যুক্তরাজ্যে নতুন অভিবাসন নীতিমালায় আসছে যেসব পরিবর্তন

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি ২০২৫
যুক্তরাজ্যে নতুন অভিবাসন নীতিমালা চালু হচ্ছে। প্রতীকী ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি সরকার নতুন অভিবাসন নীতিমালার ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ব্রিটেনের সীমান্তের 'নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার' অঙ্গীকার করেছেন।

আজ সোমবার এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।

উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন

বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নিয়ম
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি: এএফপি

নতুন নীতিমালা অনুসারে, যুক্তরাজ্যে কমপক্ষে ১০ বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করার আগে কেউ অভিবাসনের যোগ্যতা অর্জন করবেন না। বর্তমান নীতিতে এই সময়সীমা পাঁচ বছর।

পাশাপাশি, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার মানদণ্ডও আরও কঠোর করা হবে। পোষ্য কোটায় প্রাপ্তবয়স্করা যুক্তরাজ্যে অভিবাসন করতে চাইলে তাদেরকেও ইংরেজি ভাষার প্রাথমিক জ্ঞানের প্রমাণ দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, 'আমাদের দেশে যারা আসতে চায়, তাদেরকে (যুক্তরাজ্যের) সমাজের অংশ হওয়ার অঙ্গীকার নিতে হবে এবং আমাদের ভাষা শিখতে হবে।'

'অভিবাসন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ, যেমন কাজ, পরিবার ও পড়াশোনার মানদণ্ড আরও কঠোর করা হবে, যাতে আমাদের হাতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকে', যোগ করেন স্টারমার।

তিনি বলেন, 'এসবের (নীতির) প্রয়োগ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠোর হবে'।

যে কারণে বদলাচ্ছে নীতি

যুক্তরাজ্যের রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ (বাঁয়ে) ও রানকর্ন উপনির্বাচনে জয়ী সারাহ পোচিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ (বাঁয়ে) ও রানকর্ন উপনির্বাচনে জয়ী সারাহ পোচিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্লেষকদের মতে, অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে ও কট্টর ডানপন্থি দলগুলোর জনপ্রিয়তায় রাশ টেনে ধরতে এই নীতিমালা নিয়ে এসেছে লেবার পার্টি।

স্টারমার জানান, তিনি 'সীমান্ত উন্মুক্ত পরীক্ষার' অবসান ঘটাতে চান। তিনি দাবি করেন, এই পরীক্ষামূলক অভিবাসন নীতির কারণে আগের কনজারভেটিভ পার্টির সরকারের আমলে অভিবাসীর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি বেড়ে যায়।

আজ সোমবার দিনের পরবর্তী অংশ সরকারের অভিবাসন বিষয়ক শ্বেতপত্র পার্লামেন্টে উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

স্টারমার জানান, এই নীতিমালা 'অবশেষে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনবে এবং রাজনীতি, অর্থনীতি ও সার্বিকভাবে, দেশের জন্য একটি অন্ধকার অধ্যায় শেষ করবে।'

গত বছর লেবার পার্টি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অভিবাসনের হার কমানোর অঙ্গীকার করে।

২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ এর জুন পর্যন্ত ১২ মাসে মোট অভিবাসনের (নেট ইমিগ্রেশন) সংখ্যা ছিল সাত লাখ ২৮ হাজার।

সদ্য সমাপ্ত স্থানীয় নির্বাচনে অভিবাসনবিরোধী রিফর্ম পার্টির জয়যাত্রায় নতুন করে চাপের মুখে পড়েন স্টারমার। ভোটের ফলে অনেকটাই এগিয়ে আছে রিফর্ম পার্টি আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে লেবার পার্টি।

ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্টারমার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনার 'অঙ্গীকার' করছেন।

'বৈপ্লবিক সংস্কার প্যাকেজ'

যুক্তরাজ্যে অভিবাসন
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার। ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার আজ পার্লামেন্টে ওই শ্বেতপত্র উপস্থাপন করবেন। তিনি রোববার জানান, নতুন নীতিতে যুক্তরাজ্যের মাটিতে কোনো বিদেশি নাগরিক ফৌজদারি অপরাধ করলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিধান যুক্ত করা হবে।

বর্তমানে শুধু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশি নাগরিকদের অপর সরকারের নজর থাকে।

সাধারণত যেসব বিদেশি নাগরিক এক বছরের বেশি কারাদণ্ড পান, তাদেরকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

কুপার জানান, নতুন নীতি অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশিদের ওপর কড়া নজর রাখবে সরকার।

তিনি বলেন, 'বিদেশি অপরাধীদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে বেশ দুর্বল। আমাদের আরও কঠোর মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।'

কুপার আরও জানান, এই 'বৈপ্লবিক সংস্কার প্যাকেজের' মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ অভিবাসন প্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্যে আসা ঠেকানো হবে।

এই নীতিতে দক্ষ কর্মী ক্যাটেগরিতে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে মানদণ্ড কঠোর করা হবে। যার ফলে কম দক্ষতার মানুষ যুক্তরাজ্যের নাগরিক হতে হিমশিম খাবে।

সানডে টেলিগ্রাফে লেখা কলামে কুপার বলেন, যুক্তরাজ্যে চাকরি পেতে হলে বিদেশি কর্মীদের ডিগ্রি থাকতে হবে। 

কুপার আরও জানান, এ বছর কম-দক্ষ কর্মীদের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার ভিসা কমানোর লক্ষ্য হাতে নিয়েছেন তিনি।

ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, উচ্চ দক্ষতার মানুষ, যেমন নার্স, ডাক্তার, প্রকৌশলী ও এআই খাতের বিশেষজ্ঞদের জন্য দ্রুত ভিসার ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা 'আইন মেনে চলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান' রাখতে পারেন।

ফ্রান্স থেকে রবারের নৌকায় চেপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্যে আসা ঠেকাতেও চাপে আছে স্টারমারের সরকার।

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি
নৌকা করে যুক্তরাজ্যে আসার সময় উদ্ধার পাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশী। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই প্রক্রিয়ায় ৩৬ হাজার ৮০০ জন দেশটিতে এসে পৌঁছায়।

২০২৪ সালে ১৪ শিশুসহ ৮৪ ব্যক্তি নৌকায় করে যুক্তরাষ্ট্রে আসার প্রচেষ্টায় নিহত হয়েছেন।

স্টারমারের সরকার জানিয়েছে, গত জুলাইর নির্বাচনের পর থেকে ২৪ হাজার মানুষকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের যুক্তরাজ্যে থাকার আইনসঙ্গত কারণ ছিল না।

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

5h ago