ত্রাণকেন্দ্রের কাছে আবারও ইসরায়েলি সেনার গুলি, নিহত ২৭

জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ পেয়েছে এক ফিলিস্তিনি। ফাইল ছবি: এএফপি
জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ পেয়েছে এক ফিলিস্তিনি। ফাইল ছবি: এএফপি

গাজার দক্ষিণের শহর রাফায় এক ত্রাণকেন্দ্রের কাছে বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭।

আজ মঙ্গলবার গাজার উদ্ধারকারীদের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি

জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ না পেয়ে খালি বাক্স কাঁধে বাড়ি ফিরছেন এক ফিলিস্তিনি । ছবি: এএফপি
জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ না পেয়ে খালি বাক্স কাঁধে বাড়ি ফিরছেন এক ফিলিস্তিনি । ছবি: এএফপি

গাজার বেসামরিক সুরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল গণমাধ্যমকে বলেন, 'রাফার আল-আলম এলাকায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ত্রাণ সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকা বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে অমানবিক হামলা চালানো হয়। এতে ২৭ জন নিহত ও ৯০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।'

এর আগে মাহমুদ এএফপিকে বলেছিলেন, 'ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক ও ড্রোন ব্যবহার করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে।'

গত রোববার সকালেও একই জায়গায় গুলি চালিয়েছিল ইসরায়েলি সেনা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ত্রাণ নিতে আসা অনেক মানুষ সেদিন হতাহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওই হামলায় ৩১ জন নিহত ও ১৭৬ জন আহত হন।

ওই হামলার দায়ও অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ত্রাণকেন্দ্রে গুলির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'গাজাবাসীরা খাবারের জন্য প্রাণের ঝুঁকি নিচ্ছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।'

গাজার বেসামরিক সুরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বাসাল শুরুতে আজকের হামলায় ১৫ জন নিহতের কথা জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, 'ভোর হতেই রাফার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আল-মাওয়াসি এলাকার আল-আলম মোড়ে হাজারো বেসামরিক মানুষ ত্রাণ সংগ্রহের জন্য জড়ো হতে শুরু করেন। সে সময় ট্যাংক ও ড্রোন থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় ইসরায়েলিরা।'

'ভুল পথে' আসার মূল্য চুকালো ফিলিস্তিনিরা

জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র থেকে ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যে পথে ত্রাণ নিতে আসার কথা, সে পথে না এসে ভিন্ন পথ ধরে একদল মানুষ ত্রাণকেন্দ্রের দিকে আগাতে থাকে।

আইডিএফ'র বিবৃতি বলা হয়, 'সামরিক বাহিনী (ওই মানুষগুলোর দিকে) সতর্কতাসূচক গুলি ছুড়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা পিছপা হয়নি। ফলে, সেনাদের দিকে এগিয়ে আসা কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির দিকে আরও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।'

গাজাবাসী রানিয়া আল-আসতাল (৩০) জানান, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।

'ভোর ৫টার পর থেকে থেমে থেকে গুলির শব্দ পাই। যতবার মানুষ আল-আলম মোড়ের দিকে আগাচ্ছিল, ততবার তাদের দিকে গুলি ছুঁড়ে সেনারা,' এএফপিকে জানান তিনি।

'কিন্তু কেউ পাত্তা দেয়নি। সবাই এক সঙ্গে দৌড়াতে শুরু করে—তখন সেনারা গুলি বাড়িয়ে দেয়।'

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মোহাম্মেদ আল-শায়ের (৪৪) জানান, মানুষ ত্রাণকেন্দ্রের দিকে আগাতে শুরু করার পর 'হঠাৎ করে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। তারপর সরাসরি মানুষের দিকে গুলি ছোড়ে তারা।'

'উপস্থিত জনতার দিকে হেলিকপ্টার ও ড্রোন থেকে গুলির বন্যা আসতে শুরু করে। অনেকেই হতাহত হন,' যোগ করেন তিনি।

'আমি ত্রাণকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারিনি। আমরা কেউ খাবার পাইনি।'

সেনাবাহিনীর দাবি, তারা 'ত্রাণকেন্দ্রে আসা থেকে গাজার বেসামরিক মানুষদের প্রতিহত করেনি।'

ত্রাণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানিয়েছে, আজ তাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলেছে।

তবে প্রতিষ্ঠাটি স্বীকার করে, কয়েকজন বেসামরিক মানুষ 'নিরাপদ পথে' না এসে সামরিক এলাকায় চলে গেলে আহত হন। ইসরায়েলি বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানায় তারা।

মার্কিন সমর্থনপুষ্ট ত্রাণ উদ্যোগের সমালোচনা

ট্রাকে করে গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ প্রবেশ করছে। ছবি: রয়টার্স
ট্রাকে করে গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ প্রবেশ করছে। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন সমর্থনপুষ্ট ও নবগঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্র ওই এলাকা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে।

সম্প্রতি গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমকে নিজেদের নজরদারিতে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে জিএইচএফ'র কার্যক্রম শুরু হয়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রমের প্রধান টম ফ্লেচার গত ১৩ মে এই নবগঠিত প্রতিষ্ঠানটির সমালোচনা করেন। নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে তিনি একে 'মনোযোগ সরানোর উদ্যোগ' ও 'বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত' বলে উল্লেখ করেন।

ইসরায়েলের দাবি, জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম নিখুঁত নয়। গাজায় ত্রাণ প্রবেশের সময় হামাস সেসব ত্রাণ 'চুরি' করে।

এ কারণেই মূলত বেসরকারি উদ্যোগে জিএইচএফ'র মাধ্যমে ত্রাণ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায় ইসরায়েল।

গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখে ইসরায়েল। সম্প্রতি, জিএইচএফ'র মাধ্যমে সামান্য পরিমাণে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। এটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

Comments

The Daily Star  | English
foreign travel rules for government officials Bangladesh

Advisers, secretaries flouting foreign travel rules

CA upset over repeated violations; officials urged to follow directives ahead of election

1h ago