আমরা সবাই চিকিৎসা নিচ্ছি,' বলেন তিনি।
মিজান আরও বলেন, 'প্রথমে জ্বর আসে। এরপর শরীরের বিভিন্ন অংশে লালচে রঙের ফোঁড়া ও ঘা দেখা দেয়। ঘা আস্তে আস্তে কালো হয়ে যায়। সারা শরীরে এখনো ব্যথা আছে।'
কমলা গরুর মাংস পরিষ্কার করে রান্না করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে দুলাল মিয়া। তিনি জানান, দুলাল ও তার পরিবারের আরও দুইজন চিকিৎসা নিয়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা বলেন, 'অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর কাঁচা মাংস নাড়াচাড়া করলে অথবা খেলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষ সংক্রমিত হন না।'
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ মুহাম্মদ রাসেল বলেন, 'প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের পৃথক দুটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আপাতত যত্রতত্র গরু জবাই ও মাংস বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে।'
'অসুস্থ গরু যেন কেউ জবাই না করেন এবং পীরগাছা থেকে অন্য কোথাও যাতে গরু পাঠানো না হয়—সে বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে,' বলেন তিনি।


Comments