ঢামেকে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়: অনেকেই আসছেন ঢাকার বাইরে থেকে

তিন দিন আগে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ হানিফ। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যেতে বলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রেফার করার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঢামেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন হানিফ।

তিনি জানান, তার প্লাটিলেট কাউন্ট কমে ২০ হাজারে নেমে আসায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

ভোলার মনপুরার বাসিন্দা ৬১ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলমগীর জানান, তিনি প্রায় পাঁচ দিন আগে তার কর্মস্থল পটুয়াখালীর বাউফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। শুরুতে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।

আলমগীর বলেন, 'অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে ডাক্তার আমাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। আমি গত তিন দিন ধরে এখানে চিকিৎসাধীন।'

হানিফ ও আলমগীরের মতো আরও অনেক ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন। এতে চাপ বাড়ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসয়াপাতালে। হাসপাতালের চতুর্থ তলায় তাদের জন্য ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের অনেক রোগীই ঢাকার বাইরে থেকে আসা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী। এদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৯২ জন ভর্তি হয়েছেন ঢামেকে। সেখানে মারা গেছেন ২৩ জন।

সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ৯৮৭ জন। ৪৪০ জন রোগী নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতাল।

নারায়ণগঞ্জের ফুল ব্যবসায়ী ৩৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ সোহাগ জানান, তীব্র জ্বর, বমি ভাব ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি ঢামেকে এসেছেন।

তিনি বলেন, 'কম খরচে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার জন্য আমি এখানে এসেছি।'

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বাসিন্দা ৪৯ বছর বয়সী নাসির উদ্দিনও একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে ঢামেকে ভর্তি হয়েছেন।

ঢামেকে এফসিপিএস কোর্সে প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক নাজমুল সাকিব বলেন, এখানে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরের।

তিনি বলেন, 'আমরা কেবল তাদেরকেই ভর্তি নিচ্ছি যাদের অবস্থা গুরুতর অথবা যাদেরকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।'

ডা. সাকিব বলেন, জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, যেমন—শরবত, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন এবং ফলের রস পান করার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দেন তিনি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের প্রায়ই স্থানীয় হাসপাতাল থেকে শহরের বড় হাসপাতালগুলোতে রেফার করা হয়।

তিনি বলেন, 'এই রোগীরা যখন এসে পৌঁছান, তাদের অবস্থা প্রায়ই সংকটাপন্ন থাকে। অনেকেই রাজধানীর বাইরে আক্রান্ত হলেও ঢাকার হাসপাতালে এসে মারা যান। শহরে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'চিকিৎসা শুরুর আগে সময়ক্ষেপণ একটি বড় সমস্যা। অনেক জেলা থেকে ঢাকায় আসতে সাত-আট ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে, এরপর হাসপাতালে ভর্তির জন্য আরও কিছু সময় চলে যায়। কোনো রোগী যদি আগে থেকেই শকে থেকে থাকলে চিকিৎসায় বিলম্ব প্রাণঘাতি হতে পারে।

এ ধরনের ঘটনা এড়াতে জেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. আহসান।

তিনি বলেন, 'কেবল গুরুতর অবস্থার রোগীদের ঢাকায় স্থানান্তর করা উচিত। অনেক সময় রোগীর অবস্থা ততটা গুরুতর না হলেও, ভয়ে দ্রুত রেফার করে দেওয়া হয়।'

তিনি আরও বলেন, শকে থাকা রোগীদের স্থিতিশীল অবস্থায় আনার পরই কেবল স্থানান্তর করা উচিত। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক হাসপাতালে এটি করা হয় না। এর ফলে রোগীরা 'ডিকম্পেনসেটেড শক' বা গুরুতর শক অবস্থায় এসে পৌঁছান, যখন মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।'

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

4h ago