এএফপির বিশ্লেষণ

খামেনির পতন হলে কে আসবে তার জায়গায়?

তেহরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাতে আয়োজিত বিক্ষোভে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পোস্টার প্রদর্শন। ১৩ জুন, ২০২৫। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল ও তার মিত্ররা বারবার বলছে, তারা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরান শাসনকারী ধর্মীয় নেতৃত্বকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। তবে ইরানের বিরোধী পক্ষ বিভক্ত এবং তাদের কোনো শক্ত ভিত্তি নেই। তাই যদি বর্তমান শাসন ব্যবস্থার পতন হয়, তাহলে তারপর কী হবে তা এখনো অনিশ্চিত।

এএফপির বিশ্লেষণে বলা হয়, ইরানের পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনার বাইরে ইসরায়েল সম্প্রতি তেহরানের জাতীয় টিভি সম্প্রচার কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এটি দেখে অনেকেই ধারণা করছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য কেবল পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করা নয়, বরং সরাসরি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে সরিয়ে দেওয়া।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, 'আমরা জানি খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন।'

তবে সত্যি যদি ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে শাসন করে আসা এই নেতার পতন হয়। তাহলে ইরানে কী হবে তা এখনো অনিশ্চিত।

এএফপি বলছে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর ইরাক আক্রমণ ও ২০১১ সালে ন্যাটো জোটের লিবিয়ায় হস্তক্ষেপ—এই দুটি ঘটনার পরের বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাতের ভয়াবহতা এখনো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতাদের তাড়া করে বেড়ায়।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখো সম্প্রতি কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনে বলেন, 'আজকের সবচেয়ে বড় ভুল হবে সামরিক পন্থায় ইরানে শাসন পরিবর্তন চাওয়া, কারণ তা বিশৃঙ্খলায় রূপ নেবে। আপনারা কি মনে করেন ইরাক বা লিবিয়ায় যা করা হয়েছিল, তা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল? আমি বলব না!'

বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, খামেনি ও তার ধর্মীয় সহযোগীদের হঠানো হলে যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তা পূরণ করতে পারে ইরানের বিপ্লবী গার্ড আইআরজিসি বা সেনাবাহিনী। এদের অনেকেই আরও কট্টরপন্থী।

আন্তর্জাতিক সংস্থা কারনেগি এনডাওমেন্টের গবেষক নিকোল গ্রাজেউস্কি বলেন, 'ইসরায়েলের হামলা কেবল পরমাণু বা সামরিক স্থাপনায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সরকার পতনের পরিকল্পনার অংশ বলেই মনে হচ্ছে। কারণ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মতো প্রতীকী প্রতিষ্ঠানেও হামলা হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যদি শাসনের পতন ঘটে, আশা থাকবে উদার ও গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। কিন্তু আইআরজিসি বা অন্য কট্টর বাহিনীর উঠে আসার সম্ভাবনাও প্রবল।'

'সংগঠিত বিকল্পের অভাব'

ইরানের অন্যতম আলোচিত বিরোধী নেতা হচ্ছেন রেজা পাহলভী। তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও ইরানের প্রাক্তন রাজা মোহাম্মদ রেজা পাহলভীর পুত্র।

তিনি দাবি করছেন, 'ইসলামী প্রজাতন্ত্র ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে।'

তিনি খামেনিকে 'ভীতু' অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, 'খামেনি লুকিয়ে আছেন।'

রেজা পাহলভী দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে পুনরায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলে আসছেন। কিন্তু ইরানের ভিতরে ও প্রবাসে রেজা পাহলভীর গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনীন নয়। তার জাতীয়তাবাদী অবস্থান ও ইসরায়েল ঘনিষ্ঠতা বিতর্কিত। বিশেষ করে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা না করায় সেই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে।

দেশটির আরেকটি সক্রিয় বিরোধী দল হলো পিপলস মুজাহিদিন। তাদের নেত্রী মারিয়াম রাজাভি বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বলেন, 'ইরানি জনগণ এই শাসনের পতন চায়।'

তবে এই দলটি অন্যান্য বিরোধী গোষ্ঠীর কাছে অপছন্দের, কারণ তারা ইরান-ইরাক যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস জুনো বলেন, 'যদি ইসলামিক রিপাবলিক পতন হয়, তাহলে সেখানে গণতান্ত্রিক ও সংগঠিত বিকল্প নেই বললেই চলে।'

তিনি আরও বলেন, 'রেজা পাহলভী হয়তো সবচেয়ে বেশি পরিচিত নাম, কিন্তু সমর্থকেরা দেশের ভিতরে তার গ্রহণযোগ্যতা অতিরঞ্জিত করেন। সবচেয়ে সম্ভাব্য বিকল্প হলো আইআরজিসির সামরিক অভ্যুত্থান অথবা সামরিক একনায়কত্বে পরিবর্তন।'

'অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ' ও জাতিগত ভাঙনের ভয়

বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, ইরানের ভবিষ্যতের অস্থিরতায় বড়, কিন্তু উপেক্ষিত কারণ হতে পারে দেশটির জাতিগত গঠন। সেখানে পারস্য জাতির পাশাপাশি রয়েছে—কুর্দি, আরব, বেলুচ ও তুর্কি জনগোষ্ঠী।

নিকোল গ্রাজেউস্কি বলেন, 'বিদেশি শত্রু রাষ্ট্রগুলো এসব জাতিগত বিভেদকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে।'

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সৌফান সেন্টারের বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইরানি শাসনব্যবস্থার টিকে থাকাকে এখন 'কৌশলগত ব্যর্থতা' হিসেবে দেখা হচ্ছে, তাই 'ইরাক ২.০'-এর সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। যদি এই শাসনের পতন হয়, তাহলে তারপর কী হবে তা এখন অনিশ্চিত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইরাকের চেয়েও বড় পরিসরে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে, যার প্রভাব পড়বে বিশ্বব্যাপী।'

Comments

The Daily Star  | English

SC Secretariat Ordinance: Judges may hold executive posts

Lower court judges will be able to hold executive positions in the law ministry as well as state entities even after the establishment of a Supreme Court secretariat aimed at keeping the judiciary free from the executive’s influence, says a draft ordinance.

3h ago