গাজা, লেবানন যুদ্ধের জেরে ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কে অবনতি 

দক্ষিণ লেবাননের একটি গ্রামে ইসরায়েলের হামলা। ছবি: এএফপি

গাজায় গণহত্যা ও লেবানন, ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্পর্ক ক্রমশই অবনতির দিকে যাচ্ছে। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে দেশটির কিছু উগ্র নেতার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে ইউরোপীয় দেশগুলো। খবর সিএনএনের। 

বার্লিনভিত্তিক ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (ইসিএফআর)-এর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো হিউ লোভাট সিএনএনকে বলেন, 'ইসরায়েলের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের টানাপোড়েন স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এখন।' ইসরায়েলর ওপর যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে না পারা নিয়েও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো ব্যাপক হতাশ বলে জানান তিনি।

'ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে রাশ টানতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও কাজ করা উচিত ছিল বলে মনে করে অনেক ইউরোপীয় দেশ,' বলেন লোভাট।

বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্য সহায়তা আটকে দিয়ে উত্তর গাজাকে জনশূন্য করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। খাবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা এই অঞ্চল ছাড়তে বাধ্য হবে, এই হচ্ছে পরিকল্পনা।

এর জবাবে বাইডেন প্রশাসন ৩০ দিনের মধ্যে গাজার মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলকে। সেটা না করলে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে ওয়াশিংটন। 

ইসরায়েলের এক সপ্তাহের পরিকল্পনাকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের এক মাস সময় দেওয়াকে ভালোভাবে নেয়নি ইইউ। বৃহস্পতিবার ইইউ নেতৃবৃন্দের একটি সম্মেলনের আগে এ ব্যাপারে সমালোচনা করেন সংস্থাটির পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বরেল। 

রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বরেল বলেন, 'গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে ইসরায়েলকে এক মাস সময় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যে হারে (ইসরায়েলের) হত্যাযজ্ঞ চলছে, এই এক মাসে তো আরও অনেক মানুষ খুন হবে।'

সম্প্রতি লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের উপর বেশ কিছু হামলা চালায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। হামলার বিরুদ্ধে ইইউ রাষ্ট্রগুলো থেকে নিন্দার ঝড় উঠে। গত ১১ অক্টোবর ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন এক সম্মিলিত বিবৃতিতে এ নিয়ে 'ক্ষোভ' প্রকাশ করে।

শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলার সমালোচনা করায় জাতিসংঘ ও এর মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে 'ইহুদি-বিদ্বেষী' বলে আখ্যা দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার এই বক্তব্যেরও তীব্র নিন্দা জানান বরেল।

বর্তমানে শুধু দক্ষিণ লেবাননেই প্রায় ৫০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার শান্তিরক্ষী অবস্থান করছে। যার মধ্যে স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও ফ্রান্সের শান্তিরক্ষীরাও আছেন। 

গত মঙ্গলবার এক কেবিনেট বৈঠকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, 'নেতানিয়াহুকে ভুলে গেলে চলবে না তার দেশের জন্ম হয়েছিল জাতিসংঘের একটি সিদ্ধান্তের কারণে। এখন জাতিসংঘকে এভাবে অমান্য করা ঠিক হচ্ছে না।'

ফ্রান্স এর আগে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি অন্যান্য দেশকে একই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গত মে মাসে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আনা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকেও সমর্থন জানিয়েছিল দেশটি। 

ইসরায়েলের সহিংসতার মাঝে গত শুক্রবার লেবানন সফর করেন ইতালির প্রেসিডেন্ট জর্জিয়া মেলোনি। তিনিও ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।

ইতালির সংবাদ সংস্থা এএনএসএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সিনেটে দেওয়া এক ভাষণে মেলোনি বলেন, 'আমাদের মিত্র ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের চেয়েও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছি আমরা। (ইসরায়েলের সঙ্গে) সব ধরনের নতুন চুক্তি বন্ধ থাকবে।' 

ইসরায়েলের তৃতীয় সর্বোচ্চ অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ ছিল ইতালি।

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গত বুধবার জানান, দুজন ইসরায়েলি মন্ত্রীকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তার প্রশাসন। সে দুজন হচ্ছেন– ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মট্রিচ।

হামাসকে 'জঙ্গি' গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করে ইইউ। গতবছর ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইইউ ঢালাওভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়। তবে গত এক বছরে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড অনেক ইউরোপীয় দেশেই মতভেদ তৈরি করেছে।

গাজায় গণহত্যার মাঝে গত মে মাসে স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে একসঙ্গে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স, ইতালির মতো দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের মতো অনেক দেশ দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিলেও এক-দুই প্রসঙ্গে ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে।

তবে জার্মানি এখনো ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির সমর্থনের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পর ইসরায়েলকে সর্বোচ্চ অস্ত্র সহায়তা দেয় জার্মানি। ইসরায়েলে মোট অস্ত্র সরবরাহের ৩০ শতাংশই আসে জার্মানি থেকে।

গত বুধবার জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত আট সপ্তাহে ইসরায়েলে ৩১ মিলিয়ন ইউরোর সামরিক সরঞ্জাম এবং যুদ্ধাস্ত্র পাঠিয়েছে জার্মান সরকার, যা বছরের বাকি সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

1h ago