‘পাকিস্তানের ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছিল’, ভারতের দাবি ঘিরে সন্দেহ কেন

অমর প্রীত সিং

ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান অমর প্রীত সিং সম্প্রতি দাবি করেছেন, 'অপারেশন সিঁদুর'-এ পাকিস্তানের কমপক্ষে পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি বড় উড়োজাহাজ ভূপাতিত করা হয়। তার আরও দাবি, এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে বিমানগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল।

গত শনিবার বেঙ্গালুরুর এক অনুষ্ঠানে 'ভারতীয় বাহিনী আকাশ যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছিল' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত ৭ মে শুরু হওয়া চার দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার এতদিন পর তার এই দাবি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে ভারতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন—ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর ভোট চুরির অভিযোগ নিয়ে মোদি সরকার এখন অনেকটাই 'লেজে-গোবরে' অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের নজর ভিন্ন দিকে সরিয়ে দিতে নিয়মিত নিরাপত্তা বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দিয়ে এই বক্তব্য দেওয়ানো হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নও উঠছে।

দেশটির সামরিক বিশ্লেষকরাও এয়ার চিফ মার্শালের এমন দাবি নিয়ে তীব্র সংশয় প্রকাশ করছেন। অনেকের মতে, অভিযান শেষ হওয়ার এতদিন পর এই দাবি সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা হতে পারে।

কিন্তু, এয়ার চিফ মার্শালের সাফল্যের দাবি বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি গুরুতর অসংগতি সামনে আসে, যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

প্রমাণের অনুপস্থিতি

বিমানবাহিনী প্রধানের দাবির ব্যাপারে সংশয়ের সবচেয়ে বড় কারণ হলো, তিনি তার দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি। স্বনামধন্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক সুশান্ত সিং 'দ্য ওয়্যার'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, শত্রুপক্ষের পাঁচ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা বিশাল সামরিক সাফল্য। এর পেছনে অবশ্যই প্রমাণ থাকতে হবে। কিন্তু বিমান বাহিনী প্রধানের বক্তব্যে তা অনুপস্থিত।

তিনি আরও বলেন, 'অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানের ভূপাতিত বিমানের ধ্বংসাবশেষ, ছবি বা স্যাটেলাইট চিত্র—কিছুই সামনে আসেনি।'

এই সময়ে এসে দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধে—যেখানে গণমাধ্যম, সমাজমাধ্যম সক্রিয় ও স্মার্টফোনের ব্যবহার ব্যাপক—সেখানে যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ লুকিয়ে ফেলা প্রায় অসম্ভব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও স্যাটেলাইট ও ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স দিয়ে প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারাও পাকিস্তানের ভেতর যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। এই যুদ্ধবিমান কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র খোঁজ রাখে। এই বিমান ভূপাতিত হলে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার খবর থাকত। কিন্তু, দেশটির কর্মকর্তাদের তরফে এরকম কোনো কথা সামনে আসেনি।

তাই বিমান বাহিনী প্রধানের দাবিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে প্রমাণ হাজির করা প্রয়োজন, যা এখনো করা হয়নি।

বিলম্বিত ঘোষণা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

যুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন মাস পর বিমান বাহিনী প্রধানের এই দাবি আরেকটি বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। যদি ভারতীয় বিমানবাহিনীর কাছে অকাট্য প্রমাণ থাকত, তবে স্বাভাবিকভাবেই তা সঙ্গে সঙ্গে বা যুদ্ধের পরপরই প্রকাশ করা হতো। এতে একদিকে যেমন ভারতের বিজয়ের দাবিকে পোক্ত করা যেত; অন্যদিকে বয়ানবাজিতে হলেও পাকিস্তানকে মোকাবিলা করা সহজ হতো।

প্রশ্নের মুখে বিশ্বাসযোগ্যতা

গত ৭ মে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায় ভারত। সেই রাতে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের বিমান বাহিনী। সেদিনই পাকিস্তান সরকার ও সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করে যে তারা ভারতের রাফালসহ অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছেন। ভারতের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় ভূপাতিত বিমানের ধ্বংসাবশেষও পাওয়া যায়। সমাজমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সেই ছবি উঠে আসে। কিন্তু পাকিস্তানের ভেতরে বিমানের ধ্বংসাবশেষের ছবি পাওয়া যায়নি।

এই পরিস্থিতিতে বিমানবাহিনী প্রধানের প্রমাণ ছাড়া বক্তব্য নিজের বাহিনীর ভেতরে তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুরো বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে বিমান বাহিনীর যেকোনো বক্তব্যকেই সাধারণ মানুষ সন্দেহের চোখে দেখতে পারে।

তাই অপারেশন সিঁদুরে ভারত কতটা সফল হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s janaza held

The namaz-e-janaza of BNP Chairperson Khaleda Zia was held at the South Plaza of the Jatiya Sangsad Bhaban today

6h ago