অ্যানথ্রাক্স কীভাবে ছড়ায়, প্রতিরোধে করণীয়

অ্যানথ্রাক্স রোগ, অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধ, অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসা, অ্যানথ্রাক্স লক্ষণ, অ্যানথ্রাক্স ত্বক সংক্রমণ, অ্যানথ্রাক্স পরিপাকতন্ত্র, অ্যানথ্রাক্স শ্বাসজনিত, গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স, অ্যানথ্রাক্স স্পোর, অ্যানথ্রাক্স টিকা, অ্যানথ্রা
ছবি: সংগৃহীত

অ্যানথ্রাক্স নতুন কোনো রোগ নয়, প্রায়ই এই রোগে আক্রান্তের খবর শোনা যায়। গবাদিপশুর পাশাপাশি মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে অ্যানথ্রাক্সে।

অ্যানথ্রাক্স কীভাবে ছড়ায় এবং তা প্রতিরোধ করণীয় নিয়ে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

অ্যানথ্রাক্স কী, কীভাবে ছড়ায়

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, অ্যানথ্রাক্স প্রাণীবাহিত একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ, যা ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়। মূলত গরু, ছাগল, ভেড়া—এ ধরনের প্রাণী অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছোট গুটি আকারের, যেটিকে স্পোর বলে। এই স্পোর মাটিতে অনুকূল পরিবেশে অনেক বছর, দীর্ঘসময় ধরে টিকে থাকতে সক্ষম। সুস্থ গবাদিপশু ঘাস খেতে যায় মাঠে, সেখানে যদি অ্যানথ্রাক্সের স্পোর থাকে এবং ঘাস খাওয়ার সময় মুখের কোণায় কেটে গেলে সেখান দিয়ে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু অনুপ্রবেশ করতে পারে। আর এভাবে গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পায়।

অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে গেলে মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানোর জন্য অনেকে জবাই করে মাংস বিক্রি করতে চায়, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত পশু জবাই করার পর মাংস, রক্ত, চামড়ার সংস্পর্শ থেকে মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না, আক্রান্ত প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়।

ধরন ও লক্ষণ

অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন:

১. কিউট্যানিয়াস বা ত্বকের অ্যানথ্রাক্স—সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কিউট্যানিয়াস বা ত্বকের অ্যানথ্রাক্স। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে গেলে এবং ত্বক কেটে গেলে বা ক্ষতের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স স্পোর মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে মানুষের ত্বক অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হতে পারে।

কিউট্যানিয়াস অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলে জ্বর হয়, ত্বকে ফোস্কা, ফুসকুড়ির মতো দেখা দেয়, ফুলে যায়, কিছু দিন পর ত্বকের ক্ষত বা ঘা কালো আকার ধারণ করে, ব্যথার অনুভূতি হয়।

২. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বা পরিপাকতন্ত্রের অ্যানথ্রাক্স—পেটের ভেতরে অ্যানথ্রাক্সে জীবাণু প্রবেশ করলে বিরল এই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বা পরিপাকতন্ত্রের অ্যানথ্রাক্স হয়। আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে, কাঁচা মাংস, আধা সেদ্ধ মাংস খেলে পেটের ভেতরে পরিপাকতন্ত্রের অ্যানথ্রাক্স হতে পরে। এর ফলে পেট ব্যথা, বমি, বমি বমি ভাব, জ্বর, ডায়রিয়া, রক্তবমিও হতে পারে।

৩. পালমোনারি বা শ্বাসজনিত অ্যানথ্রাক্স—ট্যানারিতে কাজ করার সময়, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত প্রাণীর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার সময় অ্যানথ্রাক্সের স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করলে পালমোনারি বা শ্বাসজনিত অ্যানথ্রাক্স হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাসহ গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই ধরনটি খুবই বিরল, কিন্তু ভয়াবহ।

এছাড়া কৃত্রিমভাবে অ্যানথ্যাক্স জীবাণু তৈরি করে তা যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। কৃত্রিমভাবে তৈরি অ্যানথ্যাক্স জীবাণু মানুষের শ্বাসতন্ত্রে আঘাত করলে গুরুতর অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। তাই কোথাও অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হলে সর্তক থাকতে হবে, অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পরীক্ষা করে দেখতে হবে এটির উৎস কোথায় এবং এর বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে কি না।

চিকিৎসা

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন তৈরি করেছে আইইডিসিআর। সেই অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য মলম, ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অ্যানথ্রাক্সের ধরন বুঝে রোগীকে গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে রোগের জটিলতা বাড়বে।

প্রতিরোধে করণীয়

রংপুরসহ দেশের কিছু জায়গায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এতে উদ্বেগের কিছু নেই। তবে এটি প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

১. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু এবং এ রোগে মৃত পশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

২. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু জবাই বন্ধ করতে হবে।

৩. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস বিক্রি এবং খাওয়া যাবে না।

৪. আক্রান্ত ও অসুস্থ পশুর চিকিৎসার জন্য প্রাণীসম্পদ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

৫. যারা পশুশ্রমিক, কসাই নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

৬. পশুদের নিয়মিত অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।

৭. এছাড়া উপদ্রুত বা যে এলাকায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হবে তার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সব চার-পেয়ে প্রাণীকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।

৮. অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু মারা গেলে পুড়িয়ে ফেললে সবচেয়ে ভালো। সেটি সম্ভব না হলে মাটিতে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।

৯. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অসুস্থ গরু বিক্রি ও জবাই করে মাংস কাটার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। নিয়মিত মাংসের দোকান পরিদর্শন করতে হবে এর গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য।

Comments

The Daily Star  | English

Highest budget for education if BNP returns to power, pledges Tarique

Party's plans include repairing and improving dilapidated primary schools, he says

1h ago