লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন হওয়া ন্যাশনাল গার্ড আসলে কেমন বাহিনী?

লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ ঠেকাতে সম্প্রতি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসী-বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভ ঠেকাতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল ঠেকাতেও এবছর ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল। 

এই ন্যাশনাল গার্ড আসলে কেমন বাহিনী? কেন, কখন, কোথায় তাদের মোতায়েন করা যায়? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন- 

ন্যাশনাল গার্ড কী

ন্যাশনাল গার্ড যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিশেষ রিজার্ভ শাখা। এই বিশেষায়িত বাহিনীর দুটি শাখা আছে—আর্মি ন্যাশনাল গার্ড ও এয়ার ন্যাশনাল গার্ড। 

১৯০৩ সালে মিলিশিয়া অ্যাক্টের মাধ্যমে গঠিত এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৪ লাখ ১৯ হাজার। এদের একাংশ পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের মতো মূল ভূখণ্ডের বাইরে থাকা মার্কিন অঞ্চলগুলোতে দায়িত্ব পালন করে। 

অধিকাংশ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যই খণ্ডকালীন ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণত মাসে একদিন ও বছরে দুই সপ্তাহ দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা থাকে গার্ড সদস্যদের।

ন্যাশনাল গার্ড কখন এবং কোথায় মোতায়েন হয়

ন্যাশনাল গার্ডের দায়িত্ব বহুমুখী। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক—উভয় ক্ষেত্রেই তাদের মোতায়েন করা হয়।

এবছর ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল ও ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলজুড়ে আঘাত হানা হ্যারিকেন ক্যাটরিনার মতো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সাহায্যের জন্য ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল।

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও ন্যাশনাল গার্ড ভূমিকা রাখে। যেমন: ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর ওয়াশিংটন ডিসিতে ২৫ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে দাঙ্গা শুরু হলে স্থানীয় পুলিশকে সাহায্য করতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানো হয়। 

দেশের বাইরেও সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করে এই বাহিনী। ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা।

কে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে পারেন

মোতায়েনের ধরনের ওপর নির্ভর করে ন্যাশনাল গার্ডের কমান্ড। যখন কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের গভর্নরের হাতে থাকে কমান্ড। 

যখন জাতীয় প্রয়োজনে বা দেশজুড়ে তাদের মোতায়েন করা হয়, তখন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

তবে সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের কর্তৃত্ব অগ্রাহ্য করে লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন ট্রাম্প। এজন্য প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য প্রশাসন, যার রায়ে আদালত এই মোতায়েনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

গভর্নরের কর্তৃত্ব অগ্রাহ্য করে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের দৃষ্টান্ত

এর আগেও দুজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট গভর্নরের কর্তৃত্ব অগ্রাহ্য করে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন। 

১৯৬৫ সালে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের দাবিতে অ্যালাবামার সেলমা থেকে মন্টেগোমেরি পর্যন্ত মার্চ করার সিদ্ধান্ত নেন অহিংস নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। তাকে এবং তার সমর্থকদের স্থানীয় পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করতে অ্যালাবামার গভর্নরের কর্তৃত্ব অগ্রাহ্য করে তখন সেখানে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন। 

এর আগে, ১৯৫৪ সালে প্রেসিডেন্ট ডুয়াইট আইজেনহাওয়ারও স্থানীয় বর্ণবাদীদের হাত থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের রক্ষা করতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিলেন। সেবছর সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গের পৃথকীকরণ বেআইনি ঘোষণা করলেও আরকানসাসের কিছু স্কুল মব তৈরি করে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়। 

লিটল রকের একটি স্কুলে এভাবে নয় কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী দিনের পর দিন মবের কাছে লাঞ্ছিত হতে থাকে। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি স্থানীয় গভর্নর। অধৈর্য হয়ে প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার তখন কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেখানে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন।

তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে, নিউইয়র্ক টাইমস

Comments

The Daily Star  | English

Ducsu polls: Security measures tightened at Dhaka University

Voting for the long-awaited Ducsu and hall union elections began this morning after a six-year pause

1h ago