হাসিনা ভারতের বন্ধু, আর ভারত হাসিনার বন্ধু: শশী থারুর

কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। ফাইল ছবি: স্টেটসম্যান
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। ফাইল ছবি: স্টেটসম্যান

কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ও লোকসভার সদস্য শশী থারুর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তার দেশের সরকারের প্রশংসা করেছেন। তিনি হাসিনাকে ভারতের বন্ধু বলেও আখ্যা দেন।

আজ সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা এমন মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রশংসার পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা জানান শশী থারুর।

তিনি বলেন, 'আমরা যদি তাকে সাহায্য না করতাম, তাহলে তা ভারতের জন্য অসম্মানের হতো। আমরা যদি আমাদের বন্ধুর সঙ্গে সদয় আচরণ না করতাম, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ আমাদের বন্ধু হতে চাইতো না।'

'শেখ হাসিনা ভারতের বন্ধু আর ভারতকে শেখ হাসিনার বন্ধু' হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'যখন বন্ধু বিপদে পড়ে, তখন তাকে সাহায্য করার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয় না। তাদেরকে সাহায্য করতে হয়, নিরাপত্তা দিতে হয়। ভারত ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছে। আমরা কিছু মানদণ্ড মেনে কাজ করি। আমাদের সরকার তাকে এখানে এনে, নিরাপত্তা দিয়ে সঠিক কাজটিই করেছে।'

শেখ হাসিনাকে ভারতের বন্ধু বলে আখ্যায়িত করেন থারুর। ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনাকে ভারতের বন্ধু বলে আখ্যায়িত করেন থারুর। ছবি: সংগৃহীত

এই নেতা আরও বলেন, 'শেখ হাসিনা কতদিন এখানে থাকতে চান, তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়। আপনি কাউকে বাড়িতে ডেকে আনার পর তাকে নিশ্চয় জিজ্ঞাসা করেন না, কবে তিনি চলে যাবেন। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আমরা অপেক্ষা করব এবং দেখব কী হয়। অন্য কোথাও যাওয়ার আগে তিনি কতদিন এখানে থাকতে চান, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার আগে তাকে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হবে। ভিসাসহ আরও অন্য অনেক জটিলতা আছে। আপাতত, তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন এবং আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিৎ যে যখন আমাদের বন্ধু বিপদে পড়েছিলেন, তখন আমরা তার পাশে ছিলাম।'

গত ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে পৌঁছানোর পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সর্বদলীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন। পরে লোকসভা ও রাজ্যসভাতেও এ বিষয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

কংগ্রেসসহ সব বিরোধীদল বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যেকোনো উদ্যোগে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা দেওয়ার‍ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

উদ্বেগের কারণ নেই

সাক্ষাৎকারে শশী থারুর আরও বলেন যে প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ভারতের উদ্বেগের কারণ নেই।

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোদির প্রশংসা করেন থারুর। ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোদির প্রশংসা করেন থারুর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের চলমান ঘটনাগুলো নয়াদিল্লি-ঢাকা সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলতে পারে, এর জবাবে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করা আমাদের মৌলিক চাহিদার মতো। আমাদের সবচেয়ে প্রাধান্যের বিষয় হলো বাংলাদেশি নাগরিকদের মঙ্গল যাতে হয়, সে দিকে নজর দেওয়া। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে রাষ্ট্র এবং সুনির্দিষ্ট কোনো নেতা।'

তিনি বলেন, 'আমরা বাংলাদেশিদের পাশেই আছি। যেমনটা ছিলাম ১৯৭১ সালে। আমরা ভালো-মন্দ সব সময়েই তাদের সঙ্গে ছিলাম। এমনকি, যখন তাদের সরকার আমাদের প্রতি খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেনি, তখনো আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে এসেছি এবং নিশ্চিতভাবেই, আগামীতেও এই সম্পর্কে কোনো অবনতি হবে না।'

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সরকার ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে না।

'ড. ইউনূসকে আমি চিনি'

বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে ড. ইউনূস। ছবি: রয়টার্স
বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে ড. ইউনূস। ছবি: রয়টার্স

'আমি ব্যক্তিগতভাবে মুহাম্মদ ইউনূসকে চিনি' জানিয়ে শশী থারুর বলেন, 'তিনি অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আমার মতে, তিনি জামায়াতে ইসলামী বা পাকিস্তানি আইএসআইয়ের চেয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন। আপনি যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সার্বিক গঠন লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন ভারতের সঙ্গে শত্রুভাবাপন্ন, এমন কোনো দেশের তকমা এই সরকারের ওপর পড়ার কারণ নেই।'

এই কংগ্রেস নেতার ভাষ্য, 'ভারতের জন্য সব সময়ের উদ্বেগের বড় কারণ হলো—চীন বা পাকিস্তান ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবে কি না।'

'এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবসময়ই খানিকটা সম্ভাবনা থাকে যে অস্থিতিশীল পরিবেশে পাকিস্তানের আইএসআই সহিংসতা ছড়াবে বা উসকানি দেবে। অথবা বাংলাদেশে চীন তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাবে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে যারা নজর রাখছেন তাদের জন্য এগুলো চিন্তার বিষয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রাথমিক বক্তব্যে এমন কিছু নেই যা আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
Largest Islamic bank in the making

Largest Islamic bank in the making

The five banks slated for consolidation are First Security Islami Bank, Union Bank, Global Islami Bank, Social Islami Bank and Exim Bank.

12h ago