কেন ইন্দোনেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল বিক্ষোভ

ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগইয়াকার্তা শহরে বিক্ষভকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় একটি গাড়ি। ছবি: এএফপি

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। রাজধানী জাকার্তায় পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় এক মোটরসাইকেলচালকের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সদর দপ্তরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুনে একটি ভবনে তিনজনের মৃত্যু হওয়ারও তথ্য দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো দেশবাসীকে শান্ত থাকার এবং তার নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্টের এই ভাষণের পরও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

গত অক্টোবরে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই প্রেসিডেন্ট প্রাবোও-র জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ায় এই সংঘাতকে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির ৫৮০ জন পার্লামেন্ট সদস্যের জন্য মাসিক ভাতা হিসেবে ৫০ মিলিয়ন রুপিয়াহ (প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার) পাওয়ার খবর প্রকাশিত হলে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। এই অর্থ জাকার্জায় একজন মানুষের ন্যূনতম মাসিক মজুরির চেয়ে প্রায় ১০ গুন বেশি।

২৮ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে পুলিশ ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে প্রায়ই দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া একজন আল জাজিরাকে বলেন, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত পার্লামেন্ট সদস্যদের বেতন কমানোর দাবি তুলেছেন। তার অভিযোগ, করের বোঝা ও লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল প্রাবোও পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আট শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি গড়ে ৪.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, যা প্রাবোও-র প্রতিশ্রুতির চেয়ে অনেক কম।

যেভাবে ছড়াল সহিংসতা

ইন্দোনেশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় গত সোমবার থেকে। তবে বৃহস্পতিবার পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় খাবার ডেলিভারি সার্ভিসের এক মোটরসাইকেলচালকের মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ওঠে।

২১ বছর বয়সী ওই মোটরসাইকেলচালক দাঙ্গা পুলিশের সাঁজোয়া যানের ধাক্কায় নিহত হন। এই ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা জাকার্তায় পুলিশের মোবাইল ব্রিগেডের সদর দপ্তর অভিমুখে মিছিল করে এবং সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। রাতে জাকার্তার পুলিশের একটি কম্পাউন্ডের কাছে পাঁচতলা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

সহিংসতা শুধু জাকার্তাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়াতে বিক্ষোভকারীরা গভর্নরের অফিস চত্বরে ঢুকে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া মাকাসার, সোলো, যোগ জাকার্তা, মেদানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ শনিবার দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, জাকার্তা থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার পূর্বে মাকাসার শহরে একটি আঞ্চলিক আইনসভা ভবনে বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ভবন থেকে লাফিয়ে পড়তে গিয়ে আহত হয়েছেন আরও দুজন।

এদিকে, চলমান অস্থিরতার জেরে ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থানরত সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে জাকার্তায় অবস্থিত সিঙ্গাপুরের দূতাবাস।

প্রেসিডেন্ট প্রাবোও মোটরসাইকেলচালকের মৃত্যুর ঘটনায় 'পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের' প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলেন, পুলিশের বাড়াবাড়িতে আমি মর্মাহত ও হতাশ। এই পরিস্থিতিতেই সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের বৈঠকে যোগ দিতে চীনের তিয়ানজিনে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও-র।

Comments

The Daily Star  | English

16 killed as police open fire on Gen Z protest in Nepal

Police used live ammunition, tear gas, and water cannons against protesters demonstrating against social media restrictions and corruption

3h ago